আরাফাত দাড়িয়া : নতুন সরকার গঠনের পরও তারুল্য সংকট কাটছেনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। একে তো বৈদেশিক ঋণের সুদ টানতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, তার উপর রিজার্ভেও নেই পর্যাপ্ত তারুল্য। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে হয়তো মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব এবং বাজার ব্যবস্থাও হাতের নাগালে চলে আসবে।
মূলত, বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়ায় রিজার্ভে টান পড়ে সরকারের। অর্থের যোগান না নিয়ে ব্যয় বাড়ানো হয়। যার মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রকল্প বাস্তবায়নসহ নানানমুখী কাজের জন্য সরকারকে বাংলাদেশ ব্যাংক ৪১ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাপিয়ে দিয়েছে যা রীতিমতো অনৈতিক। দেশে মুদ্রা নীতি ঠিক রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেই সূত্র জানায়, কোন ধরনের নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করায় নতুন নোট ছেপেছে তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক। যার ফল মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, সেই ঋণ পরিশোধ করে রিজাভ বাড়ানো নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সিপিডির পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন,‘দেখা গেছে, বিভিন্ন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকার মনিটরিং করেছে কিন্তু নিজেদের ঋণ নেয়ার সময় সেই মনিটরিং করেনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রনেও তাদের ভূমিকা দেখা যায়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিৎ হবে আর্থিকখাতের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রকাশ করা। সেখানে উঠে আসবে তার কাছে কি পরিমানের পাওনা আছে, কে কত টাকা পরিশোধ করেছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে প্রাপ্য পাওনায় অনিশ্চিত রয়েছে।’
ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ, মূলধন ও আমানত গ্রহনেও রয়েছে অসচ্ছ্বতা। যারা ঋণ খেলাপি তারা এখন ধেরাছোঁয়ার বাইরে। অনেকে বিদেশ পালিয়ে গেছেন বলেও জানা গেছে। এদের কাছ থেকে টাকা ফিরিয়ে আনাটাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, আর্থিক খাতে সংস্কারের প্রাথমিক ভিত্তি হতে হবে, নীতি-আপোষকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা এবং খেলাপি ও পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার। কিন্তু সেটা কিভাবে করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক? তারুল্য সংকট বাংলাদেশে পুরানো। ব্যাংকাররা টাকা নেই বলে গলা ফাটালেও তৎকালীন সরকার সেটা আমলে নেয়নি। উল্টো বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে বৈদিশিক ঋণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে কাজ করেছে। পরে এই টাকা পরিশোধে গাফলতি হওয়ায় তারুল্য সংকট দেখা দেয়। বৈদিশিক ঋণের সুদহার পরিশোধ করাটাই এখন বর্তমান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, তারুল্য সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারলে ডলার সংকট তৈরি হবে। তখন টাকার সাথে ডলারের বিনিময় হার বেড়ে যাবে, পরিশোধ করতে হবে বাড়তি টাকা। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলোকে কল মানি মার্কেটের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য করছে। কল মানি মার্কেট হলো একটি স্বল্পমেয়াদী অর্থ বাজার, এর মাধ্যমে সংকটে থাকা ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে।
সিপিডি একটি তথ্য থেকে জানা যায়, গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতের আর্থিক অনিয়মের টাকার পরিমান দাঁড়িয়েছে ৯২ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এই অনিয়ম কিভাবে, কেন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সেই তথ্য নেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এরকম অস্বচ্ছ তথ্যের জন্য ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন করার দাবি জানিয়েছে সিপিডি। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ব্যাংকগুলোকে পরবর্তি ঋণ দেয়ার যে নীতি রয়েছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দুর্বল ব্যাংক বন্ধ করা হলে আমানতকারীরা যেন তাদের অর্থ ফেরত পায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে বলেছেন অর্থনীতিবিদরা।