প্রভাত রিপোর্ট : মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও সংগঠনটির পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের সাজা বাতিল করেছে হাই কোর্ট। বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে তাদের আপিল মঞ্জুর করে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. আবদুর রবের একক হাই কোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেয়। আপিলকারীর আদিলুর ও এলানের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভূঁইয়া।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মিথ্যা মামলা দায়ের করে কোনো ইনগ্রেডিয়েন্ট না থাকা সত্বেও উনাদেরকে দুই বছর কারাদ- এবং ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়; অনাদায়ে আরও এক মাস করে বিনাশ্রম কারাদ- দেওয়া হয়। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে আদিলুর রহমান খান ও এলান আপিল করেন। আপিল অ্যালাও হয়েছে, নি¤œ আদালতের রায় বাতিল হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এখন অনেক মামলাই ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বিবেচনা করে বাতিল করা হচ্ছে, বাতিল করা হচ্ছে অধস্তন আদালতের রায়ও।
শেখ হাসিনার আমলে দ-িত আদিলুর রহমান খান এখন অন্তর্র্বতী সরকারের উপদেষ্টা। তার ওপর শিল্প মন্ত্রণালয়ের ভার দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে শাহবাগে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার প্রতিক্রিয়ায় মাঠে নেমেছিল কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত সারাদেশ থেকে সংগঠনের কর্মী ও মাদ্রাসাশিক্ষার্থীদের ঢাকায় জড়ো করে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল। সরকারের বারবার আহ্বানেও তারা ওই স্থান না ছাড়ায় রাতে সমন্বিতভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের সরিয়ে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই অভিযানে ৬১ জন নিহত হন বলে পরে অধিকার তাদের এক প্রতিবেদনে দাবি করে; যদিও পুলিশের দাবি, রাতের অভিযানে কেউ মারা যাননি, আর দিনভর সংঘাতে নিহতের সংখ্যাটি ১১।
অধিকারের প্রতিবেদনে প্রকাশিত সংখ্যাটি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হলে ওই বছরের ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জিডিটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা আইনজীবী আদিলুরকে মামলা দায়েরের দিন ১০ অগাস্ট রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। অধিকারের কার্যালয়েও চলে পুলিশের তল্লাশি। আদিলুর ২ মাস পর জামিনে মুক্তি পান। এলানও আদালতে আত্মসর্পণ করে জামিন নেন।
তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। পরদিন মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়, ২০১৪ সালে হয় অভিযোগ গঠন। তার সাত বছর পর ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলাটির বিচার শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এই দুজনকে সাজার রায় দেন।