প্রভাত অর্থনীতি: দেশের ৬৪টি জেলাকে যুক্ত করতে সারাদেশে উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে সরকার। উন্নত, নিরাপদ ও দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জমি বা ভূমির ব্যবহার কমানোই এ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, এটি বাস্তবায়নে ‘কানেক্টিং ৬৪ ডিস্ট্রিকস থ্রু এলিভেটেড হাইওয়ে নেটওয়ার্ক’ শীর্ষক প্রকল্পটি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তারা জানান, প্রকল্পের নকশা, সম্ভাব্য ব্যয় এবং বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণে একটি পরামর্শক কমিটি ইতোমধ্যেই গঠন করা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে ১৩–সদস্যের এই পরামর্শক কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মঈনুদ্দিন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, এটি এখনো প্রস্তাবনার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আমরা শিগগিরই বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ করে সবচেয়ে উপযোগী কৌশল নির্ধারণ করবো। তিনি আরও বলেন, যেখানে উড়াল সড়ক সম্ভব, সেখানে তা হবে। আর যেখানে তা সম্ভব নয়, সেখানে কম জমি ব্যবহার করে কীভাবে উন্নত সড়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা যায়, সেটি বিবেচনায় রাখা হবে।
এ বিষয়ে সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান গণমাধ্যমকে বলেন, জমির ব্যবহার কমাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমান অবকাঠামো ব্যবহার করেই নতুন সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। যেখানে যেখানে উড়াল সড়ক প্রয়োজন, সেখানে তা করা হবে। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মূল সড়কের বাইরেও শ’ শ’ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। যমুনা সেতু প্রকল্পেও প্রায় ১,৬০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরও অনেক প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের নজির রয়েছে। ফাওজুল কবির খান বলেন, দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে। সেই বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য, আবাসনসহ মৌলিক চাহিদা পূরণে জমির প্রয়োজন। সেটি বিবেচনায় রেখে এই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “বর্তমান সরকার যতটুকু সম্ভব কাজ এগিয়ে নেবে। পাশাপাশি একটি মডিউলার পরিকল্পনা তৈরি করা হবে, যাতে ভবিষ্যতের সরকারও এটি অনুসরণ করে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে পারে।”
সারা দেশের ৬৪টি জেলাকে একটি সমন্বিত সড়ক নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে মাল্টি-টিয়ার উড়াল সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এতে করে জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে নিরাপদ ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, বিদ্যমান সড়ক অ্যালাইনমেন্টের ওপরই উড়াল সড়ক নির্মাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রকল্পের নকশায় মাল্টিমোডাল পরিবহন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। সড়কের গুরুত্ব, চলমান যানবাহনের পরিমাণ এবং অ্যানুয়াল অ্যাভারেজ ডেইলি ট্রাফিক (এএডিটি) বিবেচনায় উড়াল সড়ক স্থাপন করা হবে। একক প্রকল্পে বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে জোনভিত্তিক গুচ্ছ প্রকল্পের মাধ্যমে এটি এগিয়ে নেওয়া হবে।
সড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের অনেক জেলায় শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে, আবার অনেক জেলায় কৃষিপণ্য উৎপাদন হয়। কোথাও পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য বাজার বা বন্দরে দ্রুত পৌঁছাতে পারে না। যেসব জেলায় এই সমস্যা রয়েছে, সেখানে উড়াল সড়ক তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক হলেও নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, কাঁচপুর ও কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় নিয়মিত যানজট হয়। সেখানে উড়াল সড়ক করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, যশোরে রয়েছে বিমানবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, শিক্ষা বোর্ড। খুলনা বিভাগের সাথে সংযোগের কেন্দ্রবিন্দু এই জেলা। যশোরের আশপাশে সাতক্ষীরায় রয়েছে আরও একটি স্থলবন্দর, আর বাগেরহাটে মোংলা সমুদ্রবন্দর। এসব জেলায় উৎপাদিত বা আমদানিকৃত পণ্য দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে যেখানে দরকার, সেখানে উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে মোট মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ২২,৭১৯ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৪,২৯৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ৫,০৩৯ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৩,৩৮৬ কিলোমিটার জেলা মহাসড়ক রয়েছে। মহাসড়কের সংখ্যা এক হাজার।
ওই কর্মকর্তা বলেন, “বিভিন্ন মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট হয়। সেসব স্থানে এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় দ্রুত সংযোগ নিশ্চিত করতেই উড়াল সড়ক বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। কোথায় কী পরিমাণ উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে, তা সুপারিশ আকারে প্রতিবেদন দেবে কমিটি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, বড় শহর ও বন্দরগুলোর সঙ্গে নির্বিঘ্ন যোগাযোগ এবং যানজটমুক্ত চলাচল নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।