প্রভাত সংবাদদাতা, ফেনী : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের পতনের পর থেকে গতকাল রবিবার পর্যন্ত আত্মগোপনে রয়েছেন ফেনীর ৩৫ জন ইউপি চেয়ারম্যান। সর্বশেষ ১৫ আগস্ট জেলার ৮ জন ইউপি চেয়ারম্যান পরিষদে এসে দাপ্তরিক কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। জেলাজুড়ে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধানে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর, ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও, ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর, শুভপুর, ঘোপাল, মহামায়া, দাগনভূঞা উপজেলার রামনগর, ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ও আনন্দপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ইউপি কার্যালয়ে এসে দাপ্তরিক কাজ পরিচালনা করছেন। এছাড়া জেলার পরশুরাম উপজেলার বক্সমাহমুদ ও দাগনভূঞা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার পর দুয়েকদিন পরিষদে এলেও বাধার মুখে পরবর্তী সময়ে তারা আর আসেননি।
সাইদুল ইসলাম নামে সোনাগাজীর নবাবপুর ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের কোনো চেয়ারম্যান কর্মস্থলে না থাকলেও আমাদের চেয়ারম্যান সবসময় পরিষদে আসছেন। সেবা কার্যক্রমেও তেমন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি। মূলত আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানরা পালিয়ে গেছে।
ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান মিনু বলেন, স্বাভাবিকভাবেই কাজ করছি। কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সরকার পরিবর্তন হলেও পরিষদে এসে নিয়মিত কাজ করছি। কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হইনি।
নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা নিয়মিত নাগরিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তবে ইউপি সচিব ও একজন ইউপি সদস্য ছাড়া অন্যরা আত্মগোপনে রয়েছেন। এতে কাজ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের জামায়াত পন্থী সদস্য নজরুল ইসলাম নিয়মিত পরিষদে আসছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগ ফেনীর উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, কর্মস্থলে উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যানদের বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে জানতে চেয়েছিল। পরে আমরা এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছি।
শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন ফেনীর বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা। জনপ্রতিনিধিরা কার্যালয়ে না আসায় ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, জেলার ছয় উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও নারী ইউপি সদস্য মিলে ৫৫৯ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে জেলার বেশিরভাগ নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন সুবিধামত স্থানে। নিজ কার্যালয়ে আসছেন না অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি। এতে জন্মসনদ, মৃত্যুনিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ কোনা প্রকার সেবা পাচ্ছে না নাগরিকরা।
আলী আশরাফ নামে ছনুয়া ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জন্মনিবন্ধনের কাজে পরিষদে আসলেও চেয়ারম্যান-মেম্বার কাউকে পাইনি। জরুরি প্রয়োজন থাকলেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য ভোগান্তিতে পড়েছি। বিষয়গুলো বিবেচনা করে সাধারণ নাগরিকদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে দ্রুত একটি নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। আবুল কালাম নামে আরেক সেবাপ্রার্থী বলেন, জানিনা কতদিন আমাদের এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হবে। সাধারণ মানুষের কথা মাথায় রেখে দ্রুত কার্যক্রম স্বাভাবিক করার দাবি করছি।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদে কোথাও কোথাও সচিব ও উদ্যোক্তাদের দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে সোনাগাজীর চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সুব্রত কুমার শীল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষ ছাড়া কোনো কিছুই অক্ষত নেই। ৫ আগস্ট বিকেলে একদফায় পরিষদে হামলা-ভাঙচুর হয়। সন্ধ্যার পরে দ্বিতীয় দফায় আবারও হামলা চালিয়ে কম্পিউটার, প্রিন্টার, আসবাবপত্র, ডকুমেন্টসসহ আলমারি নিয়ে গেছে। এখানে নাগরিক সেবা দেওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এছাড়া চেয়ারম্যান না থাকায় কেউ এলেও সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত অফিস করলেও কোনো ধরনের কাজ করা যাচ্ছে না। ইউপি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় সবধরনের সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে।