রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo
আন্দোলনকারী-ছাত্রলীগ সংঘর্ষে দুই শতাধিক আহত 

ক্যাম্পাস রণক্ষেত্র

প্রকাশিত - ১৬ জুলাই, ২০২৪   ১২:২৮ এএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে রক্তাক্ত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। দুপক্ষের হামলা পাল্টা হামলায় দুই শতাধিক আহত হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৪জনকে। ইটপাটকেল ও লাঠির আঘাতে আহতরা হলেন মাহমুদুল হাসান (২৩), একুশে হলের ইয়াকুব (২১), শহীদুল্লাহ হলের রাকিব (২৪) ও মাসুদ (২৩)। 
রবিবার দিবাগত রাতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলে এমন কিছু শ্লোগান দেয়া হয় যা নিয়ে দেশব্যপী মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিভক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি। একই স্থানে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সমাবেশ আহবান করায় সকাল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে সকাল থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল টিএসসি এলাকায় প্রায় এক ঘণ্টার সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার পর কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের তাড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ  নেয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন হলের দিকে যায়। বিজয় একাত্তর হলে গিয়ে তারা গেটে প্রবেশ করতে চাইলে হল ছাত্রলীগ তাদের বাধা দেয়। তখন আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। এ সময় দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলতে থাকে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন হল থেকে এসে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় যোগ দেন। এতে আন্দোলনকারীরা ভিসি চত্বর দিয়ে ফুলার রোড হয়ে শহীদ মিনারে দিকে চলে যায়। এ ঘটনার পর বেলা সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাসের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় ছাত্রলীগ। 
বিকেলের দিকে হকি স্টিক, লাঠি, বাঁশসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাম্পাসে আসেন যুবলীগরে নেতাকর্মীরা। এরপর আসেন দুই মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে রাজু ভাস্কর্যে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। এ সময় বিভিন্ন দলীয় ও দেশাত্মবোধক গান বাজাতে দেখা যায় তাদের।
রবিবার রাত থেকেই ক্যাম্পাসে উত্তেজনা চলছিল। কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা মধ্যরাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। এসময় ছাত্রলীগও সতর্ক অবস্থান নিয়েছিল। পরে দুই পক্ষই রাতে নিজ নিজ ঠিকানায় ফিরে যায়। তবে সোমবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে চলছিল থমথমে পরিস্থিতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ও ছাত্রলীগ। বেলা সোয়া ১২টা থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। পরে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে হল পাড়ায় দিকে যান। বিজয় একাত্তর হলের সামনে ইট-পাটকেল ও লাঠির আঘাতে আহত হন মাহমুদুল হাসান (২৩), একুশে হলের ইয়াকুব (২১), শহীদুল্লাহ হলের রাকিব (২৪) ও মাসুদ (২৩)। তারা সবাই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল, জিয়াউর রহমান হল, বিজয় একাত্তর ও জসীমউদদীন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর একসঙ্গে হামলা করে। হলপাড়ায় থেমে থেমে মারামারি, ইটপাটকেল নিক্ষেপ চলছে।
এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগের পাশাপাশি যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের জড়ো হতে দেখা যায়। এছাড়া মহানগর ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে।
বিজয় একাত্তর হলের সামনে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয় আসিফ মাহমুদ লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ছাত্রলীগের হামলায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এছাড়া হলপাড়ায়, রেজিস্ট্রার ভবন, এসএম হল ও টিএসসিতে আটকে আছেন নারী শিক্ষার্থীরা। 
পরবর্তীতে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল এলাকায় । সন্ধ্যা সোয়া ৬টা নাগাদ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শহীদুল্লাহ হল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জার ইনস্টিটিউট এলাকায়।

সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মী এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে শহীদুল্লাহ হলের সামনের এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্য অংশে যখন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা অবস্থান করছিল তখন শহীদুল্লাহ হল এলাকায় সংঘর্ষ চলছিল।সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় দোয়েল চত্বরে দেখা যায়, শহীদুল্লাহ হলের ছাদ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এ কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সামনে এগোতে পারছেন না। যদিও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা দোয়েল চত্বরে জড়ো হচ্ছেন। সে সময় ওই এলাকায় পুলিশ সদস্যদের দেখা যায়নি। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে সেখানে পুলিশ সদস্যরা আসেন।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের হাসপাতাল চত্বর থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকেলে আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। চিকিৎসা শেষে বের হতে চাইলেও তাদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ঢামেক ও বার্ন ইউনিটের সামনে ছাত্রলীগের কর্মীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ফলে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লিমন জানান, আমার কয়েকজন বন্ধু আহত হওয়ায় তাদের ঢামেকে এনেছি। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে কিন্তু বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালের সামনে ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছে। ফলে পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ছাড়া আহত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ইডেন কলেজের ভেতরে ছাত্রলীগের হামলায় ছয় ছাত্রী আহত হন। রাজু ভাস্কর্য, দোয়েল চত্বর, জিয়া হল, শহীদুল্লাহ হল, ৭১ হলেও ছাত্রলীগের কর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। আহতদের বেশিরভাগ মাথায় আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন।
ঢামেকে আসা আহতরা হলেনÍ সায়মা, তামান্না, ফাহমিদা, এসকায়া, মাহমুদুল হাসান, ইয়াকুব, নাজিব, মাসুদ, জাহিদ, সাখাওয়াত, সায়মন, সাকিব, ইভা, ইমরান, কাজি তাসনিম, সাকিল, ইভা, ফাহিম, এনামুল, শাকিল, হামজা, রিফাদ রশিদ, জহির, তিশা, রানা, সুজন, সাখাওয়াত, রফিক, সীমা, ইমু, ইসরাত, জুয়েল, জুবেল, লিখন, সাজ্জাদ, আভানা, নাঈম, সাব্বির, রায়হান, কাইয়ুম, মেঘ বাসু, সাকিব, ফাহিম, আহসানুল্লাহ, লাবিব, তানভীর, ফাহমিদুল, রেয়োম, শাকিল, প্রিয়া, সাব্বির, মাসুম, ফাহিন, ইমন, আবু যাহেদ, শুভ, সাকিব, মাহবুব, জুনায়েত, মুরাদ, মেহেদী আসাদুল্লাহ, খোকন, উজ্জ্বল, অরপি, ইতি,রাফিম, সিয়াম, অমি, জামিয়া, সুমন, রিজভী, আবিদ ও তরিকুল। এছাড়াও চিকিৎসা নিতে আসা পাঁচজন শিক্ষার্থীর নাম জানা যায়নি।
রবিবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে জড়ো হন। একইস্থানে বিকেল ৩টায় বিক্ষোভ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল ছাত্রলীগ। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ভিসি চত্বরের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এতে অন্তত ৮০ জন আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছে বলে জানা গেছে।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন