আরাফাত দাড়িয়া : অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য এমনিতে বিপর্যস্ত ব্যাংকিং খাত। কতিপয় ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে আলাদা সুযোগ করে দেয়ার জন্য বিগত বছরগুলোতে এসব অনিয়ম হয়ে আসছে। তারুল্য সংকট, অবৈধ ঋণের সুবিধা থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রমে ছিলো অনিয়মে ভরা। সরকার পরিবর্তনের পরপর এসব তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। সেই সাথে দুর্নীতির আরেকটি চিত্র উঠে এলো। এবার দুর্নীতি ধরা পড়েছে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে। বিভিন্ন ব্যাংকে এই খাতটি বছরের পর বছর ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আসছে। গ্রাহকদের ঋণ না দিয়ে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ড কিনে ব্যাংকগুলো নিশ্চিত মুনাফা তুলে নেয় সর্বোচ্চ চার শতাংশ পর্যন্ত। আর এ কারণে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পায় আর স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় মূল্যস্ফীতি।
বাংলাদেশ ব্যাংক বন্ড ও ট্রেজারি বিলে এসব অনিয়ম ঠেকাতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে। বিগত বছরের অনিয়মগুলো এবার প্রকাশ্যে আসবে বলে একটি সূত্র জানায়। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক অর্থনীতিবিদ নুরুল আমিন এ প্রসংগে বলেন, ‘বন্ডের ব্যবসাটা মনে হয় একটু বেশি প্রাধান্য পেয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে। বন্ড বিক্রি করায় ব্যাংকগুলো লাভজনক হচ্ছে বিধায় বাজারে দেদারসে ছেড়েছে তারা। কিন্তু এটাতে যে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রাহকরা এটা তারা আমলে নেয়নি। তাছাড়া সরকারের প্রয়োজন সরকার নিয়েছে। ব্যাংকগুলো বাইরে বিনিয়োগ না করে এখানে দিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা কোন প্রসেসিং নেই, কোন কাগজপত্র নেই, এখানে বিনিয়োগ করলে রিস্ক নেই। বলা বাহুল্য বন্ড ট্রেজারি ক্ষেত্রে খুব সহজেই এই ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।’
সূত্র জানিয়েছে গেলো অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বন্ড ও ট্রেজারি বিলে ৩২ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকা ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক বছরের বেশি সময় ধরে এমন সুযোগ অবধারিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদারকির সুযোগ থাকলেও সেটা কোন ধরনের পর্যালোচনা করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর আব্দুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে। ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন সাবেক গভর্নর অর্থনৈতিক কৌশল বের করে বন্ড ও ট্রেজারি বিলে এত টাকা ধার দিয়েছেন। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে বাজারে অর্থের প্রবাহ কমিয়ে আনতে উদ্যেগ নিয়েছিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যয় সংকোচন করে মুদ্রা নিয়ন্ত্রন করবে বলে গলাবাজি করেছিলেন তারা। কিন্তু সেটা ছিলো ¯্রফে কাগজে-কলমের মধে সীমাবদ্ধ। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু ইউসুফ এ প্রসংগে বলেন, ‘সরকার যদি এমনভাবে ইন্টারেষ্ট দিতে হয় তাহলে তো সরকারকে আরো বেশি বিনিয়োগ করে আয় করে তবেই ইন্টারেষ্ট দিতে হবে। এটা তো পরিস্কার বোঝা যায় বিশেষ একটি গোষ্টিকে সুবিধা দেয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে। তাই এখন থেকে সেই সুযোগ আর না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা।’
কিন্তু ভবিষ্যতে এ ধরনের সুযোগ বড় বড় ব্যবসায়ীরা পাবেন কিনা কিংবা সরকার নিজের জন্য ব্যাংক থেকে বিকল্প পথে টাকা নিবে কিনা এটি কে তদারকি করবে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সব বিষয়ে স্বাধীনতা দিলে এমন সমস্যা তৈরি হবে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ, ‘অন্যান্য উন্নত বিশ্বের যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তারা কিন্তু সবকিছুর বাইরে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকেরও তাদের একটা স্বাধীনতা দেয়া দরকার। আমি মনে করি সরকারি এবং বেসরকারী সব ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় থাকা উচিৎ।’
বিশ্লেষকরা মনে করেন. আর্থিক খাতের তদারকিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা এবং শক্ত অবস্থান দরকার। এসব বিষয়ে যারা লুটপাট করেছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত বলে মনে করেন তারা।