প্রভাত রিপোর্ট : ক্ষমতার পালাবদলের অস্থিরতায় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও ধীরে ধীরে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে কর্মচাঞ্চল্য। সরকার পতনের পর গত কয়েকদিনে রাস্তায় যান চলাচল কম থাকলেও এ সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাস্তায় পরিবহন ও মানুষের চলাচল বেড়েছে। গতকাল রবিবার সকালে সড়কে সব ধরনের পরিবহন চলাচল করতে দেখা গেলাও সংখ্যাটা এখনও আগের মতো নয়। যাত্রীরা বলছেন, কাজের জন্য তাদের বাইরে বের হতে হচ্ছে; তবে অস্বস্তি রয়ে গেছে এখনও। রাস্তায় যান চলাচল তুলনামূলক কম থাকায় যাতায়াতেও তাদের বেগ পেতে হচ্ছে। তবে ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করছেন তারা। গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন থানা, আওয়ামী লীগ অফিস, স্থাপনা ও ভাস্কর্য ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের খবর আসে। পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে থানা ও ঢাকার সড়ক। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তায় শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। এরই মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ সরকারের প্রথম কর্মদিবস ছিল গতকাল রোববার। এদিনও সড়কের কোথাও ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায়নি, নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। কিছু কিছু পয়েন্টে আনসার সদস্যদের দেখা গেছে।
মিরপুর থেকে গণপরিবহনে চড়ে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি যাচ্ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী রিফাত মিয়া। তিনি বলেন, আগে তাদের অফিস চলত সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। বর্তমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে সময়সীমা কমিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, কারণ সন্ধ্যায় রাস্তায় বের হলে ঝামেলা হতে পারে। পুলিশ নাই তো- যেসব ঘটনা ঘটছে; এলাকায় ডাকাতি হওয়ার মাইকিং করে রাতে- এসব কারণে রাস্তায় বের হলে হামলার শিকার হতে পারি, সে ভয় নিয়েই রাস্তায় বের হই। কাজের জন্য বের হতেই হবে, এছাড়া তো উপায় নাই। রাস্তায় মানুষও আগের মতো বের হয় না। অফিস শেষ হলে সঙ্গে সঙ্গে বাসায় চলে যাই, দেরি করি না।
মিরপুরের কালশীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেল বেসরকারি চাকরিজীবী তমাল রহমানকে, তিনি যাবেন কারওয়ান বাজার। তমাল বলেন, তুলনামূলক গাড়ি কম; গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়- যাতায়াতের একটা অসুবিধা হচ্ছে আরকি। তিনি বলেন, কয়েকদিন তো দেশে খুব ঝামেলাও ছিল, সেজন্য একটু একটু ভয়ও হয়। বিআরটিসি বাসের হেল্পার সবুজ মিয়া বলেন, আতঙ্কে মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে না; ফলে যাত্রী সংকটে চলতে হচ্ছে তাদের। তিনি আরও বলেন, গাড়িতে দেখেন না যাত্রী কম, তেলের টাকাই ওঠে না। একারণে গাড়ি কম বের হয় রাস্তায়। আমরাও অনেক দিন পরে বের হইছি আজকে।
মিরপুরের কালশীতে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন রাইড শেয়ারের চালক আশরাফ হোসেন। তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন ধরেই যাত্রী কম পাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, এমনিতেও ৪-৫ দিন বাইক নিয়ে বের হইনি। এখনও যাত্রী খুব কম, যা টাকা দিচ্ছে তাতেই রাজি হয়ে যাচ্ছি- পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে হবে তো। মানুষ রাস্তায় বের হচ্ছে কম, তাদের হাতে টাকা কম- আমাদেরও চলার অবস্থা খারাপ।
মিরপুর ১২ নম্বর এলাকার দোকান পাটগুলো অন্যান্য সময় খুলতো সকাল পৌনে ৭টার দিকে। এখন সকাল ৯টার দিকেও সব দোকান খুলতে দেখা যায় না। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৮টার পর দোকান খুলতে আসেন মুদি দোকানি সাব্বির হোসেন। দেরিতে দোকান খোলার কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, দেশের অবস্থা ভালো না বুঝেন না! একারণে দেরিতে খুলি। মানুষের আনাগোনা যখন বাড়তে থাকে তখন খুলি আরকি। মুসকান জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা মো. সিফাত বলেন, তাদের বেচাবিক্রি এখনও স্বাভাবিক সময়ের মতো ফেরিনি। তিনি বলেন, মানুষের হাতে টাকা কম, লম্বা সময় ধরে তাদের কাজ বন্ধ ছিল। একারণে বিক্রি কম হচ্ছে।
কালশীর ফল বিক্রেতা মো. ইকবাল আতঙ্কে দোকান খুলেননি এক সপ্তাহ। রবিবার সকালে ভ্যান নিয়ে বসলেও ক্রেতা না থাকার ফলে তাকে অলস সময় পার করতে দেখা যায়। তিনি বলছেন, জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় তার বিক্রি কম হচ্ছে। তিনি বলেন, বাজারে মালামালের যোগান এখনও কমের দিকে, গাড়ি আসে না ঝামেলার কারণে। দোকানও কম বসতেছে। আগে এসময় দোকানের লাইন থাকত এখানে, এখন মাত্র কয়ডা দোকান।