শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

ভ্যাপসা গরমে বেড়েছে লোডশেডিং 

প্রকাশিত - ১১ জুলাই, ২০২৪   ১১:৫৪ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : দেশে জ্বালানি ঘাটতি এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসে আছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ১৩২ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং ৪ হাজার ৯৭১ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র জ্বালানির ঘাটতির জন্য উৎপাদনে নেই। আবার বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না পেয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর নির্ভর করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপন্ন করছে। গত এক মাসে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ও লোডশেডিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ১ থেকে ৮ জুন সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৫ মেগাওয়াট। বিপরীতে এই আটদিনে লোডশেডিং দিতে হয়েছে ৩ হাজার ৮৮ মেগাওয়াট। এর পরের আটদিন অর্থাৎ গত ৯ থেকে ১৬ জুন সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলে ১ লাখ ১৪ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং দিতে হয়েছে ২ হাজার ১৩৫ মেগাওয়াট।
এদিকে ভ্যাপসা গরমে কেটেছে প্রায় গোটা জুন মাস। এসময় দেশজুড়ে বিদ্যুতের চাহিদাও ছিল বেশি। ঢাকার বাইরে পাল্লা দিয়ে বেড়েছিল লোডশেডিং। বর্ষা শুরু হওয়ায় এখন বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক কম। তবে লোডশেডিং কমেনি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসসহ প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংকট রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও বন্ধ রয়েছে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। ফলে চাহিদা অনুপাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবির তথ্য বলছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আগে পিডিবিকে প্রতিদিন প্রায় ১৩শ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হতো। ঝড়ে একটি স্টোরেজ ও রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে। বর্তমানে সরবরাহ দাঁড়িয়েছে ৯৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে। ৭০টি গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ৩৬টিকে অলস বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। এতে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। গ্যাসচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু রাখতে হলে প্রতিদিন অন্তত ১৯শ ৫৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রয়োজন।
গত ১৭ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত এই আটদিনে সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৯৮ হাজার ৪৬৩ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে লোডশেডিং দিতে হয়েছে ১ হাজার ৪৬৭ মেগাওয়াট। ২৫ জুন থেকে ২ জুলাই সারাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ১১০ মেগাওয়াট। এই চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং দিতে হয়েছে ৪ হাজার ৩০২ মেগাওয়াট।
পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন বলেন, ‘একটি এফএসআরইউ না থাকায় কিছুটা গ্যাস সংকট আছে। এজন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। তারপরও আমরা যতটুকু পাচ্ছি দিচ্ছি। এখন সিরিয়াস সমস্যা নেই, আবহাওয়া অনুকূলে আছে। এফএসআরইউ এলে আশা করছি সংকট কেটে যাবে।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন না হলে লোডশেডিং তো হবেই। জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না। জ্বালানি কেনার মতো টাকা নেই। কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা দিতে হবে, তরল জ্বালানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে তরল জ্বালানি দিতে হবে, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস দিতে হবে। এগুলো আনতে পারছে না বলেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। এটাকে সক্ষমতা থাকা বলে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক, জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন বলেন, আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু জ্বালানির জোগান নিশ্চিত না করে আমরা এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি। যেহেতু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো করা হয়েছে এবং সেগুলোর একটা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে, এর কারণ ভুল পরিকল্পনা। এর মধ্যে ডলার সংকট সংযোজন হয়েছে। আবার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের টাকারও সংকট আছে। কারণ আগের বছর থেকে তাদের অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। আমরা এখন অত্যন্ত কঠিন একটা অবস্থার মধ্যে নিজেদের ফেলে দিয়েছি। এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, গ্যাসের অভাবে একদিকে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, আবার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। এখন গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে গেলে কারখানার অবস্থা আরও খারাপ হবে। আবার কারখানায় আরও বেশি গ্যাস দিতে গেলে লোডশেডিং আরও বেশি বেড়ে যাবে। অভাবের সংসার যেভাবে চলে সেভাবে ব্যালেন্স করে চলছে।’

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন