ফারুক আহমেদ,ময়মনসিংহ : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আমরা জুলাই পদযাত্রায় নেমেছি। কিন্তু আকাঙ্খিত বাংলাদেশ এখনো পাইনি। আমি বিশ্বাস করি, ময়মনসিংহবাসী আমাদের পাশে থাকে, তাহলে আমরা সেই দেশ অচিরেই নির্মাণ করতে পারবো। তিনি বলেন, দেশে সংস্কার প্রক্রিয়া চলছে। ঐক্যমত্য কমিশন বলেছে, জুলাই সণদ হবে। আমরাও বলেছি জুলাই সণদ হতেই হবে এবং সেটা ৫ আগষ্টের মধ্যে। তিনি বলেন, জুলাই সণদের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ চাই। আমরা বলেছি, নির্বাচন কমিশনসহ দুদক ও পিএসসি তার নিরপেক্ষ নিয়োগের জন্য সাংবাধিনিক কমিটি তৈরী করতে হবে। তিনি বলেন, নিরপেক্ষ প্রশাসন, নিরপেক্ষ পুলিশ ও নিরপেক্ষ আদালত আমরা প্রত্যাশা করি। এই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারগুলো আমাদের প্রয়োজন। ইনশাল্লাহ ৫ আগষ্টের মধ্যে জুলাই সণদ ও জুলাই ঘোষনাপত্র আদায় করতে পারবো। তিনি বলেন, আগামী ৩ আগষ্ট ঢাকায় এনসিপির মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার বিকেলে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল চত্বরে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি এনসিপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়ান, জনগণের সমস্য সমাধান করুন, আপনারা দূর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলুন।
এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কথা বলি। আমরা চাই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। কিন্তু আপনারা চান চাঁদাবাজি। এই জিনিসগুলো আমরা বরদাস্ত করবো না। আমাদের লক্ষ লক্ষ কমিটির দরকার নাই, লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর দরকার নাই। এই চাঁদাবাজির অভয়াশ্রম এনসিপিতে হবে না।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী অভিযোগ করে বলেন, ময়মনসিংহের প্রশাসন জুলাই শহীদ ও আহতদের পরিবারের খোঁজখবর নিচ্ছেন না, তাদের কথা শুনছেন না। তিনি হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে কোনো শহীদ বা আহতদের পরিবারের সদস্যরা আপনাদের চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, তাহলে ছাত্র-জনতা তাদের চেয়ার নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, জুলাই শহীদদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আমরা যখন একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা করতে যাচ্ছি, সেই আহতদের স্বপ্ন, শহীদদের স¦প্ন আমরা রচসা করতে যাচ্ছি, সেখানে দেখতে পাচ্ছি একটি দল ওয়াক আউট করার চেষ্ঠা চালাচ্ছে। আপনারা শহীদদের রক্তের সাথে ওয়াক আউট করতে পারে না। তিনি বলেন, আমাদের সামনে পুরো বাংলাদেশের একটিই লক্ষ্য, সেটি হলো, বাংলাদেশের সংস্কার। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে দরকার, বিচার আর সংস্কার।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, দেশ যেন একটা পরিবারের কাছে কুখ্যিগত না থাকে, সেজন্য সংস্কার প্রয়োজন, নতুন সংবিধান প্রয়োজন। সামান্তা শারমিন বলেন, আমরা বাংলাদেশকে নতুন করে সাজাতে চেয়েছিলাম। জুলাই পদযাত্রার প্রথম ১৫ দিন দ্বিধাদ্বন্দ ও ঝামেলা ছাড়াই পদযাত্রা করেছি। কিন্তু এখন এনসিপি বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষনাপত্র ও সণদের আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে। এনিয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না।
এতে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আক্তার হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, সামান্তা শারমীন, শহীদ সাগরের পিতা আসাদুজ্জামান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিল, যুগ্ম সদস্য সচিব ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জাবেদ রাসিন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল বাসারসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখবেন।
এর আগে বিকেল তিনটার দিকে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ জামালপুর থেকে ময়মনসিংহে আসেন। পরে স্থানীয় একটি হোটেলে ময়মনসিংহে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত শহীদ পরিবারের সাথে মতবিনিময় করেন। এসময় তাদের খোঁজ খবর নেন। সেখান থেকে নেতৃবৃন্দ নগরীর ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড মহিলা কলেজের সামনে শহীদ সাগর চত্বরে শ্রদ্ধা জানানো হবে। পরে সেখান থেকে একটি পদযাত্রা বের হয়ে সি. কে. ঘোষ রোড, রামবাবু রোড, নতুন বাজার ও জিলা স্কুল মোড় হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গনে সমাবেশে যোগ দেন।