নাসির আহমেদ,দশমিনা : পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলার জেলে পল্লীর জেলে পরিবারগুলো দাদন আর ঋণের ফাঁদে বন্দী হয়ে আছে। উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা মাছ শিকার করতে নেমে তেমন মাছ পাচ্ছে না। সামান্য মাছ পেলেও সেগুলো বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে সংসার ও ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে জেলে পল্লীর বাসিন্দারা দাদন আর ঋণের বেড়াজালে বন্দী হয়ে পড়েছে। সরকারের ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় চাল বিতরন করা হলেও ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করা জেলেদের ওপর ভয়াবহ বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। একদিকে সংসার অন্যদিকে ঋণের টাকা জোগার করতে এবং মহাজনদের চাপে পড়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দিন রাত মাছ শিকার করছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা তেঁতুলিয়া নদীতে না নামতে পারলেও ঋণের কিস্তি থেকে জেলেদের রেহাই ছিল না। আর কিস্তি পরিশোধের জন্য বাধ্য হয়েই অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আধারে মাছ শিকার করেছে। মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের নিষেধাজ্ঞা সফল হয়েছে। অবরোধের সময় ব্যাংক ও এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ না থাকায় জেলেরা চাপের মধ্যে পড়েছে। উপজেলার বাশঁবাড়িয়া গ্রামের শাহ আলম খা, ঢনঢনিয়া গ্রামের লাল মিয়াসহ একাধিক জেলে জানান, বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে তারা ঋণ নেন। ঋণের টাকা দিয়ে জাল ও নৌকা তৈরি করেছে। মাছ বিক্রি করে ঐ ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। অবরোধের সময় জেলেরা চরম বেকার থাকেন।
উপজেলার ১০ হাজার ১৭১ জন জেলের মধ্যে অধিকাংশ জেলে পরিবারের সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। একদিকে মানবেতর জীবনযাপন অন্যদিকে ব্যাংক ও এনজিওর নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ এই দুই মিলিয়ে জেলেদের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দিন কাটাতে হচ্ছে। কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে চলে মানসিক নির্যাতন। তাই বাধ্য হয়ে জেলেরা ঝড় ও বন্যা উপেক্ষা করেই নদীতে মাছ শিকারে যায়। উপজেলার দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের জেলে জাকির বলেন, সময় মত কিস্তি দিতে না পারলে আর ঋণ পাবো না। সুদ ও কিস্তির কারণে সংসারে অশান্তি লেগেই আছে। কাজেই অনিচ্ছায় হলেও বিকল্প কোনো পথ না থাকায় সরকারি আইন উপেক্ষা করেই চরম ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামতে হয়। আর সেই মাছ বিক্রি করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে থাকি। স্থানীয়রা জানান, সরকারের উচিত এই সময় জেলেদের কিস্তি পরিশোধের শর্ত শিথিল করে দেয়া। তারা যেনো কোনো হয়রানি ছাড়া ঋণ পান তার ব্যবস্থা করা।
উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা আশানারূপ ইলিশসহ অন্যান্য মাছ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে। প্রধান এই দুইটি নদীতে মাছ না পেয়ে জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই সুযোগে দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের দাদনের টাকার জন্য জেলেদেরকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। উপজেলার জেলে পল্লী হিসাবে খ্যাত উপকূলীয় এলাকা বাঁশবাড়িয়া, হাজীরহাট, গোলখালী, আউলিয়াপুর, রনগোপালদী ও আলীপুরা এলাকায় এখন জেলেদের মধ্যে দাদন ব্যবসায়ীদের কারনে ভীতি বিরাজ করছে। এদিকে উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা জাল ফেলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কম পেয়ে হতাশ হয়ে তীরে ফিরে আসছে। উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা জাল ফেলে ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মাছ কম পাবার কারনে হতাশ হয়ে তীরে ফিরে আসছে। ভরা মৌসুমেও কাংখিত মাছ না পেয়ে জেলেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী সমিতির উপজেলা সভাপতি মহাসিন জোমাদ্দার বলেন, অবরোধের দিনগুলো উপজেলার জেলেরা ধার দেনা, বসত বাড়ির গাছ বিক্রি ও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান ও কিস্তির টাকা পরিশোধ করেন। তাই ব্যাংক ও এনজিও ঋণের কিস্তি আদায়ের সময় একটু সহানুভুতি থাকা প্রয়োজন। ব্যাংক ও এনজিও থেকে জেলেদের নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য বাড়তি সময় দেয়া দরকার। তবে মানবিক কারণে ঋণের কিস্তি আদায় শিথিলযোগ্য করা হলে জেলেরা খুব উপকৃত হতো।
প্রভাত/টুর