প্রভাত রিপোর্ট : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া আরও অন্তত ২টি মামলা হয়েছে। এছাড়া এর আগের দিন বুধবার আরও ১০টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৫টি মামলা, আর ঢাকার বাইরে ছিল ৫টি। এ নিয়ে ৯ দিনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ৪১টি মামলা হলো। এসব মামলায় আসামিদের মধ্যে রয়েছেনÑ তাঁর বোন শেখ রেহানা, একাধিক মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতা। এ ছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও ৪টি অভিযোগ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী ফজলুল করিমকে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার এ মামলাটি করেন নিহতের ভাই আনোয়ার হোসেন আয়নাল।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সাভারের বাইপাইলে হকার মো. শাহাবুল ইসলাম ওরফে শাওনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাবেয়া সুলতানার আদালতে এ মামলা করেন নিহতের এক নিকট আত্মীয় মো. মজিবুল হোসেন। এসময় বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে আশুলিয়া থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত। বাদীরপক্ষের আইনজীবী হান্নান ভুইয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যা মামলা মামলার অন্য আসামিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী মো. আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশিদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব কুমার, সাবেক ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিআইজি খালিদ হাওলাদার, ঢাকা উত্তর সিটির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম ও সাবেক এমপি খসরু।
সাভারের বাইপাইলের মামলার অভিযোগ বাদী উল্লেখ করেন, গত ৫ আগস্ট পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আমার ছোটভাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। আন্দোলনরত অবস্থায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আসামিদের নির্দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা একত্রিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালায়। সেখানে আমার ভাইসহ অনেক ছাত্রজনতা গুলিবিদ্ধ হয়। আমার ভাইয়ের ডান পাশে বুকের সামান্য নিচে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাৎক্ষণিক মাটিতে পড়ে যায়। এরপর চিকিৎসার জন্য কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত অনুমান ৯টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করায়। ভর্তি থাকা অবস্থায় আমার ভাইকে আইসিইউতে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, পুলিশের সাবেক আইজিপি আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, ঢাকা ২০ আসনের সাবেক এমপি বেনজির আহমেদ, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি তালুকদার মোহাম্মদ শহীদ জং মুরাদ, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, আশুলিয়া থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কবির হোসেন সরকার, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার, সাবেক সাভার পৌরসভার মেয়র আব্দুল গনি কুলু। এছাড়া এই মামলায় ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ৪ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেয় নিহত শাওন। আন্দোলনরত অবস্থায় আসামির এলোপাথাড়ি ছোড়া গুলিতে ১১ টার দিকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এ সময় ছাত্র-জনতা শাওনকে উদ্ধার করে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। দুপুর দেড়টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক শাওনকে মৃত ঘোষণা করেন।