• বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
শ্যামনগরের নবাগত ইউএনও এর সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় কচুয়ায় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন মুক্তাগাছায় নলকূপ মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ বিষয়ক অরিয়েন্টেশন পিরোজপুরে একমাত্র নারী মনোনয়ন প্রত্যাশী এলিজা জামান অস্তিত্ব সংকটে কলারোয়ার টালি শিল্প পীরগঞ্জ সীমান্তে বিজিবির অভিযান: মানবপাচারকারী আটক, ফেনসিডিল ও মদ উদ্ধার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সভায় কাঁদলেন বিএনপি নেতা খান মনিরুল ইসলাম নাজিরপুরে নদী ভাঙনে হাজারো মানুষের জীবন অন্ধকার পিরোজপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ ও মাছের পোনা অবমুক্তকরণ নানান আয়োজনে পিরোজপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

অস্তিত্ব সংকটে কলারোয়ার টালি শিল্প

প্রভাত রিপোর্ট / ১৩ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

মীর রোকনুজ্জামান, কলারোয়া: ভোরের আলো ফোটার আগে মুরারীকাটি গ্রামের কাঁচা রাস্তায় হাঁটলে এখন আর শোনা যায় না আগের মতো চুল্লির আগুনদাহের শব্দ, নেই টালি পোড়ানোর সেই পরিচিত ঘন ধোঁয়া। একসময় যেখানে টালির কারখানাগুলোর লাল-কমলা শিখা আকাশ রাঙাত, আজ সেখানে নীরবতার ছায়া। জ্বলন্ত চুল্লির পাশে শ্রমিকদের ব্যস্ততা আর হাসির কলতান মিলিয়ে যাচ্ছে অতীতে।
সাতক্ষীরার কলারোয়া—এই অঞ্চল একসময় টালি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। টালির ছাউনি ছিল গ্রামের সৌন্দর্য, আর গৃহস্থের সম্মানের প্রতীক। টালিতে ঢাকা বাড়ি মানেই টেকসই, শীতল আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুর—এই দুই গ্রামে ছিল ৪১টি টালি কারখানা। সকাল থেকে রাত—শ্রমিকদের হাঁকডাক, কাদা-মাটি প্রস্তুত, টালি শুকানো ও চুল্লিতে পোড়ানোর দৃশ্য ছিল নিত্য স্বাভাবিক। সেই চাকচিক্য আজ স্মৃতিসুধা মাত্র। এখন হাতে গোনা মাত্র ৭টি কারখানা কোনোমতে টিকে আছে, আর জীবিকা হারিয়ে হতাশায় দিন কাটছে প্রায় চার হাজার শ্রমিকের।
শ্রীপতিপুরের প্রবীণ কারিগর দুলাল পাল (৭২), যিনি ৫০ বছর টালি বানিয়েছেন, ভাঙা স্বরে বললেন— টালি শুধু পেশা ছিল না, আমাদের শিল্প, গর্ব—আমাদের জীবন। এখন ছেলে-মেয়েরা আর এই পেশায় আসতে চায় না। কারখানা বন্ধ, কাজ নেই। মনে হয়, আমাদের ঐতিহ্যটা চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে। কারখানা মালিকদের কথায় উঠে আসে সংগ্রাম ও অস্থিরতার চিত্র।
টালি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোষ্ট চন্দ্র পাল বলেন—আগে মৌসুমে লাখ লাখ টালি বিক্রি হতো, এখন বিক্রি হয় সামান্য। খরচ এমন বেড়েছে যে দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই, কিন্তু দাম বাড়ালে ক্রেতা নেই। সরকারের ঋণ ও বাজার সম্প্রসারণ উদ্যোগ থাকলে আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব।”
এই শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলোর জীবনে নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। একসময় যাদের নিয়মিত আয় ছিল, এখন তারা বেকার। কেউ ইটভাটায় মজুরি করছেন, কেউ শ্রমের খোঁজে শহরে, আবার কেউ বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছেন।
৩০ বছর ধরে চুল্লিতে কাজ করা শ্রমিক রফিকুল ইসলাম কণ্ঠ ভারী করে বললেন—
মাটির গন্ধ, টালি পোড়ানোর আগুন—সবই আমাদের জীবনের অংশ ছিল। এখন কাজ নেই, কিস্তির চাপে ঘর চালানো কঠিন। সন্তানদের স্কুল খরচও জোগাতে পারি না। তবুও আশা ছাড়ছে না সবাই। কারণ টালি শুধু একটি পণ্য নয়, এটি কলারোয়ার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও দক্ষতার বহমান ধারা।
স্থানীয়দের বিশ্বাস—যদি সময়োপযোগী নীতি, প্রযুক্তি উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ ও রপ্তানি বাজারের সুযোগ তৈরি করা যায়, তবে এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারে টালি শিল্প। আর তাতে বাঁচবে বহু পরিবার, বাঁচবে হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্য। এই বিষয়ে কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম জানান— টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছে। টালিকে জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উদ্যোক্তা ও কারিগরদের ঋণসহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।”


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও