• শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:২৬ অপরাহ্ন
প্রতিনিয়ত তৃণমূলে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে

ঝুলে থাকা ডেমরা-যাত্রাবাড়ী কমিটি নিয়ে উত্তাল তৃণমূল বিএনপি

প্রভাত রিপোর্ট / ১৭৯ বার
আপডেট : শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

মো.হাবিবুর রহমান , ডেমরা : ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ২৪ থানার মধ্যে ২০টিতে গত ৩০ আগস্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ডেমরা, যাত্রাবাড়ী, লালবাগ ও চকবাজার থানা কমিটি এখনো ঘোষণা করা হয়নি বলে তৃণমূল বিএনপিতে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনাসহ বাড়ছে ক্ষোভ-হতাশা। ওইসব থানা এলাকাগুলোর পথে-ঘাটে, অলি-গলি, চায়ের স্টল ও পাড়ামহল্লার বিভিন্ন ক্লাবসহ দোকানগুলোতে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চলছে আলোচনার ঝড়। সকলেরই একই প্রশ্ন কারা আসছেন থানা কমিটিতে, তারা কি বিএনপিকে সুসংগঠিত করে সকলের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবেন?।
এদিকে ভিন্ন প্রশ্নেও মেতেছেন অনেকে, গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে অঘোষিত ৪ টি থানা বিএনপিতে কি ত্যাগীরা ঠাঁই পাবে নাকি সুযোগ সন্ধানী হাইব্রিডরা কৌশলে জায়গা করে নিবেন ভাইটাল পোস্ট নিয়ে। তবে এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি বলছেন বাকি কিছু কার্যক্রম ও যাচাই-বাছাইসহ গুরুত্বপূর্ন কিছু কাজ শেষ করেই থানা কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে দ্রুত।
এদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দ্বিতীয় দফায় রাজধানীর ডেমরার পাঁচটি ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল ও পথসভা করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এবারের কমিটিতে সুযোগ্য ও দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ নেতা আশা করছেন বিএনপির র্তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে তৃণমূলের দাবি সুযোগ্য নেতা আসলে ডেমরা থানা বিএনপি সাংগঠনিকভাবে সুসংঘঠিত হয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে। প্রতিষ্ঠিত হবে এলাকাবাসীর অধিকার ও পূরণ হবে অধিকাংশ প্রত্যাশা।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, যেখান থেকে আন্দোলনের আগুন বারবার জ্বলে ওঠে, সেই ডেমরা-যাত্রাবাড়ীর কমিটি অবহেলায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের আশঙ্কা, আন্দোলনের পরীক্ষিত কর্মীদের মূল্যায়ন না করে হাইব্রিডদের পদ দেওয়া হলে তা শুধু ডেমরা-যাত্রাবাড়ী নয়, পুরো সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর হবে।
এ বিষয়ে ডেমরা থানা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছি, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশের ভয়ে ঘরে থাকতে পারিনি। মামলা-মোকদ্দমা মাথায় নিয়েও মাঠ ছাড়িনি। তবুও যদি আমাদের মূল্যায়ন না হয়, সেটি কেবল ডেমরা নয়, গোটা দেশের কর্মীদের অবমূল্যায়ন।
একই সুর শোনা গেল সাবেক ডেমরা থানা ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেনের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, বর্তমান ডেমরা থানা কমিটিতে ২৮৩ জন পদ প্রত্যাশী হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ডেমরা থানা বিএনপির সভাপতি পদে ৭০/৮০ জন, সাধারণ সম্পাদক পদে ৮০ থেকে ৯০ জন সিভি জমা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে আমরা চাই কমিটিতে ত্যাগীরা আসুক। একটা সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হয়েছি, জেল খেটেছি। ১৬ বছর ধরে ডেমরা থানা বিএনপির প্রতিটি সংগ্রামে সামনের কাতারে থেকেছি। অথচ যারা একদিনও মাঠে ছিলেন না, তারা বর্তমানে কৌশলে নেতা হয়ে যাচ্ছেন। এদিকে কমিটি ঝুলিয়ে রেখে হতাশ করা হচ্ছে।
থানা কমিটি নিয়ে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খোরশেদ আলমের অভিযোগ, বছরের পর বছর লুকিয়ে থেকেছি, মামলা খেটেছি। তারপরও বিএনপি ছাড়িনি। আজ যদি ত্যাগীদের অবহেলা করা হয়, তবে বুকের ভেতরের কষ্ট নিয়েই বাঁচতে হবে।
দেখা গেছে, নেতারা অবিলম্বে কমিটি ঘোষণার দাবি তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, এতদিন পরও কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় নেতাকর্মীদের ভেতরে তীব্র হতাশা তৈরি হয়েছে। দাবি উঠেছে—কমিটিতে থাকতে হবে আন্দোলনের পরীক্ষিত কর্মীদের। তাদের ভাষায়, ডেমরার প্রতিটি আন্দোলনে এস.এম রেজা চৌধুরী সেলিম ও আনিসুজ্জামান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা বারবার গ্রেপ্তার হয়েছেন, কিন্তু অন্যদের মতো থানায় গিয়ে আর বিএনপি করব না বলে মুচলেকা দেননি। দুর্দিনে বিদেশে পালিয়ে যাননি। স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, অনেকে যেমন এক ভাই আওয়ামী লীগের থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী, আরেক ভাই বিএনপির আহ্বায়ক প্রার্থী হয়েছেন—তেমন দ্বিচারিতাও করেননি। বরং মাঠে থেকে তৃণমূলকে সংগঠিত করেছেন এবং সাহস জুগিয়েছেন।
তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও দেশনায়ক তারেক রহমান স্পষ্ট করে বলেছেন ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হবে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ৫ তারিখের পর হঠাৎ হাইব্রিডরা বড় নেতা হয়ে যাচ্ছেন। প্রকৃত ত্যাগীরা অবহেলিত হচ্ছেন। এই প্রবণতা বিএনপির জন্য ক্ষতিকর বলেই মনে করছেন তারা।
নতুন কমিটির বিষয়ে ডেমরা থানা বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, প্রশাসনের অত্যাচার ও সাংগঠনিক জটিলতায় বর্তমানে ডেমরা থানা বিএনপির নেতাকর্মীরা যোগ্য অভিভাবকশূন্যতায় রয়েছেন। তাছাড়া গায়েবী ও বানোয়াট মামলা-হামলার শিকার নেতাকর্মীরা সুষ্ঠু নেতৃত্বের অভাবে এখনো বিচ্ছিন্ন অবস্থায়। তাই দল ও এলাকাবাসীর অধিকার নিশ্চিতে এখনই সময় সুযোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করার। যারা ত্যাগী ও দলের জন্য সর্বোচ্চ নিবেদিত প্রাণ এরাই নেতৃত্বে আসুক এটি আমাদের প্রত্যাশা।
এ বিষয়ে ৭০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহ-সভাপতি আওলাদ বলেন, আমরা এতদিন যাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি, যদি তাদের বাদ দেওয়া হয়, তাহলে রাজনীতি করা কঠিন হবে। এখনও আমরা পোস্টার লাগাই, মাঠে কাজ করি। অথচ হাইব্রিডরা বিনা পরিশ্রমে কমিটিতে ঢুকে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে আমার বাড়িতে র‌্যাব-পুলিশ হানা দিয়েছিল, দেয়াল ভেঙে ধরতে চেয়েছিল। ছাদ থেকে লাফিয়ে আহত হয়েছি তারপরও প্রতিটি আন্দোলনে শরিক হয়েছি।
এ বিষয়ে ডেমরা থানা এলাকার বিএনপি সমর্থক প্রবীন ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা জানায়, ডেমরা থানা বিএনপিতে যোগ্য প্রার্থী না হলে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আসবেনা। এলাকায় ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতা হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে সেলিম রেজা ও আনিসুজ্জামানের। তারা দীর্ঘ সময় ধরে ছাত্রদলের রাজনীতি শেষে পর্যায়ক্রমে বিএনপির রাজনীতি করে আসছেন। একই সঙ্গে ত্যাগের রাজনীতিতে জয়নাল আবেদীন রতন, আকবর হোসেন ভূঁইয়া না নান্টু, কবির হোসেন খাঁন, আব্দুল হাই পল্লব, জাহাঙ্গীর হোসেন খাঁন, আবু হানিফ মিয়া, হযরত আলী ও আবুল হাশেমসহ অনেকেরই নাম শোনা যাচ্ছে। তবে ত্যাগী ও সুযোগ্যদেরই নির্বাচিত করবে দলীয় হাইকমান্ড এমন প্রত্যাশা সকলের।
এ বিষয়ে ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানার (আংশিক) বিএনপির প্রধান সমন্বয়কারী নবী উল্লাহ নবী বলেন, আসন্ন কমিটিতে তাদেরকই নির্বাচিত করা হবে যারা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে শক্ত অবস্থানে সক্রিয় ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকতে পারবে। এক্ষেত্রে থানা পর্যায়ের র্তৃণমূলসহ সকল নেতাকর্মী ও অধিকার বঞ্চিত মানুষের আস্থাভাজনদেরকেই নেতৃত্বে আনা হবে বলে প্রত্যাশা করছি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনু মোবাইল ফোনে বলেন, থানা পর্যায়ে নেতৃবৃন্দের অনেকেই জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। আর এসব সিভিগুলো নগরকেন্দ্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ প্রায় শেষ, এখন শুধু নতুন কমিটি ঘোষণার পালা। আর বাকি কিছু কাজ রয়েছে যেগুলো শেষ করেই ৪ টি থানার নতুন কমিটি ঘোষণা হতে যাচ্ছে শিগগিরি।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন মোবাইল ফোনে বলেন,বাকি কিছু কার্যক্রম শেষে অঘোষিত লালবাগ, চকবাজার, ডেমরা ও যাত্রাবাড়ী থানা কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোষণা করা হবে। এক্ষেত্রে দু:সময়ের সহযোদ্ধা ও দলের জন্য নি:স্বার্থ ত্যাগীরাই মূল্যায়িত হবেন।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও