হাবিবুর রহমান,ডেমরা : রাজধানীর ডেমরায় পাঁচ দিনব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটল আজ বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার বিকেলে ডেমরা ঘাটসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা ও বালু নদে পর্যায়ক্রমে কোনাপাড়া, সারুলিয়া গরুর হাট, সারুলিয়া বাজার, বক্সনগর ঋষিপাড়া, ডগাইর, বামৈল, কায়েতপাড়া ও তাম্বুরাবাদ পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। নদীর ঘাটে হাজারো ভক্তের ভিড়, ঢাকের তালে মুখরিত পরিবেশ আর শঙ্খধ্বনি ও উলুধ্বনিতে কেঁপে ওঠে চারপাশ।
ভোর থেকেই প্রতিটি মণ্ডপে ছিল পূজার আনুষ্ঠানিকতা। আরতি, পুষ্পাঞ্জলি ও সিঁদুর খেলায় ভক্তরা অংশ নেন আবেগঘন পরিবেশে। দুপুরের পর থেকেই শুরু হয় বিসর্জনের প্রস্তুতি। সাজানো গাড়িতে প্রতিমা ওঠানো হয়, বিকেলের পর বের হয় শোভাযাত্রা। হাতে ফুল ও প্রদীপ নিয়ে ভক্তরা দেবীকে বিদায় জানান। নারীরা উলুধ্বনি দেন, ঢাকিদের বাজনায় মুখরিত হয় পরিবেশ, শিশুরা ছুটোছুটি করে আনন্দ ভাগ করে নেয়।
বিসর্জনের মুহূর্তে নদীর তীরে তৈরি হয় গভীর আবহ। প্রতিমা যখন ধীরে ধীরে ভাসানো হয় শীতলক্ষ্যা ও বালু নদের পানিতে, ভক্তদের চোখে ভেসে ওঠে বিদায়ের অশ্রু। কেউ হাত জোড় করে প্রার্থনা করেন আগামী বছরে দেবীর পুনরাগমনের জন্য, কারও ঠোঁটে ঝরে পড়ে নীরব মঙ্গলকামনা। সবাই মিলিত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন—মা, আবার এসো আগামী বছর।
বিজয়া দশমী দেবী দুর্গার কৈলাসে স্বামীগৃহে ফিরে যাওয়ার দিন। এই দিনটি শুধু বিদায়ের নয়, বরং অসুরের ওপর দেবতার বিজয়ের প্রতীক। তাই বিজয়া দশমীকে সত্য ও ন্যায়ের জয়ের দিন হিসেবেই মানেন ভক্তরা। সারুলিয়া পূজা কমিটির সদস্য শ্রী সন্তোষ চন্দ্র শীল বলেন, মায়ের বিসর্জনে চোখে জল এলেও মনে শান্তি আছে। কারণ বিজয়া দশমী মানে ন্যায়ের জয়, অশুভের বিনাশ।
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এ বছর দেবীর আগমন হয়েছিল গজে (হাতি) চড়ে—যা শান্তি, সমৃদ্ধি ও শস্যশ্যামলার প্রতীক। ভক্তদের বিশ্বাস, এতে দেশে আসবে মঙ্গল। তবে দেবীর বিদায় হয়েছে দোলায় (পালকি) চড়ে, যা শাস্ত্রমতে অশুভ সংকেত বহন করে। পালকিতে গমন মানে মহামারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা সামাজিক বিপর্যয়ের ইঙ্গিত। তবে ভক্তরা এটিকে সর্বনাশ নয়, বরং সতর্কবার্তা হিসেবে দেখেন। তাদের বিশ্বাস, দেবীর কৃপায় অমঙ্গল সরে গিয়ে শুভ শক্তির জয় ঘটবেই।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে ডেমরায় নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি বিসর্জন শোভাযাত্রায় র্যাব, সেনা সদস্য, পুলিশ ও আনসার দায়িত্ব পালন করেন। ঘাট এলাকায় ছিল বিশেষ নজরদারি, বাড়তি টহল এবং ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের প্রস্তুত দল। ডেমরা থানার ওসি মাহমুদুর রহমান বলেন, বিজয়া দশমীতে মানুষের ভিড় বেশি হয়, তাই আমরা বাড়তি নিরাপত্তা দিয়েছি। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে বিসর্জন সম্পন্ন হয়েছে। ডেমরার পূজামণ্ডপগুলোতে আজ ছিল বিদায়ের বেদনা আর বিজয়ের আনন্দের মেলবন্ধন। ঢাকের তালে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব।