প্রভাত রিপোর্ট : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারসের ৬ তলা ভবনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুন ২৪ ঘণ্টায়ও নেভেনি। একদিকে ভবনটিতে আগুন জ্বলছে, অন্যদিকে দিনভর কারখানাটির বিভিন্ন অংশে লুটপাট চলমান দেখা গেছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে কারখানাটিতে আগুন দেয়া হয়। এর আগে দুপুর থেকে চলে লুটপাট। গতকাল সোমবার বিকালেও কারখানার মূল চত্বরের বাইরের অংশে লুটপাট অব্যাহত দেখা গেছে। ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (ঢাকা) লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল করিম সংবাদ কর্মীদের বলেন, কারখানাটির একটি ৬ তলা ভবনে এখন আগুন জ্বলছে। আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে। আগুন আর ছড়ানোর কোনো শঙ্কা নেই। তিনি বলেন, কারখানায় থাকা টায়ার প্রস্তুতকারক নানান দাহ্য পদার্থের কারণে আগুন নেভাতে সময় লাগছে। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর কারখানার ভেতরে থাকা নিখোঁজদের সন্ধান করা হবে। দুপুর ১২টার দিকে যখন ভবনটিতে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল তখনও স্থানীয় কয়েকজন নারী-পুরুষকে কারখানার ভেতর থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে বের হতে দেখা গেছে।
কারখানাটির সামনে ও ভেতরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে কারখানার মূল অংশে লুটপাট না হলেও সুবিশাল এই কারখানা চত্বরের আশেপাশে বিভিন্ন অরক্ষিত অংশে লুটপাট চলছে। তারা কারখানা থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, স্টিল, প্লাস্টিক ও তামা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশের খালে কারখানা থেকে নির্গত জ্বালানি তেল সংগ্রহ করতেও দেখা গেছে। কারখানার বাইরের অংশে কয়েকজন জানালা ভেঙে লুট করছিলেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তারা কথা বলতে রাজি হননি। কয়েকজন আবার ক্ষেপেও যান। তবে এক যুবক বলেন, গাজী আমাগোরতে অনেক খাইছে। এইটা আমাগোই।
সকালে কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম জানান, রবিবার দুপুরে কয়েকশ লোক কারখানায় ঢুকে পড়ে। তাদের বাধা দেয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না। লুটপাটের সময় রাত ৯টার দিকে কারখানাটির ৬ তলা ভবনটির নিচতলায় আগুন লাগিয়ে দেয় লুটপাটকারীর। দুপুরে লুটপাট শুরু হলে পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিষয়টি জানানো হলেও কেউ এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ কোনো অবহেলা করেনি। আমরা কারখানার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামানও কারখানার নিরাপত্তা দেওয়ার কথা সাংবাদিকদের বলেছেন। তিনি বলেন, যারা কারখানাটিতে ঢুকেছিলেন তারা কারখানাটিতে লুটপাট করতেই ঢুকেছিলেন। এমনকি তারা টয়লেটের কমোড পর্যন্ত নিয়ে গেছে। খবর পাবার পর থেকে কাজ শুরু করেছি। গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর একবার কারখানাটিতে লুটপাট ও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছিল জানিয়ে শিল্প পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তারপর থেকে কারখানাটিতে কোনো গার্ড ছিল না, নিরাপত্তা প্রহরী ছিল না, প্রাচীর বেষ্টনিও ছিল না। অর্থ্যাৎ কারখানাটি পুরোপুরি অরক্ষিত ছিল এ অবস্থায় বিভিন্ন এলাকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকজন ঢুকে মালামাল, মেশিন লুট করে। এমনকি টয়লেটের কমোডও নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলো ইউনিট কাজ করছেন। আমরা রাত থেকে কন্টিনিউয়াস ডিউটি করছি, কেবল শিফটিং চেঞ্জ হয়েছেন। এটা তো একটা ক্রিমিন্যাল অফেন্স। আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী যথেষ্ট কাজ করেছি। লুটপাটের বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কারখানার লুটপাট ঠেকাতে পুলিশ, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করেছি তারা যেন আরো শক্ত অবস্থান নেয়।