হাসানাত আকাশ,শিবচর: বিদেশের মাটিতে দীর্ঘ পরিশ্রমের পর স্বপ্ন নিয়ে দেশে ফেরা অনেক তরুণের গল্পই হারিয়ে যায় বাস্তবতার চাপে। তবে ব্যতিক্রম মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া মৃধাকান্দি গ্রামের প্রবাস ফেরত তরুণ রাসেল হোসেন। সৌদি আরবের উত্তপ্ত মরুভূমি ছেড়ে নিজের গ্রামের মাটিতে ফিরে তিনি গড়ে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন ও সফল এক সমন্বিত কমলা বাগান—যা এখন এলাকার কৃষি সম্ভাবনায় নতুন আলো জ্বালিয়েছে।
রাসেলের নয় বিঘার জমির দেড় বিঘা জুড়ে রয়েছে তার স্বপ্নের কমলা বাগান। প্রায় ছয় বছর আগে লাগানো চাইনিজ জাতের ছোট আকারের কমলা গাছে গত দুই বছর ধরে টানা ভালো ফলন দেখা যাচ্ছে। বাগানে ঢুকলেই চোখে পড়ে থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা সোনালি কমলা। শুধু সৌন্দর্যই নয়—এই ফলন রাসেলের জীবনে এনে দিয়েছে সাফল্যের নতুন অধ্যায়।
দেড় বিঘার জমিতে ৬০টি কমলা গাছ লাগানো হয়। কয়েকটি নষ্ট হলেও অধিকাংশ গাছেই এসেছে প্রচুর ফল। স্থানীয় বাজারে কেজিপ্রতি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয় রাসেলের কমলা। রাসায়নিকমুক্ত, মিষ্টি স্বাদের কারণে ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বাগান দেখতে এসে অনেকেই সরাসরি ক্রয় করে নিয়ে যান।
রাসেল শুধু কমলা চাষেই সীমাবদ্ধ নন। তার বাগানের একপাশজুড়ে পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলদ গাছ ছড়িয়ে রয়েছে সুপরিকল্পিতভাবে। পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের সবজির চাষ। সব মিলিয়ে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত বাগানে পরিণত হয়েছে।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে রাসেল হোসেন বলেন, “এই বাগানটা মূলত বাবার শ্রমের ফসল। সৌদি থেকে ফিরে কিছুদিন চাকরি করেছিলাম। কিন্তু মাটির কাছে ফিরে আসার স্বপ্ন আমাকে টানছিল। তাই চাকরি ছেড়ে বাবার বাগানের দায়িত্ব নিই। এখন কমলা, মাল্টা, ড্রাগন—সব মিলেই এই বাগান আমার ভবিষ্যতের মূল ভিত্তি।”
শিবচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, “রাসেলের বাগানে অসাধারণ ফলন এসেছে। উন্নত চারা, প্রশিক্ষণ, কৃষি ঋণ—প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতাই আমরা দিতে প্রস্তুত। তার বাগানটি একটি সফল সমন্বিত মডেল, ভবিষ্যতে আরও বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।”
প্রবাসী রাসেলের এই সফল উদ্যোগ শুধু তার ব্যক্তিগত অর্জন নয়—এটি শিবচর অঞ্চলের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বারও খুলে দিয়েছে। স্থানীয় যুবকদের মধ্যে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বিকল্প আয়ের উৎস হিসেবে ফল চাষের দিকে এগিয়ে আসতে।
প্রবাসের ঘামঝরা পরিশ্রমকে পুঁজি করে গ্রামের মাটিতেই স্বপ্নের ঘর বুনছেন রাসেল—এ যেন নতুন প্রজন্মের জন্য কৃষিতে সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।