বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

এসহাকের স্ট্রেচারে ভর করা জীবন, কাটেনি বন্যার ঘোর 

প্রকাশিত - ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪   ০৯:১১ পিএম
webnews24

জিহাদ হোসেন রাহাত, রায়পুর : বন্যার সংকটময় পানিবন্দি দশা থেকে ধীরে ধীরে মানুষজন স্বস্তির দুয়ার দেখতে শুরু করলেও ভয়ংকর বন্যা পরিস্থিতির ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারেননি স্ট্রেচারে ভর করে চলা বছর আশি বয়েসী এসহাক আলী দেওয়ান। হাঁটা চলায় বেশ কষ্ট পোহাতে হয় তাকে। বন্যা পরিস্থিতির সময়ে তিনি ও তার পরিবার প্রায় তেরোদিন ছিলেন ঘরবন্দী। জীবনের নানান চড়াই উৎরাই পার করা বয়োবৃদ্ধ এসহাকের মুখাবয়বের দিকে তাকালে আন্দাজ করা সম্ভব ঠিক কতখানি কষ্টে ছিলেন তিনি। হাতে জোর নেই। পা দুটো প্রায় অচল। যেটুকু শক্তি রয়েছে শরীরে তাও বন্দী বয়সের বেড়াজালে। 
এসহাক আলী লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশীর ইউপির ডাকাতিয়া পাড় এলাকার বাসিন্দা। পরিবার পরিজন নিয়ে খুব একটা ভালো নয় তার জীবন। বন্যা পরিস্থিতির সময় তারা ঘরবন্দি অবস্থায় দিন কাটালেও প্রথম দিকে খোঁজ নেয়নি কেউ। স্থানীয় কয়েকজন মানুষের কল্যাণে প্যাকেট তিনেক শুকনো খাবার সামগ্রী পেলেও কাটেনি এসহাকদের কষ্ট। পানির থৈথৈ অবস্থায় ঘরবাড়ি, আসবাবপত্রসহ যে ক্ষতি হয়েছে তাদের তা ভাষায় প্রকাশ করা না গেলেও দুঃখের সাগরে সংসার তরী যে তিনি পাড়ি দিয়েছেন ধৈর্য্য নিয়ে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভয়াল বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করে এসহাক বলেন, পানি অনেক ক্ষতি করেছে আমাদের। ঘর থেকে বের হতে পারিনি। কে নিবে কার খোঁজ। সবাই বিপদে ছিলো। পানি কিছুটা কমেছে। শুকনো খাবার দিয়েছে অনেকে। ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কাদামাটি দিয়ে বসতঘরের আঙিনা ভরে গিয়েছে। 
এসহাকের প্রতিবেশী আবদুল লতিফ বলেন, ডাকাতিয়া পাড় এলাকায় প্রায় ৪২ টি পরিবার ছিলো পানিবন্দি। আশপাশের মিলিয়ে কয়েকশ পরিবারের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। পানিতে তলিয়ে গেছে অনেকের সবজির ক্ষেত, ফসলের মাঠ। শুধু এসহাক আলীই নন। এমন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আরো অনেকে। গবাদি পশু হারিয়ে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হয়েছে বহু মানুষকে।
পানি কমার বিষয়ে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান জানিয়েছেন, বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে। বৃষ্টি না হলে দু-তিন দিনের মধ্যে পানি আরো অনেক কমে যাবে। দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে। তিনি আরও জানান, ভুলুয়া ও রহমতখালী নদীসহ খালগুলো দখলের কারণে সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে পানি নামতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় খাল খনন ও দখলমুক্ত করা জরুরি।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, বন্যার্তদের পাশে সর্বস্তরের মানুষ দাঁড়িয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির জন্য কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ত্রাণ বিতরণ করলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছানো সহজ হবে। এ জন্য তিনি ত্রাণ বিতরণ করতে আসা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করেন।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
বাগেরহাটে বেশিরভাগ ডিলার আত্মগোপনে :