প্রভাত রিপোর্ট : ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই যাত্রায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পূর্ণ সমর্থনে চেয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল ঢাকায় বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার মিশন প্রধানদের নিয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এই কথা বলেন। তিনি বলেন, আমি এমন এক সময়ে একটা দেশের দায়িত্ব নিয়েছি, যা অনেক দিক থেকে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য শেখ হাসিনার স্বৈরতন্ত্র দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, বিচার বিভাগ ধসে গেছে। দেড় দশক ধরে ভয়াবহ দমন-পীড়নের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করা হয়েছে। নির্লজ্জভাবে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম ভোটাধিকার প্রয়োগ ছাড়াই বেড়ে উঠেছে। রাজনৈতিক মদদে বাংকগুলো ডাকাতি করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে লুট করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ও রাশিয়াসহ ৫০ জনের বেশি কূটনীতিত এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান।
ড. ইউনূস বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যমে মৌলিক সংস্কার এনে আমরা অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করব। জাতীয় পুন-একত্রিকরণের ক্ষেত্রে আন্তরিক প্রচেষ্টা আমরা চালাব। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও টেকসই প্রবৃদ্ধির ধারা ফেরাতে জোরালো ও সুদূরপ্রসারী সংস্কার করার ওপর জোর দেন ইউনূস। তিনি বলেন, তার সরকার দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা রোধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অগ্রাধিকার দেবে। আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় সব ধরনের বাধ্যবাধকতা বাংলাদেশ মেনে চলবে বলেও কূটনীতিকদের সামনে অঙ্গীকার করেন প্রধান উপদেষ্টা।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আর এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শান্তিতে নোবেলজয়ী মুহাম্মদে ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশের দায়িত্ব নেয়। নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো দিনক্ষণ ঘোষণা না করে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে সংস্কারেই জোর দিচ্ছ এই সরকার।
ড. ইউনূসকে ইউএনডিপির প্রশাসকের অভিনন্দন
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রশাসক আচিম স্টেইনার অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সম্প্রতি অধ্যাপক ড. ইউনূসকে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) পক্ষ থেকে, আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আপনার নিয়োগের জন্য আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। গতকাল রবিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের একটি বার্তায় জানানো হয়, ইউএনডিপি বাংলাদেশে তার সহকর্মীদের পাশাপাশি, স্টেইনার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদীয়মান জাতীয় অগ্রাধিকারগুলোকে সমর্থন করার জন্য ইউএনডিপির দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং এই সংকটময় ক্রান্তিকালে বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার মতো ক্ষেত্রগুলোতে আমাদের বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক এবং দক্ষতার প্রতি আস্থা রাখুন।
প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় জাতিকে শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে পরিচালিত করার জন্য প্রফেসর ইউনূস এবং উপদেষ্টা পরিষদের সাফল্য কামনা করেছেন স্টেইনার। বার্তায় বলা হয়, একজন বন্ধু হিসাবে,পথ চলার প্রতিটি পদক্ষেপে আমি আপনাকে শুভকামনা জানাই এবং আপনার দেশের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়ার কারণে আমি আমার উত্তেজনা প্রকাশ করতে পারি না। বাংলাদেশে স্টেফান লিলারের নেতৃত্বে আমাদের ইউএনডিপি কান্ট্রি অফিসের মাধ্যমে আমাদের সম্পূর্ণ সমর্থনের উপর নির্ভর করুন।