আরাফাত দাড়িয়া : শীর্ষ পাঁচ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ দায়েরে পর এবার ছোট বড় ব্যবসায়ীদের খুঁজছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রাষ্ট্রের কর যারা এ যাবত ফাঁকি দিয়েছেন প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানালেন এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান। তিনি আরো জানিয়েছেন নানাদিক পর্যালোচনা করে ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শীর্ষস্থানীয় পাঁচ ব্যবসায়ির কর ফাঁকির অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ব্যবসার আড়ালে তারা কতটা সুযোগ নিয়েছে। সেই সাথে অর্থপাচারের দিকটিও গুরুত্ব দিচ্ছে এনবিআর। কারণ, অর্থ পাচার করে দেশকে অস্থিতিশীল তৈরি করতে সুবিধা নেয়ার এসব ব্যবসায়ীরা জড়িত বলে মনে করেন তারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, করফাঁকির সংস্কৃতি এখনি বন্ধ করতে হবে।
গতকাল টেলিফোনে এনবিআরের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান বলেছেন, ‘এখন আমাদের কাছে যা তথ্য আসবে, বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব বিষয় আসবে আমরা তা নানাভাবে কাজ করবো।’ তার কথাতে ষ্পষ্ট, যারা কর ফাঁকি দিয়েছেন তারা কেউই রেহাই পাবেন না।
মাস পেরিয়ে বছর আসে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসার পরিধিও বাড়ে। কিন্তু সেই তুলনায় বাড়েনা সরকারের রাজস্ব। ব্যবসার ক্ষতি দেখিয়ে বিভিন্ন কায়দায় ফাঁক ফোঁকর বের কর ফাঁকি দেয়ার উপায় বের করেন অনেক ব্যক্তি এবং তাদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে অনেকে রাজনৈতিক প্রভাবও খাটিয়ে থাকেন। আমাদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা। আর সেই তথ্যের ভিত্তিতে হয় অর্থ পাচার। ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ঘুষ দুর্নীতির সুযোগ দিয়ে দেশের বাইরে পাঠানো হয় অর্থ। যা রাষ্ট্রের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এতে সরকার বড় একটি অংশ রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের তো ক্ষতি হচ্ছেই। আর এসব কারণে কর ফাঁকি এবং অর্থ পাচারের বিষয়টি আমলে নিয়ে এনবিআরের বিশেষ একটি টিম অনুসন্ধানে মাঠে নামে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কর ফাঁকিবাজ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদসহ অনেকেই এখন আতঙ্কের মধ্যে আছেন। এরই মধ্যে বিতর্কিত কয়েকজন ব্যবসায়ীর নাম উঠে এসেছে বলে জানা গেছে। তবে এসব নাম এখনি প্রকাশ করতে নারাজ এনবিআর। ইতিমধ্যে অনেককে তারা চিঠিও পাঠিয়েছেন বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ এ প্রসংগে বলেন, ‘এখানে আমরা বলি পলিটিকেল সেটেলম্যান্ট। এখানে মিক্সড রয়েছে। এখানে কর্মকর্তারা জড়িত তাদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা সুবিধা নিয়েছিলেন। তবে আগে যারা ছিলেন তাদের সবাইকে বলবোনা যে এটার সাথে জড়িত। সবাই কমবেশি সুবিধা নেয় আর ক্ষতিগ্রস্থ হয় রাষ্ট। যেটা অতীতে হয়ে আসছে। এই কারণে জিডিপি কম আমাদের। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, আমাদের ট্যাক্সের বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ। কাজেই সবাইকে রেখে সিস্টেম ডেভেলপম্যান্ট করা উচিৎ। ইনকাম ট্যাক্স এত কম হবে কেন এটা খুঁজে বের করতে হবে। যেখানে আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতে অনেক বেশি জিডিপির হার। তাই সময় এসেছে এনবিআরের অনুসন্ধানে এসব খুঁজে বের করা।’
এনবিআর থেকে জানা গেছে, বিশেষ অনুসন্ধানে তারা যেসব বিষয় গুরুত্ব দিবে তার মধ্যে হচ্ছে, অর্থ পাচার, পুঁজি বাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে খুঁজে বের করা, বন্ড সেবা থেকে যারা বিশেষ সুবিধা নিয়েছে, অবৈধ সম্পদের অর্জনে যারা অভিযুক্ত। তদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না বলে এনবিআর জানায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কর ফাঁকিবাজদের ব্যাপারে এনবিআর কাজ করছে। বড়দের পাশাপাশি সাধারণ করদাতাদের কর ফাঁকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাধারণ কর ফাঁকিবাজদের ব্যাপারে যেসব অভিযোগ আসে, আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখি। এসবের মধ্যে সবই সত্য নাও হতে পারে। কোনো কোনোটির ব্যাপারে বস্তুনিষ্ঠতা পাওয়া গেলে আমরা অনুসন্ধান করব।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, যারা অবৈধ সুযোগ নিয়ে রীতিমত অর্থ কামিয়েছেন তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।
স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার নিশ্চিত করারও বিকল্প নেই। যদিও গত পনেরো বছর ধরে যারা কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন তাদের এবং প্রতিষ্ঠানের বন্ধ ব্যাংক খুলে দিয়েছে সরকার। যাতে সহজেই অনুসন্ধানের জালে আটকাতে পারেন তারা।