প্রভাত ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরল সামরিক কুচকাওয়াজের প্রতিবাদে ‘নো কিংস’ নামের সংগঠনের ডাকে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শনিবার (১৪ জুন) সন্ধ্যায় ট্রাম্পের জন্মদিন এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ সামরিক প্যারেড অনুষ্ঠিত হয় ওয়াশিংটন ডিসিতে।
কুচকাওয়াজে হাজারো সেনাসদস্য, ট্যাংক, সাঁজোয়া যান ও ব্যান্ড দলের অংশগ্রহণ ছিল। ট্রাম্প দাঁড়িয়ে থেকে স্যালুট নেন এবং বলেন, ‘আমাদের সৈনিকরা কখনও হার মানে না, আত্মসমর্পণ করে না, তারা লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনে। তবে এই আয়োজনকে দামি ইগো প্রজেক্ট বলে আখ্যা দিয়েছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। মার্কিন সেনাবাহিনীর হিসাবে, প্যারেডে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার। নো কিংস আন্দোলনের আয়োজকরা বলছেন, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েও কার্যত রাজা হিসেবে আচরণ করছেন। এ কারণে দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় কয়েক লাখ মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।
নিউ ইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, হিউস্টন ও লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বড় শহরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসনবিরোধী অভিযান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ ছিল সবচেয়ে উত্তপ্ত। পরিস্থিতি সামাল দিতে আগেই জাতীয় রক্ষীবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল, যদিও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর এর বিরোধিতা করেছিলেন।
ফিলাডেলফিয়ার লাভ পার্কে সমাবেশে ৬১ বছর বয়সী নার্স কারেন ভ্যান ত্রিয়েস্তে বলেন, আমাদের গণতন্ত্র বাঁচাতে হবে। ট্রাম্প প্রশাসনের জনস্বাস্থ্য খাতে ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধেও আমরা লড়ছি। লস অ্যাঞ্জেলেসে ফেডারেল বিল্ডিংয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে রক্ষীবাহিনীর সংঘর্ষ হয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে ছোড়া হয় কাঁদানে গ্যাস।
ব্রাউন বেরেটস নামের এক মানবাধিকার সংগঠনের হোসে অ্যাজেতক্লা বলেন, এটা শুধু কঠোর নয়, নিষ্ঠুরও। পরিবারগুলোকে এভাবে আলাদা করা যায় না। তবে সিবিএস/ইউগভ পরিচালিত এক জরিপ বলছে, ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী বহিষ্কার নীতিকে ৫৪ শতাংশ মার্কিন নাগরিক সমর্থন করছেন, বিরোধিতা করছেন ৪৬ শতাংশ। মিনেসোটায় এক নারী রাজনীতিক ও তার স্বামী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্তের গাড়ি থেকে নো কিংস-এর ফ্লায়ার উদ্ধারের পর ওই রাজ্যে আন্দোলনের কিছু কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। গভর্নর বিক্ষোভ স্থগিতের আহ্বান জানালেও হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অভিবাসন ও ক্ষমতার সীমা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এখন বিভাজন চূড়ান্ত পর্যায়ে। একদিকে সামরিক শক্তি প্রদর্শন, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ দমন—এই সাংঘর্ষিক বার্তাই ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।