• শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির স্মৃতিস্তম্ভে নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা : ক্ষতিপূরণ দাবি

প্রভাত রিপোর্ট / ১১ বার
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫

প্রভাত সংবাদদাতা,সাভার : সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আহত শ্রমিক, নিহত শ্রমিকদের আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সকালে সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এর আগে সকাল সাতটায় রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিহত ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু হয়ে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে শেষ হয়। পরে সংগঠনের পক্ষ থেকে অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর একে একে ফুলেল শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, ক্ষতিপূরণের আইন সংশোধন করে রানা প্লাজা ও তাজরীনসহ সব আহত ও নিহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। শ্রমিক হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩৮ জন শ্রমিক মারা যান। এটা কোনো দুর্ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কিন্তু এক যুগেও এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার কাজ শেষ হয়নি। যা খুবই দুঃখজনক।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি রানা প্লাজা ফান্ডে প্রচুর অর্থ দিয়েছে। অথচ নিহত শ্রমিকদের পরিবারসহ আহত শ্রমিকেরা গত একযুগেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি। আহত শ্রমিকদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। খায়রুল মামুন মিন্টু আরও বলেন, রানা প্লাজার ধসের ঘটনায় ভবন মালিক এক যুগ ধরে জেলে আছেন, বিচার কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু কারখানার মালিকেরা দিব্বি বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
ফেডারেশন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
জানা যায়, ২৪ এপ্রিল দেশের পোশাক শিল্পে এক শোকাবহ দিন। এই দিনে সাভারের রানা প্লাজা ধসে ১১৩৬ জন শ্রমিকের করুণ মৃত্যু হয়। আহত হন আরও কয়েক হাজার শ্রমিক। দিনটি ঘিরে নানান শ্রমিক সংগঠন আয়োজন করে নানা কর্মসূচি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ডের পাশে অবস্থিত রানা প্লাজায় থাকা পোশাক কারখানার শ্রমিকরা প্রতিদিনের মতো ওই দিন সকাল ৮টায় হাজির হন নিজ নিজ কর্মস্থলে। উৎপাদনও শুরু করেন নির্ধারিত সময়ে। হঠাৎ সাড়ে ৯টার দিকে বিকট শব্দ। আশপাশে উড়তে থাকে ধুলাবালি। ধসে পড়েছে সাভারের রানা প্লাজা। শুরু হয় আহত শ্রমিকদের আহাজারি। উদ্ধারে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, আনসার, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। চলে বিরতিহীন উদ্ধার অভিযান।
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর প্রায় প্রতিটি শ্রমিক সংগঠনই নড়েচড়ে বসে। শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ নিরাপদ রাখতে আন্দোলন শুরু করেন। নিহত ও আহতদের লস অব আর্নিংয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবিও করেন তারা। ২৪ এপ্রিলকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করার জোর দাবি জানান তোলেন তারা।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন বলেন, প্রতি বছর এই দিনে আমরা নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি। প্রতি বছরই আমরা একই দাবি তুলে ধরি, রানা প্লাজার অনেক শ্রমিক রয়েছেন যারা এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। দ্রুত ওই সব শ্রমিকদের লস অব আর্নিংয়ের ভিত্তিতে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। এ ছাড়া সরকার সোহেল রানার যে সব সম্পত্তি জব্দ করেছে সেসব নিহত ও আহত পরিবারের মাঝে বিলিয়ে দিতে হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবির কোনোটাই বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা আশা করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের দাবিগুলো পূরণ করবে। ভবন মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও