প্রভাত রিপোর্ট : বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব মেশিনারি, যন্ত্রাংশ, শিল্পের কাঁচামালের ওপর আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছিল। বিদেশি বিনিয়োগে সবরকম ট্যাক্স, ফি শুল্কমুক্ত করার ঘোষণা বিগত সরকার ঘোষণা করলেও কার্যকর করেনি। ফলে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আসেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্ষমতাসীন সরকার অতিদ্রুত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুত এসব সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে চায়।
জানা যায়, সৌদি আরবের ৩১টি কোম্পানি কক্সবাজার, সোনাদিয়া, দ্বীপ, আনোয়ারায় বড় ধরনে বিনিয়োগে আগ্রহী। কক্সবাজারে তারা পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ করবে।
জানা যায়, ৪৪টি দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে এসব দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে হবে। নাগরিকত্ব লাভের পাশাপাশি বিদেশিরা এখানে সপরিবারে আজীবন অবস্থান এবং স্থাবর-অস্থাবর বিষয়-সম্পত্তির মালিকানা, ভোগদখল, সম্পদ বিক্রি, বিনিয়োজিত অর্থ নিজ দেশে বা তৃতীয় কোন দেশে হস্তান্তর করতে পারবেন। বিগত সরকারের সময়ে বিনিয়োগের স্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত আর্থিক, অবকাঠামোগত সুবিধা সেবা ও নিরাপত্তামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার আশ^াস দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতা, সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম, দুর্নীতিতে অনেক বিদেশির আগ্রহে ভাটা পড়ে। যারফলে বিগত তিন বছরে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ আসেনি। প্রতিবেশী ভারত, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের অনেক বিনিয়োগকারী সরে গেছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, ভারত, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, মিসর, সুদান, কোরিয়া, নাইজেরিয়া, জার্মানি, ইতালি, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, আলজেরিয়া, লিবিয়া, কঙ্গো, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, চিলিসহ ৪৪টি দেশের নাগরিকরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে বিদেশি উদ্যোক্তারা এখনও এ সুবিধা পাননি।
বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণে বেশ কয়েকটি দেশের কোম্পানি আগ্রহী। ব্লক বরাদ্দের পর তাদের বিনিয়োগ আসবে।
পায়রা ও মংলা সমুদ্রবন্দর কেন্দ্রিক দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শিল্প-কারখানা স্থাপনে কয়েকটি দেশ আগ্রহী। মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, নড়াইল, যশোর জেলায় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিসহ বিভিন্ন রফতানিমুখী ও অভ্যন্তরীণ চাহিদাপূরণকারী ফ্যাক্টরি স্থাপনে আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা। সৌদি আরবের ৩১টি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যাপক বিনিয়োগে আগ্রহী। রিফাইনারি, বড় ধরনের সার কারখানা, জ¦ালানি, বিদ্যুৎ, বড় ধরনের টেক্সটাইল শিল্প, ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি, পর্যটনকেন্দ্র, হোটেল-মোটেল বিনোদনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা রফতানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানা স্থাপনে আগ্রহী তারা।
শরীতপুরের জাজিরায় অলিম্পিক ভিলেজ গড়ে তোলা, ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেয়েদের জন্য পৃথক স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলে বিশ^বিদ্যালয়, অত্যাধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মাওয়া প্রান্তে উন্নতমান ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্মলিত আবাসিক এলাকা, গার্মেন্টস পল্লী গড়ে তুলতে আগ্রহী বিদেশিরা। জাপান, কোরিয়া, চীন, ভারতসহ আরো কয়েকটি দেশ এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জাপান পৃথক শিল্প নগরীই গড়ে তুলতে উৎসাহী। ওষুধ শিল্প, রিফাইনারি, চামড়া, সিরামিক, কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছে কয়েকটি দেশ। সমুদ্রের কাছাকাছি এলাকায় গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি স্থাপনের জন্য চীন পৃথক জোন পেতে চায়।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ কার্যক্রম শুরু হলে দেশের দক্ষিণাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও কক্সবাজার এলাকায় বিশাল কর্মচাঞ্চল্য শুরু হবে বলেই আশা করা হচ্ছে। এসব এলাকার কর্মহীনদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশও নির্দিষ্ট হারে লভ্যাংশ পাবে। গত কয়েক বছর ধরেই এসব কর্মকা- শুরু করতে যথাযথ পদক্ষেপ সরকারের দিক থেকে নেয়া হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় স্বার্থে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলেই সংশ্লিষ্টরা আশা করেন।