প্রভাত রিপোর্ট : কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছিলেন বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান অবরোধ করেন তারা। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে, ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী।
রোববার (৭ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে যানজট ও ভোগান্তির এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে শাহবাগ অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধ শুরু হলে তীব্র যানজট শুরু হয়।
এদিন সরেজমিনে বাংলামোটর-শাহবাগ, শাহবাগ-সায়েন্সল্যাব, শাহবাগ-মৎ্স্যভবন সড়কে তীব্র যানজট চোখে পড়ে। এসব সড়কে যান চলাচল প্রায় থেমে ছিল। এছাড়াও নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকা ও চাঁনখারপুল মোড় অবরোধের কারণে হানিফ ফ্লাইওভারে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। দীর্ঘসময় বন্ধ থাকে যান চলাচল। ঢাকায় প্রবেশ করতে পারে না ঢাকার বাইরের গাড়িগুলো।
অবরোধের কারণে হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, কমলাপুর, রামপুরা, হাতিরঝিল, নারায়ণগঞ্জ, পোস্তগোলা, পাগলা, ডেমরা স্টাফ-কোয়ার্টার, চিটাগাং রোড, শনির আখড়া, সাইনবোর্ড এলাকায় যান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।
এর আগে দুপুরের দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করলে ওই এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এসময় ধানমন্ডি ও মিরপুর রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসব এলাকায় যানজটের কারণে পল্টন, মালিবাগ, মগবাজার, রামপুরা এলাকার সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে মোটরসাইকেল ও রিকশাচালকরা প্রধান সড়ক এড়িয়ে অলিগলির পথ বেছে নেন।
এদিকে তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী, বিশেষ করে অফিসফেরত যাত্রীরা। যানজটের কারণে অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। তারা জানিয়েছেন, যানজটের কারণে বাস চলাচল করতে পারছে না। ফলে সময়মতো নির্দিষ্ট রুটের বাস পাওয়া যাচ্ছে না। গাড়ি পেলেও তীব্র যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এক জায়গায় বসে থাকতে হচ্ছে।
আজিমপুর থেকে মিরপুর-১২ নম্বরে যাওয়ার জন্য সায়েন্সল্যাবে অপেক্ষা করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মতিউর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অফিস থেকে বের হয়ে দেখি রাস্তায় আন্দোলন। গাড়ি চলছে না। এরপর হেঁটে হেঁটে সায়েন্সল্যাব পর্যন্ত এসেছি। এদিকে এসেও বাস পাচ্ছি না। সিএনজি অটোরিকশাও কম, যেগুলো আছে তারাও বেশি ভাড়া চাচ্ছেন। হঠাৎ এমন ভোগান্তিতে পড়ে বাসায় কখন পৌঁছাবো জানি না।’
পল্টন মোড়ে কথা হয় জিসান শাহের সঙ্গে হয়। তিনি বলেন, ‘এমনিতেই রাজধানীতে যানজট থাকে। আজ আন্দোলনের কারণে সবদিকে রাস্তা ব্লক। এ কারণে কিছুটা পথ হেঁটে, কিছুটা রিকশায় গন্তব্যে যাচ্ছি। মোহাম্মদপুর যাবো। এমন অবস্থায় গাড়িও পাচ্ছি না।’
এদিন দুপুর থেকে সৃষ্টি হওয়া যানজট নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রোববার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা ও কোটা বাতিলের আন্দোলন কেন্দ্র করে আগে থেকেই রাজধানীতে যানজটের আশঙ্কা করে পুলিশ। এজন্য সকাল থেকেই নগরবাসীকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সময় হাতে নিয়ে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।
যানজটের বিষয়ে ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জয়নাল আবেদীন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা এদিন সকালেই নগরবাসীকে যানজটের বিষয়ে সতর্ক করেছি। দুপুর থেকে শাহবাগ মোড়ে যানজট সৃষ্টি হলে আমরা যানবাহনগুলোকে বিকল্প পথে ঘুরিয়ে দিয়েছি। এভাবে পান্থপথ, বাংলামোটরসহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ট্রাফিক সদস্যরা কাজ করছেন। নগরবাসীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে বুদ্ধি ও পরামর্শ দিয়েছি।’
প্রভাত/টুর