প্রভাত রিপোর্ট: সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। জামিন চেয়ে হাফিজুর রহমানের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার রুলসহ এ আদেশ দেন। এই মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে গত সপ্তাহে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন হাফিজুর রহমান।
আদালতে হাফিজুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো. আনিসুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবী।
পরে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হাইকোর্ট রুল দিয়ে হাফিজুর রহমানকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন। ফলে তাঁর কারামুক্তিতে আপাতত বাধা নেই।’
এর আগে আটকের ১২ ঘণ্টার বেশি সময় পর গত ২৮ আগস্ট দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলমসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করা হয়। রাজধানীর শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গত ২৮ আগস্ট সকালে লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমানসহ অন্যরা ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিতে যান। ‘আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের সংবিধান’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনার আয়োজক ছিল ‘মঞ্চ ৭১’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ও গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম ছিল। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না। সকাল ১০টায় গোলটেবিল আলোচনা শুরুর কথা ছিল। তবে শুরু হয় বেলা ১১টায়।
আলোচনা সভায় প্রথমে বক্তব্য দেন হাফিজুর রহমান। তাঁর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরই মিছিল নিয়ে একদল ব্যক্তি ডিআরইউ মিলনায়তনে ঢোকেন। এ সময় তাঁরা ‘জুলাইয়ের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘লীগ ধর, জেলে ভর’, ‘জুলাইয়ের যোদ্ধারা, এক হও লড়াই করো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তাঁরা গোলটেবিল আলোচনার ব্যানার ছিঁড়ে আলোচনায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে পুলিশের একটি দল আসে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের কাছে লতিফ সিদ্দিকী, হাফিজুর রহমান, মঞ্জুরুল আলমসহ অন্তত ১৬ জনকে তুলে দেন।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে পৃথক আবেদন করে। শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ১০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। এতে তাঁদের হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল থাকে।
হাফিজুর রহমানের আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের যে ধারায় মামলাটি করা হয়েছে, সেই অপরাধের উপাদান এজাহারে নেই। ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকও ছিলেন না হাফিজুর রহমান। মামলায় লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। হাফিজুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। তাঁর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মূলত এসব যুক্তিতে তাঁর জামিন চাওয়া হয়।