শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo
পাইকার ও উৎপাদনকারী একে অন্যকে দুষছেন

বাড়ছে ভোজ্যতেলের দাম

প্রকাশিত - ১৩ জুলাই, ২০২৪   ১০:১৩ পিএম
webnews24

আরাফাত দাড়িয়া  : মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে আবারো ভোজ্যতেলের দাম বাড়তে যাচ্ছে তেল রিফাইনারি অ্যাসোসিয়েশন। নতুন দাম বাড়ানোর প্রস্তাব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশন পরীক্ষা করে দেখছে। পর্যালোচনা করছে আন্তর্জাতিক বাজার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুব শীঘ্রই মূল্য বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানা গেছে। দাম বাড়ানো হলে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন সাধারণ মানুষ। 
এর আগে রিফাইনারি অ্যাসেসিয়েশন গত এপ্রিলের মাঝামাঝিতে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়ে ছিল।  নতুন করে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে তারা তুলে ধরেছেন আন্তর্জাতিক বাজার ও ডলারের দাম বৃদ্ধি। উল্লেখ্য, বর্তমানে এক লিটার ভোজ্যতেলের দাম পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ টাকা যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। দাম বাড়লে ক্রেতাদের কিনতে হবে এক লিটার সয়াবিন তেল পাইকারিতে ১৮০ টাকা এবং খুচরা বাজারে প্রায় ২০০ টাকা। 
জানা গেছে, গত সপ্তাহে মিল মালিক সমিতি ট্যারিফ কমিশনের কাছে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেশ করেছে। সেখানে বিশ্ববাজারের কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। প্রস্তাবটি এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টেবিলে ঘুরছে। এই প্রসংগে ম্যানুফেকচারের অন্যতম কর্ণধার সিটি গ্রুপের জিএম বিশ্বজিৎ সাহা দৈনিক প্রভাতকে বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি দাম বাড়ানোর। তবে শুধু ভোজ্যতেল নয়, আদা ময়দা থেকে শুরু করে অনেক পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য বলা হয়েছে। এখন সরকার যদি সম্মতি দেয় তবেই দাম বাড়ানো হবে। সরকার না চাইলে কিছুই হবেনা।’
প্রশ্ন হচ্ছে মাত্র আড়াই মাসের মাথায় হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি কেন? এর উত্তরে সিটি গ্রুপের জিএম বলেন, ‘আসলে আন্তর্জাতিক বাজারের অবস্থা ভালো না। আমরা কয়েকদিন আগেও ডলার কিনতে পেরেছি ১১১ টাকায়, সেই ডলার এখন কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে রিফাইনারি জিনিসগুলোর দাম বেড়েছে। আমরা সবকিছু হিসেব করে, কাগজে কলমে সবকিছু সরকারের কাছে তুলে ধরেছি। আমাদের ব্যবসায়ে ক্ষতির বিষয়টিও তুলে ধরেছি। সরকার যদি দাম বাড়ানোর কথা বলে তবেই আমরা বাড়াবো। আসলে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের হাতে নেই।’ 
এদিকে গত এপ্রিলে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিলো লিটারে ১০ টাকা। অথচ, বিশ্ববাজারে এর আগে থেকেই তেলের দাম কম ছিলো। ম্যানুফেকচারারস সমিতি তখনো ডলার ও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়ের কাছে। উদাহরস্বরূপ বলা যায়, প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে গত নভেম্বরে ছিলো ১ হাজার ১১৮ ডলার। গত মার্চে সেই দাম এসে দাঁড়ায় ৯১০ ডলারে। কিন্তু তখনো অযুহাত টেনে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। অথচ, বিশ্ববাজারে এখনো তেলের দামে নেই কোন অস্থিরতা। বরং, আন্তর্জাতিক থেকে দেশীয় বাজারই চড়া বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ম্যানুফেকচারি সমিতির এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করলেন পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী। 
সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা এ প্রসংগে তিনি দৈনিক প্রভাতকে বলেন, ‘আসলে দাম বাড়ানোর বিষয়ে আমরা তেমন কিছু জানিনা। যারা ম্যানুফেকচারার তারাই আসলে এই প্রস্তাব করেছেন। আসলে প্রতি দুই মাস অন্তর বিশ্ববাজার যাচাই করে ট্যারিফ কমিশন। রিফাইনারি যারা করেন তাদের সাথে বসেপর্যালোচনার করে থাকেন কমিশন। এরপর উৎপাদন খরচ দেখে যদি মনে করে বাড়াতে হবে তবেই সিদ্ধান্ত নেয়।’ বারবার এই সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোটা কতটা যৌক্তিক? এর উত্তরে মাওলা বলেন, যদি আমি ব্যক্তিগতভাবে বলি, তবে বলবো এটা ঠিক হবেনা। দাম না বাড়ানোর পক্ষে আমি। কারণ, এখন লোকজনের কাছে টাকা নেই। বাজারে গিয়ে আগের মতো কিছু কিনতেও পারছেন না ক্রেতারা। আসলে টাকা এখন বাংলাদেশের দুই শ্রেণীর কাছে আছে। ব্যবসায়ী এবং আমলাদের কাছে রয়েছে ফ্লুয়েড মানি। আমি মনে করি সরকারের উচিৎ হবে সব বিবেচনা করে ভোজ্যতেলের না দাম বাড়ানো উচিৎ।’ 
এদিকে গতকাল শনিবার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেলো, পাইকারি ও খুচরা সব ধরণের পণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। বিশেষ করে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও অসন্তোষ হতে দেখা গেছে। রায়হানুল ইসলাম নামের একজন চাকরিজীবি ক্ষোভের সাথে বললেন, ‘যদি আবারো ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে আমরা কি না খেয়ে থাকবো? সরকার কি আমাদের কথা চিন্তা করবে না? পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের যন্ত্রনায় আর টেকা যাচ্ছে না।’ 
এই ক্রেতাদের কথার বিরোধিতা করলেন পাইকারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা। তিনি বলেন, ‘দেখেন বললে তো অনেক কথাই বলতে হয়। দাম বাড়িয়ে লাভবান হচ্ছে উৎপাদনকারী কিন্তু দোষ পড়ে আমাদের। আমাদের কি দোষ বলেন, আমরা যা কিনে আনি তাই বিক্রি করি। আমাদের তো তেমন কোন লাভ হয়না।’ 
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন