বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

সমন্বয়হীনতায় ত্রাণ যাচ্ছে না প্রত্যন্ত এলাকায়

প্রকাশিত - ২৮ আগস্ট, ২০২৪   ০৯:১৮ পিএম
webnews24

প্রভাত রিপোর্ট : পর্যাপ্ত ত্রাণ থাকার পরও শুধু মাত্র সমন্বয়হীনতার অভাবে বন্যাদুর্গতদের সবার কাছে সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বন্যাকবলিত ব্যক্তিরা। বন্যাকবলিত মানুষের অভিযোগ, সড়কের পাশের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষজন একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। মূলত ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হযেছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় চলমান বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার এই ৪ জেলার বানভাসি মানুষ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এসব জেলায় পানি নামছে ধীরগতিতে। ত্রাণ বিতরণের সাথে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবীদের মতে, সবাই উঁচু সড়ক ধরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। যে যার মতো করে ত্রাণ দিচ্ছেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানভাসি মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছায়নি। ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের সমন্বয়ের তাগিদ দেন তারা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজারসহ ১১টি জেলার ৫৬ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য এসব জেলায় ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও গোখাদ্যের জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফেনীর ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজীর ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। এসব এলাকায় গত দুই দিনে পানি কিছুটা কমেছে। বুকসমান পানি নেমে এসেছে হাঁটুতে।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যায় আট লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দেড় লাখ মানুষ জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়। আবার অনেকেই প্রতিবেশীর দোতলা ও তিনতলার বাড়িতে গিয়ে উঠেছে। এসব জায়গায় দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ত্রাণ এসেছে। কিন্তু সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গত সবার কাছে তা পৌঁছায়নি। গত পাঁচ দিনে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬২ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা হেলিকপ্টারে ৩৮ হাজার খাবারের প্যাকেট বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছে দিয়েছেন। আবার স্বেচ্ছাসেবকেরাও ট্রাকে ট্রাকে ত্রাণ নিয়ে গেছেন। গত ৫ দিন সরেজমিনে, স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনী সদরের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া গ্রামগুলোতে বেশি ত্রাণ গেছে। কিন্তু ভেতরের দুর্গম গ্রামে ত্রাণ গেছে খুব কম।
নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদীসহ সদর উপজেলা ও বেগমগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তবে জেলার সেনবাগ, সোনাইমুড়ী, কবিরহাট, সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির দিকে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে নিমজ্জিত থাকলেও জেলার বন্যাকবলিত উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় এখনো ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।
বন্যার্ত মানুষজনের জন্য সরকারিভাবে এ পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নগদ ৪৫ লাখ টাকা এবং ৮৮২ মেট্রিক টন চাল। সরকারি এই ত্রাণ পর্যাপ্ত নয় স্বীকার করে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি ত্রাণ প্রতিদিনই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে এবং বন্যার্তদের মাঝে বিলি করা হচ্ছে। বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী আনা হলেও তারা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ না করে নিজেদের মতো করে ত্রাণ বিতরণ করে চলে যাচ্ছে। এতে ত্রাণ বিতরণে সমন্বয় ঠিকভাবে হচ্ছে না। কুমিল্লার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টি বন্যাক্রান্ত। গোমতীর পানি নামতে শুরু করেছে। জেলার দক্ষিণের লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটে ত্রাণের অপেক্ষায় আছে বন্যার্ত মানুষ। বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ত্রাণের অপেক্ষায় আছে অনেকে।
চিকিৎসা সংকটে অনেকে
ফেনী সদরের অনেকেই দুই দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত। পানিতে ভেজার কারণে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা তাঁর। এলাকার রাস্তায় গতকালও বুকসমান পানি ছিল। কোথাও হাঁটুপানি। পানি মাড়িয়ে দূরে গিয়ে ওষুধ আনার অবস্থা অনেকের নেই।কানো চিকিৎসাসেবা তাঁরা পাচ্ছেন না কেননা কমিউনিটি হাসপাতালও পানিতে ডুবে আছে।ফেনীর সিভিল সার্জন শিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন পানি বেশি হওয়ার কারণে গ্রামে গ্রামে চিকিৎসাসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে ছয় উপজেলায় ছয়টি জরুরি দল গঠন করা হয়েছে। ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফেনী সদর হাসপাতালে সেবা দেওয়া হচ্ছে। পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পানি নেমে যাওয়ার পর সেবা চালু হয়েছে। কিন্তু গ্রামগুলোয় কোনো চিকিৎসক দল যায়নি।

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
সংবাদ সম্মেলনে অসত্য তথ্য পরিবেশনের তীব্র প্রতিবাদ
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা