প্রভাত রিপোর্ট: আকারে ছোট ও মাঝারি গরু বিক্রির পাশাপাশি এবার খাসির বিক্রিও ভালো বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পাবনার আমিনপুর থেকে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের ১৮০টি খাসি এনেছিলেন রবিন বিশ্বাস। আজকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের ১০০টির বেশি খাসি বিক্রি হয়েছে বলে জানালেন। এর মধ্যে বড় আকারের খাসি এনেছিলেন ১৭টি, বিক্রি করেছেন ৯টি। মাঝারি আকারের খাসি ২৫-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন বলেও জানালেন তিনি।
হাটের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতারা ঘুরে ঘুরে কোরবানির পশু দেখছেন, পছন্দ করছেন। কোনো গরু কিংবা খাসি পছন্দ হলে বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চাইছেন, দামাদামি করছেন। বনিবনা হলে কিনে নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার দাম শুনেই এগিয়ে যাচ্ছেন পরের গরু দেখতে।
এদিকে হাটের হাসিল আদায়ের অস্থায়ী ঘরগুলোর সামনেও ক্রেতা–বিক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়। গরু কেনার পর ক্রেতারা ব্যবসায়ীকে সঙ্গে নিয়ে হাসিল পরিশোধের জন্য রীতিমতো সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। হাসিল আদায়কারীদেরও ছিল ব্যস্ততা। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ছুটি শুরু হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। ধারণামতোই আজ রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ক্রেতার ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। বেড়েছে বেচাকেনাও। হাট ইজারা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবার হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গাবতলী পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, দলে দলে ক্রেতারা হাটে আসছেন। কারও কারও সঙ্গে পরিবারের নারী ও শিশু সদস্যরাও রয়েছেন। হাটের সামনের রাস্তায় ক্রেতাদের ভিড়ে যানজটও দেখা গেছে।
গাবতলী হাটের এক নম্বর হাসিল ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিল পরিশোধের অপেক্ষায় ছিলেন মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সকালে বছিলা হাটে গিয়েছিলাম। বেশ কয়েকটি গরু পছন্দও হয়েছিল। কিন্তু দাম বেশি মনে হলো। পরে গাবতলী হাটে এসে দেখি হাটে পর্যাপ্ত গরু রয়েছে। এখানে আসার পর পছন্দের গরু কিনতে খুব বেশি সময় লাগেনি।’ তিনি বলেন, ‘এক–দুইটা গরু দেখেছি, দরদাম করে যাচাই করেছি। এরপরই এই গরুটি (নিজের কেনা গরু দেখিয়ে) ২ লাখ ৫ হাজার টাকায় কিনেছি। এমন গরু বছিলা হাটে আড়াই লাখ চাইছে।’
গাবতলী হাটে গরু নিয়ে আসা কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাটে যে সংখ্যায় গরু রয়েছে, সে তুলনায় ক্রেতা এখনো অনেক কম। শেষ পর্যন্ত ক্রেতা না পাওয়া গেলে হাটে আনা অনেক গরু আবার এলাকায় ফিরিয়ে নিতে হবে। এ কারণে তাঁরা (ব্যবসায়ী) সীমিত লাভে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে খরচের টাকা উঠলেই গরু ছেড়ে দিচ্ছেন।
পর্যাপ্ত গরুর বিপরীতে ক্রেতা তুলনামূলক কম হওয়ার এ চিত্র দেখা গেল মূল গাবতলী হাটের অংশে গিয়ে। যে অংশে মূলত সারা বছর গরু বেচাকেনা হয়। আর কোরবানির সময় হাটের আশপাশে যেসব জায়গায় সারা বছর ইট-বালু বিক্রি হয়, এসব জায়গাতেও হাট বসানো হয়ে থাকে। মূল হাটের অংশে তুলনামূলক কম ক্রেতা দেখা গেছে। জল-কাদা মাড়িয়ে ওই অংশে ক্রেতারা যাচ্ছিলেনও কম। আর যাঁরা যাচ্ছিলেন, তাঁদের ডেকে ডেকে গরু-খাসি দেখিয়ে দাম বলে বিক্রেতারা আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন।
হাটের মূল অংশে ৪৫টি গরু নিয়ে এসেছিলেন নাটোরের ব্যবসায়ী সালাম মিয়া। আজ বিকেল পর্যন্ত ৯টি বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আজ সারা দিনে ৭টি আর রাতে ২টি। এসব গরু ৯০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। বাকি গরুগুলোর দামও এক থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যেই চাইছেন।
সালাম মিয়া বলেন, হাটের এই অংশর পর্যন্ত অনেক ক্রেতাই আসছেন না। হাটের সামনের অংশে যেসব গরু রাখা হয়েছে, সেখান থেকেই অনেকে পছন্দের গরু কিনে ফিরে যাচ্ছেন।
আজ বিকেলে অনেক পাইকারকে হাটের নির্ধারিত ছাউনি থেকে বেরিয়ে গরু নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দেখা গেছে। হাটে ক্রেতাদের নতুন দল এলেই এসব বিক্রেতা বলছিলেন, ‘স্যার, একটা গরু লইয়া যান।’ ক্রেতা থামলেই বলছিলেন, ‘স্যার, একদম দেশি ষাঁড়, ভালো গরু।’
বিকেল চারটার দিকে এ হাটে আগ্রহী ক্রেতার চাপ আরও বাড়তে দেখা গেছে। গাবতলী বাস টার্মিনালকেন্দ্রিক ঈদে ঘরমুখী মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে ঢাকা-আরিচা সড়কের মিরপুরের টেকনিক্যাল মোড় থেকেই প্রচণ্ড যানজট ছিল। একই পরিস্থিতি ছিল গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কেও। যানজটের কারণে অনেক ক্রেতাকে হাটের এক-দেড় কিলোমিটার আগে থেকেই হেঁটে আসতে দেখা গেছে।
গাবতলী হাটের ইজারাদার এস এ সিদ্দিক সাজু বিকেল ৫টার দিকে বিকেলে বলেন, হাটে গরুর সরবরাহ প্রচুর। গতকাল রাত থেকে গরুর বিক্রিও বেড়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকে আজ ভোর পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি গরু বিক্রি হয়েছে। হাটে এখন ৪০ হাজারের বেশি গরু রয়েছে। এর বাইরেও পাইকারেরা আরও গরু আনছেন। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় দাম সহনীয় রয়েছে।
এদিকে উত্তরা দিয়াবাড়ি হাট ও ভাটারা সুতিভোলা খালের পাশে খালি জায়গার হাটেও সহনীয় দামে পছন্দের কোরবানির পশু কিনতে পারার কথা জানিয়েছেন ক্রেতারা। ওই হাট থেকে আজ দুটি মাঝারি আকারের গরু কেনেন নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, গরু দুটি ১ লাখ ৮৮ হাজার টাকায় কিনেছেন। বিক্রেতা প্রথমে আড়াই লাখ টাকা দাম চেয়েছিলেন। প্রথমে দেড় লাখ টাকা বলেছিলেন। এ দামে বিক্রেতা রাজি ছিলেন না। দাম নিয়ে সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি।