বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

বাজারে নাভিশ্বাস বাড়ছেই

প্রকাশিত - ০৯ জুন, ২০২৪   ০১:১৮ এএম
webnews24

আরাফাত দাড়িয়া : বাজেট ঘোষণার পর উল্টো চিত্র বাজারে। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকার এবারের বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কর কমিয়ে দিয়েছে। অথচ ব্যবসায়ীরা সেটা তো মানছেন না । বরং সব ভোগ্য পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ভোক্তারা গতকাল বাজারে গিয়েই দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। যেখানে সরকার মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর কথা ভাবছে, কিন্তু দ্র্যব্যাদির দাম বাড়িয়ে সেটা সরকারের জন্য অধরাই থেকে যাবে।

এবারের বাজেটে সরকার ২৭টি পণ্যের উপর থেকে ১ শতাংশ কর কমিয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই কর তাদের কোন কাজেই আসবে না। বলা বাহুল্য, এর আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগাম টানতে সরকার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কর কমিয়ে দিয়েছিলো। তারপরও ব্যবসায়ীদের লাগাম টানতে পারেনি। আর মাত্র এক শতাংশ কর কমিয়ে ভোক্তাদের স্বস্তি কি ফিরিয়ে আনতে পারবে সরকার? এমন প্রশ্ন বিশ্লেকদের। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বিগত সময়ে আমরা দেখেছি কোনো পণ্যমূল্য হঠাৎ করে অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে সরকার ৩০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক কমিয়েছিল, কিন্তু তারপরও সে পণ্যের দাম আমরা তখন কমতে দেখিনি। তা হলে মাত্র ১ শতাংশ উৎসে কর কমিয়ে কিভাবে এসব পণ্যের মূল্য কমানোর আশা করা যায়। আসলে সরকারের দ্রব্যমূল্য কমানোর উদ্যোগ নিয়ে এক রকম ধোঁয়াশার মধ্যে আছি আমরা।’ 

এবারের বাজেটে যেসব পণ্যের উপর থেকে ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ২৭ পণ্য। গতকাল অনেক ক্রেতাকে বাজারে গিয়ে একটু হোঁচট খেতে হয়েছে। যেমন আলু কিনতে হয়েছে ৬০ টাকায়, যা আগে ছিলো ৫৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ টাকায়। গাজর ছিলো ১২০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ঢ্যারশ ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক বিক্রেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকে বলেন, ‘বাজেটে সবজির দামে কোন পরিবর্তন হয়নি। আমদানি হলে এমনিতে দাম কমে যায়। সবজির দাম ওঠানামা করে এটাই স্বাভাবিক। তবে দাম নিয়ন্ত্রনে আমাদের হাতে নেই।’ মাংসের বাজারেও বাজেটের কোন প্রভাব পড়েনি। যেমন ব্রয়লার মুরগী ১৮০ থেকে এখন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেয়ার মুরগী ৩২০ টাকা ছিলো এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। আর সোনালী মুরগী বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায় যা আগে ছিলো ৩৫০ টাকা। খাসির মাংস কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১২’শ টাকায়। যা আগে ১১০০ টাকায় বিক্রি হতো। তবে গরুর মাংস দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এ প্রসংগে অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘কথা আর কাজে তো মিল থাকতে হবে। বাজেটের পর খাদ্য কিংবা খাদ্য বহির্ভুত এমন কোন পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। সরকারও স্বীকার করছে দ্রব্যাদির উচ্চ মূল্যের কারণে সাধারণ মানুষও কষ্টে আছে। নতুন বাজেট ঘোষণার পরও বাজারে এর কোন প্রতিফলন দেখা যাচ্ছেনা। আমরা এখনো প্রত্যাশা করছি এই বাজেট  সাধারণ মানুষের কষ্ট লাগব হবে। অন্তত বাজার নিয়ে স্বস্তি ফিরবে তাদের। কিছু চেষ্টা করছে সরকার কিছু পদক্ষেপও নিচ্ছে কিন্তু বাজার সিন্ডিকেটের কারণে সেটা আলোর মুখ দেখছেন না। বাজেটের সুফলও পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।’
 
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে মূল এজেন্ডা ছিলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানো। যে কারণে নতুন সরকার গঠনের প্রথম বাজেটের উপর নজর ছিলো সবার। গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার নতুন বাজেট পেশ করেন যা আগামী ৩০ জুন সংসদে পাশ করানো হবে। অর্থনীতিবিদ এবং বিশ্লেষকদের ধারণা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমানোর যে উদ্যেগ সরকার নিয়েছে তা বাজেটে স্পষ্ট কোন কিছু নেই। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমার সম্ভাবনাও নেই। ভোক্তারা মনে করেন, প্রস্তাবিত বাজেটে দাম কমানোর কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা নেই। যেটুকু কর কমানো হয়েছে তাতে করে আর যাই হোক বাজার নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়। ভোক্তাদের দাবি, আগে বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে পরদিন থেকে তা বাস্তবায়ন হয়ে যায়। অথচ, বাজেটে দাম কমানোর পরও বাজারে এর কোন প্রতিফলন নেই। 

সরেজমিনে দুটি বাজার ঘুরে গিয়ে দেখা যায়, পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে পণ্যের দাম রাখছেন। আমদানি কম, উৎপাদন হয়না এসব বলে ক্রেতাদের কাছ থেকে উচ্চ মূল্যে পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও বাধ্য হয়ে এসব কিনছেন, তবে এর প্রতিকার চেয়েছেন তারা। কারওয়ান বাজারে আসা এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজেট ঘোষণার পরের দিনেই দাম বেশি। তাহলে জনগণের স্বস্তি আমি কীভাবে বুঝব? জনগণের তো আরও দুর্ভোগ।’ রারেবাজারে বাজার করতে আসা একজন চাকরিজীবি বলেন, ‘বাজেটে দাম আর কত বাড়াবে, কিই বা বাড়াবে। এমনিতেই তো সব কিছুর দাম বেশি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এমনিতেই কমে এসেছে। তবে এবার একটা জিনিস দেখলাম, প্রতিবার বাজেট হলেই বাজারে একটা প্রভাব পড়ে, মানে দাম বেড়ে যায়। আজকে দেখলাম আগে যে দাম ছিল সেখান থেকে দাম বেড়ে গেছে।’  
প্রভাত/আসো
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন