প্রভাত রিপোর্ট : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, অনুমতি না নিয়ে রাস্তা খনন করছে তিতাস ও ওয়াসা। শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে বিআইপি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) উদ্যোগে ‘ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টিতে খাল পুনরুদ্ধারের ভূমিকা’ শীর্ষক এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
আগামী আগস্ট মাস থেকে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগর খালের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্তি কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
মেয়র তাপস বলেন, আমরা যে খালগুলো ওয়াসার কাছ থেকে পেয়েছি তার মধ্যে জিরানি, মান্ডা, শ্যামপুর এবং কালুনগর খাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চারটি খাল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একনেকে আমাদের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, খালগুলো পাওয়ার পর ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আমরা প্রাথমিকভাবে দখলমুক্ত করার কাজ শুরু করি। তখন আমরা দেখেছি, শ্যামপুর খালের একটি অংশ ১০০ ফুট প্রশস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে আমরা পেয়েছি ৮ ফুটের একটি নালা। এরকম চিত্র কিন্তু প্রায় সব জায়গায়। এখন আমরা এই প্রকল্পের আওতায় সিএস, আরএস, এসএ নকশা, বিষদ অঞ্চল পরিকল্পনা এবং পানি আইন অনুযায়ী এই ৪ খালের চূড়ান্ত সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্তি কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি।
আগামী মাস থেকে ব্যাপকভাবে আমরা এই কার্যক্রম শুরু করব। এখানে আমরা কঠোরভাবে দখলমুক্ত করব। এ কাজে অনেক প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। অনেক চাপ, প্রভাব রয়েছে। সেই চাপ, প্রভাব, প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় আমি গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ, নগর পরিকল্পনাবিদ, ঢাকাবাসীর সোচ্চার ভূমিকা ও সহযোগিতা কামনা করছি। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় আমরা চূড়ান্তভাবে খালের সীমানা নির্ধারণের পাশাপাশি সকল অবৈধ দখলদারদের কবল হতে খালগুলো মুক্ত করব- ইনশাআল্লাহ।
জলাবদ্ধতা নিরসনে গত ৪ বছরে গৃহীত ও বাস্তবায়িত নানা উদ্যোগ তুলে ধরে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার পর যেসব জায়গায় আধাঘণ্টার বেশি বৃষ্টির পানি জমা থাকে সেসব জায়গা ও স্থানকে জলাবদ্ধ বলে আমরা চিহ্নিত করছি। ২০২০ সালের পর হতে আমরা এ রকম ১৬১টি জায়গা-স্থান চিহ্নিত করেছি এবং ইতোমধ্যে ১৩৬টি জায়গা ও স্থানে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে করে জলাবদ্ধতা নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি জায়গাগুলোতে কাজ চলমান রয়েছে।
বিগত দিনে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার নানা অসামঞ্জস্যতা তুলে ধরে এবং সেসব অসঙ্গতি মোকাবিলার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে শেখ তাপস বলেন, পুরাতন ঢাকার মূল জায়গা বংশাল, কোতোয়ালি, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া। বংশালে দীর্ঘ ৪০ বছর কোনো কাজ হয়নি। অনেক জায়গায় আমরা দেখেছি, নিকটবর্তী স্থান দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না করে প্রায় এক-দেড় কিলোমিটার ঘুরিয়ে দূরবর্তী স্থান দিয়ে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই বংশাল এলাকার পানি ফুলবাড়িয়া হয়ে নর্থ-সাউথ সড়ক দিয়ে ধোলাইখাল হয়ে বুড়িগঙ্গায় নিষ্কাশিত হতো। আমরা সেটি ৬ ফুট ব্যাসের নর্দমার মাধ্যমে সরাসরি বাবুবাজার সড়ক দিয়ে বুড়িগঙ্গায় নিয়ে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ, আগামী ৩০ বছরেও সেখানে আর জলাবদ্ধতা হবে না।
একইভাবে শিক্ষা বোর্ডের সামনে গতবছর আমরা জলাবদ্ধতা পেয়েছি। সেখানেও দেখলাম, শিক্ষা বোর্ড বকশিবাজার হতে আজিমপুর হয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সেটা সরাসরি বকশিবাজার হতে চকবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। কারণ, স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী নিকটবর্তী স্থান দিয়েই পানি নিষ্কাশন হবে। কিন্তু দূরবর্তী স্থান দিয়ে নিয়ে যাওয়া হলে তা ধীর হয়ে যায়। আর যত ধীর হবে তত বেশি জলাবদ্ধতা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এরকম অনেক অসঙ্গতি আমাদেরকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে এবং ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতা মুক্ত নগরী উপহার দিতে আমরা সেটা করে চলেছি।
প্র্রভাত/টুর