• শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ৩৫ শতাংশ, কমছে পোশাক রপ্তানি

প্রভাত রিপোর্ট / ২ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: ৭ জুলাই বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করে মার্কিন প্রশাসন। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা শেষ হতে চলায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই ঘোষণা দেন। এর আগে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর শুল্ক হবে ৩৫ শতাংশ। তাতে গড় শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। এই শুল্ক কমানো নিয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রে বৈঠক করছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।যুক্তরাষ্ট্র যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর গত ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ৫৭টি দেশের ওপর বিভিন্ন হারে বাড়তি পাল্টা শুল্ক বসানো হয়। তখন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক ছিল ৩৭ শতাংশ। গত ৯ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট। যদিও সব দেশের ওপর ন্যূনতম ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে গত এপ্রিলে প্রাথমিকভাবে ১০ শতাংশ ন্যূনতম পাল্টা শুল্ক কার্যকর করে দেশটির প্রশাসন। তার পরের মাসেই চীন ও বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। তবে প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে। সুবিধাজনক অবস্থায় আছে ভারত। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কমিশনের (ইউএসআইটিসি) ও ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের আওতাধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (অটেক্সা) পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত বছর ভোটের আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। সে কারণে নির্বাচনে ট্রাম্প জেতার পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের অনেকে বাড়তি ক্রয়াদেশ দেওয়া শুরু করে বাংলাদেশে। ফলে গত বছরের নভেম্বর থেকে বাজারটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়তে থাকে বাংলাদেশের। গত বছর সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি ও মার্চে রপ্তানি হয় যথাক্রমে ৭০ ও ৭২ কোটি ডলার। গত এপ্রিলে ন্যূনতম পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ায় মাসেও রপ্তানি হয় ৭৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। কিন্তু মে মাসে সেই রপ্তানি ৫৫ কোটি ডলারে নেমে আসে। তার মানে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে রপ্তানি কমেছে ২১ কোটি ডলারের।
মে মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলেও সামগ্রিক পরিস্থিতি এখনো ইতিবাচক আছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) রপ্তানি হয় ৩৪৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।
প্রথমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার সময় ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়। পরের বছর থেকে চীন থেকে তৈরি পোশাকের ক্রয়াদেশ সরতে থাকে। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এলে সেটি আরও ত্বরান্বিত হয়। এপ্রিলে কয়েক দফায় চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত এপ্রিলে চীন ৭৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। পরের মাসেই সেটি কমে ৫৬ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। এই রপ্তানি গত বছরের মে মাসের তুলনায় ৫২ শতাংশ কম। গত বছরের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে ১১৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেন চীনের রপ্তানিকারকেরা।
পাল্টা শুল্কের এই অস্থির সময়েও ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে। গত এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ২ কোটি ডলারের রপ্তানি বেড়েছে ভিয়েতনামের। মে মাসে দেশটি রপ্তানি করেছে ১২৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের মে মাসের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। শুধু মে নয়, গত জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসেই ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি করছে ভিয়েতনাম। সে জন্য এপ্রিল শেষে চীনকে ছাড়িয়ে বাজারটিতে শীর্ষস্থানটি দখলে নিয়েছে।
এদিকে পাল্টা শুল্কের মধ্যেও ভারত তাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি ধরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। গত এপ্রিলে তাদের রপ্তানি ছিল ৪৯ কোটি ডলার। মে মাসে সেটি মাত্র ৩ কোটি ডলার কমে ৪৬ কোটিতে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার তৈরি পোশাক রপ্তানি এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে ৮ কোটি ডলার কমে ২৯ কোটি ডলারে দাঁড়ায়।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে জাহাজ যেতে ৪-৬ সপ্তাহ সময় লাগে। এপ্রিলে ঈদের ছুটির কারণে রপ্তানি কিছুটা কম হয়েছে। আবার ১০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর বেশ কিছু ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়েছে। সে জন্য রপ্তানি কমেছে। জুন-জুলাইয়ের রপ্তানির হিসাব পেলে প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে। তিনি আরও বলেন, পাল্টা শুল্কের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় বিদেশি ক্রেতারা নতুন ক্রয়াদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতিতে এগোচ্ছেন। শুল্কহার শেষ পর্যন্ত কী হয়, সেটির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও