শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Proval Logo

আদালতে উঠছে বেনজীর-মতিউরের মামলা

প্রকাশিত - ২৭ জুলাই, ২০২৪   ০৯:৩১ পিএম
webnews24

আরাফাত দাড়িয়া : কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে অনেকটা আড়াল হয়ে গেছে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের দুর্নীতি কান্ড। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা চাঞ্চল্যকর এই দুটি মামলা এখনো আদালতে পৌঁছায়নি। ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে গোটা দেশ সাময়িক স্থবির হয়ে পড়েছিলো। দুদকও মামলা দুটি নিয়ে তেমন কাজ করতে পারেনি। তবে দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশিদ আলম জানালেন, এই সপ্তাহের মধ্যে মামলা দুটি আদালতে পাঠানো হবে। তদন্তকালে এই দুইজনের দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছে বলেও দুদক জানিয়েছে। অনুসন্ধানের অগ্রগতি দৃশ্যমানও হবে এই সপ্তাহের মধ্যে জানালেন এই আইনজীবী। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী ও দুই কন্যার বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিপুল অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে দুদক। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করতে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব জমা দিতে নোটিশ দিয়েছিলো দুদক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ বিদেশে অর্থ পাচারেরও তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। হুন্ডির পাশাপাশি আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল অর্থ পাচারের তথ্য রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। এসব বিষয় নিশ্চিত হতে মতিউর রহমান, তার দুই স্ত্রী ও প্রথম পক্ষের ছেলেমেয়ের সম্পদের হিসাব চেয়েছিলো অনুসন্ধান কর্মকর্তা। তাই আন্দোলনের কারণে দুর্নীতির এই মামলা দুটি হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানালেন  দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম। তিনি এ প্রসংগে এ প্রসংগে বলেন, ‘আদালত যখন আদেশ দিয়ে সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দেন, তখন আপনার ভাবতে হবে দুদক যে তথ্য উপাত্ত পেয়েছে তার প্রাথমিক সত্যতা আছে। তবে বেনজীর ও মতিউর ছাড়াও আরো অনেকে আছে। যে কোন কিছু হারিয়ে যাওয়া কিংবা ধামাচাপা দেয়ার কোন সুযোগ নেই। 
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ দেশে না থাকা দুদকও পূর্ণাঙ্গ কোন রিপোর্ট দিতে পারেনি। তবে জানা গেছে, প্রাথমিক যে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে তাতে বিচারকার্য শুরু করতে সমস্যা নেই। তাছাড়া বিচারকার্য শুরু হলে দ্রুত এটি সম্পাদনও হবে বলে মনে করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম। তিনি বলেন, ‘বেনজীরের অনুসন্ধানের বিষয়ে হাইকোর্ট যে নির্দেশনা দিয়েছেন সেই অগগ্রতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন একটি রিপোর্ট পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্টটা দাখিল করার জন্য আমরা প্রগ্রেসিভ রিপোর্ট তৈরি করেছি। পূর্ণাঙ্গ যদি কর্মদিবস পায় তাহলে কাজের গতি আরো বাড়বে।’ জানা গেছে, দুদক বেনজীর আহমেদ ও মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে সম্পদের যে নোটিশ জারি করেছে তা জমা দেয়ার দিন শেষ। সম্পত্তির বিবরনী নোটিশ পাঠানোর পর অভিযুক্ত ব্যক্তি ২১ দিনের সময় পান। সেই সময়ে জমা না দিলে আরো ১৫ দিন সময় পাবেন সেই ব্যক্তি। তবে তাকে প্রথম ২১ দিনের মধ্যে সময় চাইতে হবে। নইলে দুদক আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে বলে জানা গেছে। কিন্তু দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে এখনো বেনজীর ও মতিউর তাদের সম্পত্তির বিবরনী জমা দেননি। আর ছাত্র আন্দোলন, সাধারণ ছুটি এবং কারফিউর কারণে দুদকও এদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা বলে জানিয়েছে দুর্নীতির এই সংস্থাটি। 
গত মে মাসে বিপুল সম্পদের পাহাড় গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে আলোচনায় আসেন পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। এরপর ঈদ উল আযহার সময় ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনায় এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের ছেলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হোন। পরে অনুসন্ধানে জানা গেছে দুইজনই খুব অল্প সময়ে অঢেল সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। গত ২৩ মে বেনজীর আহমেদের ৮৩টি দলিলের সম্পত্তি ও ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেন আদালত। এরপর ২৬ মে আদালত বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আরও ১১৯টি জমির দলিল, ২৩টি কোম্পানির শেয়ার ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন। বেনজীর ও তার স্ত্রী সন্তানকে ২৩ ও ২৪ জুন দুদকে হাজির হতে নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা হাজির না হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযোগের লিখিত বক্তব্য জমা দেন। মতিউরের বিষয়ে সবার নজরে আসার পরই দুদক অনুসন্ধানে মাঠে নামে। অনুসন্ধানে দেশে ও বিদেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদের অনুসন্ধান পায় দুদক। দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, খুব শীঘ্রই প্রতিবেদন দাখিল করে দুর্নীতির সাথে জড়িত আরো অনেকের অনুসন্ধানে নামবে তারা। ইতোমধ্যে কয়েকটি অনুসন্ধানী টিমও গঠন করেছে বলে জানা গেছে। ছাত্রদের আন্দোলনের কারণে দেরি হলেও সব দুর্নীতি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছে দুদক। 
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
স্ত্রী ও সন্তানদের তলব