• মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম

নির্বাচন নিয়ে নিয়ে জল্পনাকল্পনা বাড়ছে

প্রভাত রিপোর্ট / ৬ বার
আপডেট : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

প্রভাত রিপোর্ট: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল লন্ডন বৈঠকের পর সেটা কেটেছে বলে মনে করা হচ্ছিল; কিন্তু দুই সপ্তাহ যেতে না যেতেই নতুন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংশয় তৈরি হয়েছে বিএনপিতে। বিশেষ করে ভোটের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট কোনো বার্তা না দেয়ায় এ নিয়ে জল্পনাকল্পনা বাড়ছে। বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, লন্ডন বৈঠকের কোনো প্রতিফলন নির্বাচনের কমিশনের কার্যক্রম তারা দেখছেন না। পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর) নির্বাচনসহ কিছু বিষয় নতুন করে সামনে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এটাকে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছে বিএনপি।
যদিও বিএনপি আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন, রাষ্ট্রপতির অপসারণসহ এ সব দাবির সঙ্গে একমত নয়। দলটি মনে করে, এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ার সুযোগ নেই। আর আনুপাতিক হারে নির্বাচন একটি জটিল প্রক্রিয়া। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।
সংবিধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা চলছে। এ পর্বে ছয় দিনের আলোচনায় দেখা গেছে, সাংবিধানিক সংস্কার প্রশ্নে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ খেলাফত মজলিসের দুই অংশের অবস্থান অনেকটাই কাছাকাছি। এর মধ্যে জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, জমিয়ত ও খেলাফত মজলিসসহ ২৩টি দল নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদের উচ্চকক্ষের আসন বণ্টন চায়। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনেরও পক্ষে দলগুলো। প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতিতেও এ দলগুলোর অবস্থা কাছাকাছি।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তাঁরা দীর্ঘ সময় একান্তে কথা বলেন। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা ধারণা করেছিলেন, প্রধান উপদেষ্টা বৃহস্পতিবার যমুনায় এই বৈঠকে সিইসিকে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর কথা বলবেন; কিন্তু সরকারের দিক থেকে এই বৈঠককে শুধু সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো বক্তব্য দেয়নি। ফলে বিএনপি মনে করছে, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের বিষয়ে সিইসিকে স্পষ্ট কোনো বার্তা দেননি। যার ফলে প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসির সাক্ষাতে কী আলাপ হয়েছে, তা পরিষ্কার করার আহ্বান জানায় বিএনপি। এ বিষয়ে গত শুক্রবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি উভয় পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে আমরা আশ্বস্ত হই।’
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবারের ওই সাক্ষাতে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন বিষয়ে কথোপকথনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংস্কারপ্রক্রিয়া কতটা এগিয়েছে এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সিইসির কাছে জানতে চেয়েছেন। তবে কবে নাগাদ নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো আলোচনার কথা জানা যায়নি।
১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে ২০২৬ সালে পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে বলে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন। সে ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে।
বিএনপির নেতারা বলছেন, তাঁদের কাছে এখন পর্যন্ত সরকারের দিক থেকে লন্ডন বৈঠকের ওই ঘোষণার কোনো প্রতিফলন নেই; বরং রাজনীতিতে নতুন নতুন কিছু ইস্যু তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, যা জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার উপাদান বলে মনে করছেন। এর মধ্যে আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা এবং আগামী নির্বাচনে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতি প্রবর্তনের দাবি জোরদার করা হচ্ছে।
বর্তমান ইসি বাতিলের দাবি এবং রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ ও জাতীয় পাটিকে (জাপা) নিষিদ্ধ করার দাবিও আবার সামনে আনা হতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
মৌলিক সংস্কার, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দাবিতে শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে ইসলামী আন্দোলন। এতে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি, গণ অধিকার পরিষদ, খেলাফত মজলিসের দুই ভাগসহ সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষের দলগুলোর নেতারা আমন্ত্রিত হয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিএনপি তো সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিপক্ষে। সে কারণে আমরা তাদের আমন্ত্রণ জানাইনি।’
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন এবং আনুপাতিক হারে নির্বাচনের দাবি করছে, এটা তাদের রাজনৈতিক অবস্থান হতে পারে; কিন্তু সেটা আমাদের সবার ওপর চাপিয়ে দেয়ার কোনো বিষয় নয়। এটা অবিবেচনাপ্রসূত।’ তিনি বলেন, ‘যারা যারা স্থানীয় নির্বাচন ও আনুপাতিক হারে নির্বাচনের মতো এসব দাবি তুলছে, তাদের একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে, হয় নির্বাচন বিলম্বিত করা, অথবা নির্বাচন না হওয়া। এ বিষয়গুলো আমাদের কাছ মনে হয়েছে।’ বিএনপির নীতি–নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়েও একটা জটিলতার আশঙ্কা করছেন। এর মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো মোটামুটি ঐক্যের পথে থাকলেও জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ‘ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলো এখনো একমত হয়নি।
বিএনপির নেতাদের অনেকে মনে করছেন, সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র এনসিপি বা তাদের সমমনাদের মতো করে তৈরি করতে পারে। গত ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছে। এর বাইরে সরকার কিছু করলে বিএনপি তাতে একমত হবে না। এমন কিছু হলে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, যা জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও