আব্দুল্লাহ বিন সালেহ: ঈদুল আযহা ২০২৫ উপলক্ষে ঢাকার তেজগাঁওয়ের বিজি প্রেস স্টাফ কোয়ার্টারে কোরবানির প্রস্তুতি চলেছিল সীমিত পরিসরে, তবে পুরোদস্তুর পরিপাটি ছিল পুরো আয়োজন। আমাদের পরিবার ঈদের মাত্র দুই দিন আগে, ৫ জুন বিকেলে ১২,৫০০ টাকায় একটি মাঝারি আকারের ছাগল কিনে আনে। ছাগলটি বাসায় আসতেই যেন “সদস্য নম্বর প্লাস ওয়ান” হয়ে গেল! শুরুতেই ওকে সবাই মিলে নামও দিতে চেয়েছিল — কেউ বলল “মেজো”, কেউ বলল “কালু ভাই”!
প্রথম দিন ছাগলটি শান্ত-শান্ত থাকলেও রাত গড়াতেই তার মধ্যে একেবারে বাউন্ডুলে আত্মা ভর করল। হঠাৎ হঠাৎ দড়ি ছিঁড়ে ছুটে বেড়ায় ঘরের এক কোণা থেকে আরেক কোণায়। ঘরের লোকজন কেউ ঘুমাতে পারছে না, কেউ আবার ওর কাণ্ডকারখানা দেখে হেসে কুটি কুটি।
সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটে ঈদের আগের সকালে — ঘুম ভেঙে দেখি, সাহেব ছাগল মহাশয় আমাদের বিছানার মাঝখানে বসে! দেখে মনে হচ্ছিল, উনি আমাদের পরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য! কেউ রাগ করল না, বরং সবাই মিলে ছবি তুললাম। কিন্তু ভিতরে ভিতরে বুঝে গেছি, বিদায়ের সময়টা কাছেই।
৭ জুন ঈদের দিন সকালে, ঠিক ৮টায় কোরবানি করা হয় ছাগলটিকে। যেটা হয়তো পশু ছিল, কিন্তু আমাদের আবেগে সে হয়ে উঠেছিল এক প্রিয় সঙ্গী। জবাইয়ের আগে তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় জানিয়েছিলাম, কারও কারও চোখে জলও এসেছিল।
এরপর মাংস তিনভাগ করে বিতরণ করা হয় — আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে। কোরবানির পরপরই বর্জ্য নির্ধারিত স্থানে ফেলা হয়, এবং সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা বিকেলেই এলাকা পরিষ্কার করে ফেলেন। এমন পরিষ্কার ও গন্ধমুক্ত পরিবেশে কোরবানি ঈদের দিন অতিবাহিত করাটা সত্যিই স্বস্তিদায়ক ছিল।
সন্ধ্যায় শিশুরা দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলা আর হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত। বড়রাও একসাথে বসে ঈদের খাবার ভাগাভাগি করে খেয়েছেন। ধর্মীয় ত্যাগের শিক্ষা যেমন ছিল, তেমনি পরিবার, প্রতিবেশী ও পশুর প্রতি মমতার একটা বাস্তব উদাহরণ হয়ে থাকল এবারের কোরবানি।