• শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ০১:০১ অপরাহ্ন

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী লি জে-মিয়ং

প্রভাত রিপোর্ট / ৬ বার
আপডেট : বুধবার, ৪ জুন, ২০২৫

প্রভাত ডেস্ক: কিশোর বয়সে তিনি ছিলেন একজন শ্রমিক। সেখান থেকে এখন পৌঁছেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতার আসনে। বলছিলাম দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট লি জ্যা মিয়ংয়ের কথা। গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা কিন্তু কট্টর রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছিলেন। ইনচনের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লি জুন-হান বিবিসিকে বলেন, লি জ্যা মিয়ংয়ের জীবনে ছিল উত্থান পতনের নানা গল্প। তার অনেক পদক্ষেপই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তিনি জানান, লি প্রায়ই প্রগতিশীল সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিতেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের নির্বাচনে সার্বজনীন মৌলিক আয়ের প্রতিশ্রুতি সেই সময়ের দ. কোরিয়ার ক্ষমতা কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। এ কারণে কেউ কেউ তাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, আবার অনেকে তাকে অবিশ্বাস বা অপছন্দও করে। তিনি একজন অত্যন্ত বিতর্কিত এবং লোকজন তাকে খুব একটা চিনতোও না। একজন বহিরাগত হয়েও নিজের নামটা এমনভাবে তৈরি করেছেন যা ঐতিহ্যবাহী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রীতিনীতির সাথে খাপ খায় না। তবে এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কিছুটা মধ্যম পন্থা অবলম্বন করেছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বড় ব্যবসা ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেছিলেন। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনাকেও সামনে এনেছিলেন।
সাম্প্রতিক এক স্মৃতিকথায়, লি তার করুণ শৈশবের কথাও তুলে ধরেন। ১৯৬৩ সালে গিয়ংবুক প্রদেশের আন্দংয়ের একটি পাহাড়ি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই ও দুই বোনের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন লি। পরিবারের কঠিন পরিস্থিতির কারণে অবৈধ হলেও কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছেড়েছিলেন। তখন কিশোর বয়সে একটি কারখানায় কাজ করার সময় একটি মেশিনে হাত চেপে গুরুতর আঘাত পান এবং তার হাতের কব্জি ভেঙে যায়। পরে লি আবেদন করেন এবং স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় বসার অনুমতি পান। ১৯৭৮ ও ১৯৮০ সালে যথাক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরবর্তীতে আইন বিষয়ে পড়ে ১৯৮৬ সালে বার পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হন। ১৯৯২ সালে তিনি কিম হে-কিয়ংকে বিয়ে করেন, তাদের দুটি সন্তানও রয়েছে।
প্রায় দুই দশক মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কাজ করার পর ২০০৫ সালে তিনি রাজনীতিতে আসেন এবং মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবেও কাজ করেন। পরে তিনি সামাজিক-উদারপন্থি উরি পার্টিতে যোগ দেন। যা ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির পূর্বসূরি এবং সে সময়কার ক্ষমতাসীন দল।
তার দারিদ্র্যপীড়িত অতীত জীবনের কারণে তাকে অনেক কটাক্ষ শুনতে হলেও তিনি পিছপা হননি। বরং সাধারণ ও বঞ্চিত মানুষদের কাছে তিনি ছিলেন বেশ জনপ্রিয়। ২০১০ সালে তিনি সিওংনামের মেয়র নির্বাচিত হন এবং বিনামূল্যে কল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করেন। ২০১৮ সালে বৃহত্তর গিয়ংগি প্রদেশের গভর্নর হন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় তিনি সর্বজনীন সহায়তা প্রদানের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে বেশ আলোচিত হন। ওই সময়েই তিনি ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। যদিও ০.৭৬ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এক বছরেরও কম সময় পরে ২০২২ সালের আগস্টে তিনি দলের নেতা নির্বাচিত হন। অধ্যাপক ড. লি জুন-হান বলেন, তখন থেকেই আগের চেয়ে আরও সতর্ক অবস্থান নেন লি। আগের মতো কট্টর নয়, বরং কিছুটা নিরাপদ কৌশলও অবলম্বন করেন। তাকে নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া অনেক বিতর্কও ছিল। ২০০৪ সালের মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, আত্মীয়দের সঙ্গে বিরোধ, ২০১৮ সালে পরকীয়ার অভিযোগ ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার মতো তুলনামূলক রক্ষণশীল দেশে এ ধরনের বিতর্ক যে কারও জন্য বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও