প্রভাত রিপোর্ট : কোটা আন্দোলন চলাকালীন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে একজন নেতা চার লাখ টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। সেই টাকা কাকে, কীভাবে, কী জন্য খরচ করা হয়েছে সেসব বিষয় জানার চেষ্টা করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা) পুলিশ।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, নুরকে আমরা রিমান্ডে নিয়েছিলাম। তার কাছ থেকে অনেক তথ্য পেয়েছি। সেই তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নুর একটা কথা স্বীকার করেছেন। আন্দোলনের সময়ে একজন নেতা তাকে চার লাখ টাকা দিয়েছেন। আমরা সেই নেতাকেও নিয়ে এসেছি। তিনি চার লাখ টাকা নুরকে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। কী জন্য সেই নেতা নুরকে টাকা দিয়েছেন, সেসব বিষয়ে ওই নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কোটা আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে ডিজিটাল যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির সভাপতি (বিজেপি) ও সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন আমাদের কাছে। তার কাছ থেকে কিছু বিষয় জানার চেষ্টা চলছে বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
এর আগে ২৬ জুলাই পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর আগে গত ২১ জুলাই তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এদিকে ২৫ জুলাই সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে পার্থকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামসহ তিন জনকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সমন্বয়কদের হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে মুখ খুলছেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওই তিন জনকে হেফাজতে নেওয়ার কারণ জানান তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং অপর দুই সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে আমরা শুক্রবার দিবাগত রাতে নিয়ে এসেছি। তারা বিভিন্ন জায়গা, ফেসবুকে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছিলেন। তাদের একজনের বাবাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বিভিন্ন জায়গা বলেছেন। আমরা মনে করি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে কেউ যদি কোথাও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে, আমাদের দায়িত্ব তাদের নিরাপত্তা দেওয়া। তাদের ক্ষেত্রে আমরা সেটাই করছি।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং আরও কিছু নেতাকে আমরা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসা করেছি, তারা বলেছেন, সমন্বয়কদের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তাদের কী কথা হয়েছে, এগুলো জানার জন্য আমরা তাদের কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করবো। পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তা দেবো। এর আগে, ২৬ জুলাই হাসপাতালে থাকা নাহিদের স্বজনরা জানান, ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে একদল লোক এসে প্রথমে নাহিদকে তুলে নিয়ে যায়। পরে আসিফ ও বাকেরকে তুলে নেয়।
এই তিন জনকে এর আগেও একবার তুলে নেওয়া হয়েছিল। গত ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া থেকে নাহিদকে তুলে নেওয়া হয়। ২১ জুলাই ভোরে পূর্বাচল এলাকায় ফেলে যাওয়া হয় তাকে। এর পর থেকে তিনি গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আসিফ ও বাকেরকেও ১৯ জুলাই তুলে নেওয়া হয়েছিল। পাঁচ দিন পর ২৪ জুলাই আসিফকে হাতিরঝিল ও বাকেরকে ধানমন্ডি এলাকায় ফেলে যাওয়া হয়। এর পর থেকে আসিফও গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। হাসপাতালে তার সঙ্গে ছিলেন বাকের। তারা তিন জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।