প্রভাত অর্থনীতি: অনিয়ম, লুটপাট ও অব্যবস্থাপনায় ধুঁকতে থাকা ৯টি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে (এনবিএফআই) অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে রবিবার অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার (১ ডিসেম্বর) এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র।
প্রতিষ্ঠানগুলো হলো— পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, ব্যাংক রেজুলিউশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫–এর আওতায় সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের বিধান রয়েছে। তবে অবসায়ন করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে বলে আইনে বলা আছে। রোববার পর্ষদ এই বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই-বাছাই করে কোন কোন প্রতিষ্ঠান অবসায়ন করবে এ বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে। এর আগে আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে না পারা, উচ্চ খেলাপি ঋণ এবং মূলধন ঘাটতি— এই তিন সূচককে ভিত্তি ধরে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে ‘অব্যবহারযোগ্য’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অনেকদিন ধরেই ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধুঁকছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এফএএস ফাইন্যান্সের মোট ঋণের ৯৯ দশমিক ৯৩ শতাংশই খেলাপি ঋণ, প্রতিষ্ঠানটির ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান ১ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা; ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ খেলাপি ঋণ, লোকসান ১ হাজার ১৭ কোটি টাকা; বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) খেলাপি ঋণ ৯৭ দশমিক ৩০ শতাংশ, লোকসান ১ হাজার ৪৮০ কোটি; ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা, যার ৯৬ শতাংশই আদায় অযোগ্য। প্রতিষ্ঠানটির পুঞ্জীভূত লোকসান ৪ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।
পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ৯৫ শতাংশ, লোকসান চার হাজার ৬২৮ কোটি টাকা; আভিভা ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৮৩ শতাংশ, লোকসান তিন হাজার ৮০৩ কোটি টাকা; প্রিমিয়ার লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ ৭৫ শতাংশ, লোকসান ৯৪১ কোটি টাকা; জিএসপি ফাইন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৫৯ শতাংশ, লোকসান ৩৩৯ কোটি টাকা; প্রাইম ফাইন্যান্সের ৭৮ শতাংশ ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩৫১ কোটি টাকা।
এসব প্রতিষ্ঠান অবসায়নে সরকারের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।