এস এম আবুল হোসেন : সংস্কার হতে পারে কোটা পদ্ধতি। সরকারের নীতি নির্ধারকরা বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় রেখে কর্ম পদ্ধতি নির্ধারণ করছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুন্ন রেখে কোটা পদ্ধতি সংস্কার হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। নিবার্হী আদেশেই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা হবে বলে সরকারে থাকা একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়। তবে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট থেকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার কোটা পদ্ধতি সংস্কার করতে পারবেনা। চাকরি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সাবেক কর্মকর্তা বলেন, কোটার বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। তবে তারা মনে করেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পুরোপুরি বাতিল না করে সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংস্কার করা উচিত।
ধারণা করা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ করা হতে পারে। এমনকি জেলা কোঠার সাথে সমন্বয় করেও মুক্তিযোদ্ধা কোটা নির্ধারণ করা হতে পারে বলে একটি সূত্র জানায়। কাটা পদ্ধতিতে সংস্কার আনার পক্ষে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন এবং সরকারের নীতি নির্ধারণী মহলের অনেকেই। এর আগেও কোটা সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপদ্ধতি সংস্কার নিয়ে আন্দোলন ও নানা ধরনের আলোচনা চলছে। তবে এখন থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) কোটা সংস্কার বা কোটা প্রয়োগের পদ্ধতি সহজ করার সুপারিশ করেছিল। যদিও ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের একপর্যায়ে ওই বছর নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করা হয়।
কোটা প্রয়োগের পদ্ধতির ওপর বিস্তারিত পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ শেষে কোটা প্রয়োগের পদ্ধতি সহজ করার বিষয়ে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে সরকারের কাছে কিছু সুপারিশ করেছিল পিএসসি। ওই সুপারিশের মধ্যে ছিল মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অগ্রাধিকার কোটাগুলো জাতীয় পর্যায়ে বণ্টন করা যেতে পারে। অর্থাৎ ওই কোটাগুলোকে পুনরায় জেলা বা বিভাগ ভিত্তিক ভাগ করা যাবে না বা জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্য পদের সর্বোচ্চ সংখ্যা দিয়ে সীমিত করা যাবে না। এ ধরনের কোটার পদগুলো জাতীয়ভিত্তিক নিজস্ব মেধাক্রম অনুযায়ী ওই কোটায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা যেতে পারে।
পিএসসির ২০১৫ সালে কোটা প্রয়োগের পদ্ধতি সহজ করার সুপারিশ করেছিণ। এক প্রতিবেদনে আর বলা হয়েছিল, কোটাপদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। প্রার্থীদের বিভিন্ন ক্যাডারের চাকরির পছন্দক্রম এবং কোটার সঙ্গে বিভিন্ন জেলা বা বিভাগের জন্য আরোপিত সংখ্যাগত সীমারেখা সংযুক্ত হয়ে এমন একটি বহুমাত্রিক সমীকরণ কাঠামোর সৃষ্টি করেছে, যার নির্ভুল সমাধান নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মানবীয়ভাবে প্রায় অসম্ভব। এ জন্য পিএসসি বলেছিল, কম সময়ে ও সুচারু এবং নির্ভুলভাবে বিসিএস পরীক্ষাসহ নন-ক্যাডারে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা প্রয়োগের পদ্ধতি সহজ করা একান্ত আবশ্যক। অন্যথায় কোটা প্রয়োগসংশ্লিষ্ট জটিলতা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। পিএসসির ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনেও একই ধরনের সুপারিশ করা হয়েছিল।পিএসসির তথ্যমতে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরির ২০ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হতো। বাকি ৮০ শতাংশ পদে নিয়োগ হতো কোটায়। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। ১৯৮৫ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে ৪৫ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের নিয়ম চালু করা হয়। বাকি ৫৫ শতাংশ অগ্রাধিকার কোটায় নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ যোগ করে মোট কোটা দাঁড়ায় ৫৬ শতাংশ। বাছাই, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করার পর কোটা বিবেচনা করার নিয়ম। একসময় কোটার অনেক পদ শূন্য থাকত।