আরাফাত দাড়িয়া : সুনির্দিষ্ট কোন নীতিমালা নেই বলে বাজার পরিস্থিতি দিনদিন খারাপ অবস্থায় যাচ্ছে। বলতে গেলে ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের দাম। প্রতি সপ্তাহেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন তদারকি করলেও কোন কাজে আসছে না। গত রবিবার সংসদে বাজেট পাশ হওয়ার পর সেই পরিস্থিতি একটুও উন্নতি হয়নি। বরং, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একদিকে সবজির দাম চড়া, অন্যদিকে মাংস ও মশলার দাম শুধু বেড়েই চলছে। বাজেট পাশ হওয়ার একদিন পরই বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হিমশিম খাচ্ছেন নি¤œ ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষেরা। বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ টিকতেই পারছে না। প্রতিটি পণ্যের দাম এক লাফে বেড়ে গেছে। কোন কোন সবজি দ্বিগুন কোনটিতে পাঁচ থেকে দশটাকা বাড়তি। গতকাল সকালে কয়েকটি বাজারের চিত্র ছিলো এমন।
গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ এর অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করা হয়। অনেক যাচাই-বাছাই করে বড় কোন পরিবর্তন না এনে গত রবিবার সেই বাজেট সংসদে পাশ করা হয়। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাই ছিলো এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য। দুই অংকের মূল্যস্ফীতি কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রত্যাশিত বাজার পরিস্থিতি পরিবর্তনের তেমন কোন লক্ষন দেখা যায়নি পাশ হওয়া বাজেটে। উল্টো একদিন পরই প্রতিটি বাজারে পণ্যের দাম চড়া। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত রমজান মাস থেকে দ্রব্যমূল্যের বাজার উর্ধ্বগতি। তখন থেকেই পণ্যের দাম বেশি। আর সেই দাম আরেক দফা বাড়লো বাজেট পাশ হওয়ার পর। এমনিতে সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে অন্তত ২৭টি প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্যশস্য সরবরাহের ওপর উৎসে কর কমানো হয়েছে। বাজেটে এসব পণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- পেঁয়াজ, রসুন, মটর, ছোলা, চাল, গম, আলু, মসুর, ভোজ্যতেল, চিনি, আদা, হলুদ, শুকনা মরিচ, ডাল, ভুট্টা, ময়দা, আটা, লবণ, গোলমরিচ, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ, খেজুর, তেজপাতা, পাট, তুলা, সুতা এবং সব ধরনের ফলসহ ২৭ পণ্য। কাল বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মশলার দাম বাড়তি। পেঁয়াজের দামও পাঁট টাকা বাড়তি।
সবজির দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেশি। ৮০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে অনেক সবজি বিক্রি হচ্ছে এখন। কিছু সবজি রয়েছে যেগুলো ৫০ টাকার নিচে রয়েছে তবে তা ক্রেতারা খুব বেশি কিনেন না। কাওরানবাজারে বাজার করতে এসে ক্রেতা আব্দুল হামিদ এ প্রসংগে বলেন, ‘কর কমানোর পরও কেন পণ্যের দাম বাড়তি। আমাদের মাসিক একটা হিসাব থাকে, সেই হিসাব করে পুরো মাস চলতে হয়। বাজেট পাশ হওয়ার পর বাজারে এলাম ভেবেছি দাম কিছুটা কমবে। কিন্তু আজ দেখছি দাম আরো বেড়ে গেছে। তাহলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কর কমিয়ে কি লাভ হলো।’ উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে ৫৩ তম বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পাশ করা হয়েছে। বাজেটের ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পুষিয়ে নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অবশ্য বেশ কয়েকটি জায়গায় করের পরিমান যেমন বাড়িয়েছে তেমনি কালো টাকা সাদার করার জন্য ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিচ্ছে এনবিআর।
মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগে কমাতে হলে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারি হিসাবে দেখা যায়, মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার কম। গত এক বছরে যেই হার ছিলো সাড়ে নয়ের ঘরে। সেই মূল্য্যস্ফীতি এক লাফে দুই অংকে পৌঁছে যাওয়াটা মোটেও ভালো চোখে দেখেন না বিশ্লেষকরা। টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছরের এ সময়ের তুলনায় এখন অন্তত ১০টি পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে মুগডাল, রসুন ও হলুদের দাম। মূল্যবৃদ্ধির দৌড়ে আছে আলু, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে মাছ-মাংসও। দামের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই চালও।
এবারের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। নতুন অর্থবছরে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সাড়ে ৩ লাখ টাকার পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপর ৫ শতাংশ, এরপর ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরের ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। এদিকে বাজেট পাশ হওয়ার পরদিনই শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। একই সঙ্গে দাম কমার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। সবকটি মূল্যসূচক কমলেও লেনদেনের গতি বেড়েছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭১২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭০৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে গত ১৩ মে’র পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হলো।