সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা হোক অগ্রাধিকার

প্রকাশিত - ৩০ আগস্ট, ২০২৪   ০৮:১২ পিএম
webnews24

সম্পাদকীয়


এবারের ভয়াবহ বন্যাকে ঘিরে এক অভূতপূর্ব জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে। এই ঐক্যকে কাজে লাগাতে হবে। দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একাট্টা হয়েছেন বানভাসি মানুষের জন্য কিছু করার অভিপ্রায় নিয়ে। হঠাৎ ভয়াবহ বন্যার মুখে পড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের পূর্বাঞ্চল। অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে আসা ঢল এবং পানি নেমে যাওয়ার পথ সংকুচিত হওয়ার কারণে বন্যা পরিস্থিতি খুব দ্রুত ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেশের ১১ জেলা। জেলাগুলো হচ্ছে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এখন পর্যন্ত এ বন্যায় অন্তত ৭০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে বিভিন্ন জেলায় অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে মৃতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা এখন পর্যন্ত বহু মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।
এবারের বন্যায় সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে সীমাহীন ক্ষয়-ক্ষতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। ফেনীসহ বেশ কয়েকটি জেলা পুরো তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে। কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়িসহ উত্তর পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে মানুষজন দিন কাটাচ্ছেন। বন্যায় এসব জেলার হাজার হাজার মাছের ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি। এসব অঞ্চলের অনেকে গরু-মহিষ, ছাগল এসবও ভেসে গেছে। ঘরবাড়ি সব গলা পরিমাণ পানিতে তলিয়ে গেছে। তাদের থাকার জায়গা নেই। অনেকে দূর-দূরান্তে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। ফেনী ও কুমিল্লায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেলপথ ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বন্যা দুর্গত এলাকায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, ইন্টারনেট সংযোগ নেই। সড়কও পানির নিচে। পানির তোড় এতটাই বেশি যে, সবখানে উদ্ধার ও ত্রাণ কাজ পরিচালনা করাও দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকা মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই। বন্যাকবলিত এলাকায় এই ভয়ঙ্কর সময়ে ভরসা কেবল মানবিকতা। অভূতপূর্ব বন্যা এক অদৃষ্টপূর্ব সংকট সৃষ্টি করেছে, দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই আজ বন্যার্তের হাহাকার। বানভাসি মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়েছে। যদিও সরকার বর্তমান সংকট মোকাবেলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এরকম সময়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে বন্যার্তদের সেবায় ভূমিকা নিতে হবে ছাত্র-যুবসহ সমাজের প্রতিটি মানুষকে। প্রতিটি এনজিও, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে। যে যার অবস্থান থেকে সেটা করতেও শুরু করেছেন।
বন্যার পানি যাদের বসতবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে টিকে আছেন, পরিবারের বয়স্ক অসুস্থ সদস্যটিকে নিয়ে অকূল সমস্যায় পড়েছেন কিংবা প্রসূতি ও ছোট ছোট শিশুসন্তানকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে রয়েছেন, তাদের সত্যিকারের সহায়তা দেওয়া কেবল সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে সামাজিক সংগঠন এবং সমাজসচেতন ব্যক্তিদের। ক্ষমতা যতই সীমিত হোক, আর্তের কল্যাণে সকলের যৌথ প্রচেষ্টাই দুর্যাগের প্রধানতম রক্ষাকবচ।
বন্যার সময় ত্রাণ বণ্টনের স্বচ্ছতা বজায় রাখাও সময়ের দাবি। একজন প্রকৃত বানভাসিই যাতে ত্রাণ পেতে পারেন, সেটা সুনিশ্চিত করতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা নিতে হবে সামাজিক সংগঠনগুলোকে। দেখা গেছে, একশ্রেণির মানুষ বন্যাসহ যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবৈধভাবে সরকারি, বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে লালায়িত থাকে। এর ফলে প্রকৃত দুর্গত ব্যক্তি বঞ্চিত হন। মনে রাখতে হবে, বিপন্নদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ বা বণ্টন স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা খুব সহজ বিষয়ও নয়। কিন্তু মানবিকতার স্বার্থে কিছুটা কঠোর হয়ে প্রকৃত বিপন্নদের বঞ্চিত হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। বন্যা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আহরণ করার ক্ষেত্রে যাতে নাকানিচুবানি খেতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে প্রশাসনকে।
বন্যাকবলিত এলাকায় পণ্য পরিবহন করাটাও কঠিন হয়ে যায়। এক শ্রেণির মজুতদার এর ফায়দা নেবে, সেটা স্বাভাবিক। তবে এখানে প্রশাসনের দৃঢ়তা অব্যাহত থাকলে মানুষের দুর্গতি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। অন্তত আলু, পেঁয়াজ, চাল, ডাল, সয়াবিন ইত্যাদির দাম যাতে আকাশছোঁয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এবারের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সারা দেশের মানুষ। মানুষের অভূতপূর্ব সহায়তায় বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম চলছে বন্যাদুর্গত জেলাগুলোতে। সরকারের পক্ষ থেকেও ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এই কাজে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনীও। এত বিপুল ত্রাণ কার্যক্রম সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে যেন ত্রাণের জন্য হাহাকার না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে চর ও নি¤œাঞ্চলের মানুষ। তাদের কাছে কোনো ধরনের ত্রাণ যাচ্ছে না। আপাতত ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ জোরদার করার পাশাপাশি আগামী দিনের প্রস্তুতিও নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বেন। নিরাপদ খাবার পানির অভাবে একদিকে পানিশূন্যতা, আবার অনিরাপদ পানি কিংবা খাবার খেয়ে ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েডের মতো রোগ বাড়তে পারে। বন্যার পানি থেকে চর্মরোগের প্রসার ঘটে। পানি ও টয়লেটের অভাবে গর্ভবতী নারী, প্রতিবন্ধী, শিশুরা ভয়ানক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এসব স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবেলার উপায় নিয়ে এখন থেকেই ভাবনাচিন্তা করতে হবে।


 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন