• সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৫৩ অপরাহ্ন

দাম না পেয়ে জয়পুরহাটে আলু এখন গরুর খাবার

প্রভাত রিপোর্ট / ১৪ বার
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

প্রভাত সংবাদদাতা, জয়পুরহাট: পুরো দেশে আলু উৎপাদনে অনেক এগিয়ে জয়পুরহাট। কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এই জেলায় অনেক বেশি আলু চাষ করা হয়। এ অঞ্চলের জমি ও আবহাওয়াও আলু চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। তবে খরচের তুলনায় বাজারদর কম থাকায় আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এ অবস্থায় পশুর বিকল্প খাদ্য তালিকায় যুক্ত হয়েছে আলু। তবে সেখানেও রয়েছে বিপত্তি। বেশি আলু খাওয়ালে গরুর পেটফাঁপাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪০ হাজার হেক্টর জমি। আর আলু চাষ হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। এরমধ্যে কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৯০৫ হেক্টর, ক্ষেতলালে ৯ হাজার ২২০ হেক্টর, পাঁচবিবিতে ৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, সদর উপজেলায় ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর ও আক্কেলপুরে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এবার আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ৫৬ হাজার মেট্রিক টন।
জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৯টি হিমাগার রয়েছে। এর সবগুলোতেই আলু সংরক্ষণ করা হয়। তবে জেলায় যেখানে আলুর উৎপাদন ৯ লাখ মেট্রিক টন ছাড়িয়েছে সেখানে এসব হিমাগারে সব মিলিয়ে মাত্র এক লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যাবে। এরমধ্যে খাবার আলু এক লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন ও বীজ আলু ৬২ হাজার মেট্রিক টন। তবে জেলায় প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন বীজ আলুর প্রয়োজন হয়। আর জেলায় খাবার আলুর প্রয়োজন হয় প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন। এই উদ্বৃত্ত আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না চাষিরা।
ক্ষেতলাল উপজেলার পাঠানপাড়া গ্রামের রাসেল হোসেন জানান, ৬ বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন। সময়মতো বুকিং দিতে না পারায় হিমাগারে বেশি আলু রাখতে পারেননি। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু ৮ টাকা থেকে ৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ১৫ টাকার ওপরে। তাই আলু সেদ্ধ করে গরুকে খাওয়াচ্ছেন। অন্য খাবার কম দিয়ে গরুকে বেশি বেশি আলু খাওয়াচ্ছেন তিনি।
কালাই উপজেলার বড়াইল গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার। তার পাঁচটি গরুর নিত্যদিনের খাবারে পরিণত হয়েছে সেদ্ধ আলু। তবে মাঝে মাঝে সময় না পেলে কাঁচা আলুই গরুকে খেতে দেন তিনি। রোজিনা আক্তারের স্বামী মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ৪ বিঘা (৩৩ শতকে ১ বিঘা) জমিতে স্টিক জাতের আলু আবাদ করেছি। খরচ হয়েছে ৭৫ হাজার টাকা। বাজারে আলুর দাম কম হওয়ায় গরুর বিকল্প খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছি।’
শুধু কালাই-ক্ষেতলালেই নয়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে আলু। তবে আলুকে গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন পশু চিকিৎসকরা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আলু শর্করা জাতীয় খাবার। বেশি পরিমাণে খাওয়ালে গরুর পেটফাঁপা অসুখ দেখা দিতে পারে। কাঁচা আলু বেশি খাওয়ালে গরুর অন্যান্য অসুখও হতে পারে। আলুতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কাঁচা আলু গরুকে খাওয়ানো হলে বিষক্রিয়া হয়ে হতে পারে।’
এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ রাহেলা পারভীন বলেন, ‘গত বছর কৃষক আলুর ভালো দাম পেয়েছে। এজন্য এবার বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এছাড়া বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে।’


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও