সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

ছাত্র জনতার গণ-অভ্যূথানের পর অপেক্ষা মানবিক বাংলাদেশের

প্রকাশিত - ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪   ০৮:৫৩ পিএম
webnews24

মিজান রহমান  : ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন তারিখে ঐতিহাসিক পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও বৃটিশ-ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মীরজাফরের বেঈমানীর কারণে নবাবের শোচনীয়ভাবে পরাজিত হন। এর ফলে ভারত বর্ষে ইংরেজদের শাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রসস্ত হয়। বাঙলা আর স্বাধীন থাকলো না, হয়ে গেলো ইংরেজদের তাবেদার। রবার্ট ক্লাইভ কোলকাতাসহ গোটা এলাকা দখল করে নেয়। ইংরেজদের শাসনামলে আবার নতুন করে শুরু হয় স্বাদেশী আন্দোলন অর্থাৎ ইংরেজ হটাও আন্দোলন। নানা চড়াই উৎড়ায়ে যেমন-যুদ্ধ-বিগ্রহ, হত্যা, গুম, ঘুষ, দখল, জেল, জুলুম, ফাঁসি ও নির্যাতনের বৈতরণীর ২০০ বছর পর অবশেষে ১৯৪৭ সালে ইংরেজদের শাসনের অবসান ঘটে। ইংরেজ শাসনের অবসানের পরে এখানে নানা টালবাহানার মধ্যদিয়ে ভারতীয় উপ-মহাদেশের বৃটিশ প্রদেশগুলোকে ভাগ করে দুটি অধিরাজ্য সৃষ্টি করা হয়। এই অধিরাজ্য দুটো ছিলো যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তান। পরবর্তীতে একটি হলো ভারতীয় প্রাজাতন্ত্র অন্যটি হলো ইসলামী প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম ও পুর্ব পাকিস্তান নিয়ে সৃষ্টি হলো ইসলামী প্রজাতন্ত্র। পশ্চিম পাকিস্তান ও পুর্ব পাকিস্তানের মধ্যে দূরুত্ব ২ হাজার কিলোমিটার থাকা সত্বেও এই দুটি দেশ নিয়ে হলো একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র। আমাদের প্রথম শাসন করলো নবাব, দ্বিতীয় ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানী, তৃতীয় ইংরেজ এবার চতুর্থ দফায় আসে উর্দূরা। ২ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানকে ২৪ বছর শাসন করেছে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা ও নীতি ছিলো দুরকম। আসলে শাসন আর শোষণের যাতাকলে পরে বাঙালীরা পিষ্ঠ হচ্ছে বারবার, সোজা হতে পারেনি ২২৪ বছরেও। 
পশ্চিম পাকিস্তানীদের নানা বৈষম্যমুলক নীতির কারণে বাঙালীদের মধ্যে স্বাধীনতার জাগরণ সৃষ্টি হয়। এই জাগরণের ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বেজে যায় যুদ্ধ। এ যুদ্ধকেই আমরা সংগ্রাম বলেছি আসলে এটিই মুক্তিযুদ্ধ। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, চালায় গণহত্যা। এ কালো রাতের পরেই শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম সুর্যোদয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশে^র মানচিত্রে জায়গা দখল করে নেয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিমুলক ঘোষণা দেন। বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণায় বাঙলার সকল জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ একটি নয়া স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে নতুন একটি মানচিত্র নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। অনেক কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতা অর্জনের পর সাড়ে ৭ কোটি মানুষের প্রত্যাশা ছিলো একটি নতুন বাংলাদেশের। যেখানে থাকবে নতুন ইতিহাস, নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন ও দেশমাতৃকাকে ভালোবাসার চেতনা। এ চেতনাকে বুকে ধারণ করে স্বাধীনতার পতাকা পত পত করে উড়ছে বাংলার আকাশে।
হাওয়ায় হাওয়ায় দোল খাওয়া লালসবুজের পতাকা আমাদের বলে দিচ্ছিলো-সম অধিকার, গণতন্ত্র, স্ষ্ঠুু বিচার, একটি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন, কারিগরী শিক্ষার প্রসার, প্রযুক্তির ব্যবহার, চিকিৎসার উন্নতি, কৃষির উন্নতি, বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, অসাম্প্রদায়িক নীতি, নিরক্ষরতামুক্ত সমাজ গঠন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষিপণ্যের সঠিক দাম ও সংরক্ষণ, বাংলা শিক্ষার উন্নয়ন, করে সুন্দর একটি স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে। এসব আশা-আকাংখা, স্বপ্ন আর চেতনা নিয়ে বাংলার মানুষ একাত্তরে লাখো লাখো মানুষের জীবন, মা-বোনদের সম্ভ্রম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। আজ ৫৩ বছর অতিবাহিত হলেও প্রকৃত স্বাধীনতার সুফল আসেনি নানা স্বৈরশাসকের কারণে। বাংলাদেশের নানা জাতি-ধর্ম-বর্ণের লোক বসবাস করছেন। বিধায় দেশটি একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশও বটে। আমাদের প্রত্যাশিত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়িত হলে কোনো মানুষকে ক্ষুধার সাথে সংগ্রাম করে বাঁচতে হবে না, মারা যাবে না কেউ চিকিৎসার অভাবে। সবার মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগবে। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলবে আমার স্বপ্নের বাংলাদেশ। এখনও স্বপ্নের বাংলাদেশ থাকলো প্রশ্নবিত্ত হয়ে। 
স্বাধীনতা পেলাম, বাংলাদেশও হলো কিন্তু স্বপ্নের বাংলাদেশতো হলো না? আপ্রাণ চেষ্টা করেও স্বপ্নের বাংলাদেশের প্রত্যাশিত পাওনাগুলো ভুলণ্ঠিত করছে নানা কুলাঙ্গার। এসব কুলাঙ্গারের হাজারও উদাহরণ রয়েছে এই স্বাধীন দেশে। তার মধ্যে যেমনÑ পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম, বেনজীর, মতিউর, আনার হত্যা, ব্যাংকলুট, রিজার্ভ চুরি, হিসাব ছাড়া রপ্তানি, মিথ্যা এলসি, প্রশ্ন ফাঁস, যৌক্তিক কোটা আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ও সরকারের কালক্ষেপণ, আবেদন আলী, পাহাড় কাটা, বন উজার, সরকারি জমি দখল, ৫০ লাখ মানুষের অনলাইন জুয়ায়, ক্যাসিনো, খেলার মাঠ দখল, ছাত্র-যুবদের মধ্যে ভয়ংকর মাদক নেশা, মোবাইল এডিক্টেড, ইয়াবা, গাঁজা, সরকারি বাড়ি-গাড়ি অবৈধ দখল, অর্থ পাচার, বিদেশী বিনোয়োগে বাঁধা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দলতন্ত্র, ব্যবসায়ীতন্ত্র, চাটুকারতন্ত্র, লবিস্টতন্ত্র। অন্যদিকে আজিজ, মতিউর, শাহেদ, সাবরীনা, হারুন, আছাদুজ্জামান, কামরুল হাসান, শেখ রফিকুল ইসলাম, কাজী আবু মাহমুদ, জেসমিন, শামীমা নাসরিন, বুবুল আক্তার, বাচ্চু, স¤্রাট প্রমুখ। 
সরকারি আমলারাও দুর্নীতির চরম শিখড়ে। এছাড়াও পরীক্ষা নেই, বিচার নেই, সঠিক পাঠ্যপুস্তক নেই, বাজার সিন্ডিকেট, মিথ্যা বক্তৃতা, দেশটি দুটি ভাগে বিভক্ত, খেলাপি ঋণ অনাদায়ী, হয়রানি, আমেরিকার স্যাংশন, প্রতিহিংসার রাজনীতি, সাংবিধানিক অধিকার বঞ্চিত, দেশ দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন ইত্যাদি। অন্যদিকে র‌্যাবের কোরোস ফায়ার, এনকাউন্টার, গুম, মিথ্যা, গায়েবী মামলা এবং বিচারহীনতা মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে টিআইবির পর্যবেক্ষণে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১০তম অবস্থানের অধিকারী। এ রকমের হাজার হাজার জঘন্য উদাহরণ যদি এই ছোট্ট একটি দেশে থাকে তা হলে কি করে সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আর অপরূপ সৌন্দর্যের সুখী বাংলাদেশ হবে? ষড়ঋতুর দেশ, যে দেশটি রূপের ঢালি সাজিয়ে ঋতুচক্র নেচে বেড়ায়। এদেশের প্রকৃতির মনোরম পরিবেশ আমাদেরকে মুগ্ধ করলেও সে মুগ্ধতা আজ ম্লান। সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে নৈরাজ্য, প্রতি হিংসার রাজনীতি ও অপরিপক্ষতা যা প্রায় ১৯ কোটি মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। সাধারণ মানুষ আজ বিভ্রান্ত। 
আধুনিক সভ্যতার যুগে দেশমাতৃকাকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে প্রথমে যা যা করা উচিৎ তার কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এই সংষ্কারগুলো করা প্রয়োজন। বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এবং এনে দিয়েছে ৫ আগস্ট/২৪ এক রক্তঝড়া শৃংখলমুক্ত স্বাধীনতা। রক্তের সাথে বিশ^াসঘাতকতা না করলে আমাদের দেশে যে যে সংষ্কারগুলো করা প্রয়োজন তার মধ্যে যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা দরকার, যেমনÑ ক. সংবিধান নতুনভাবে এবং সময়োপযোগী করে সংষ্কার করা; খ. বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করা এবং গ. নির্বাচন কমিশন থাকবে স্বাধীন ও দলীয়মুক্ত। এর পর পর্যায়ক্রমে নিচের দফাগুলো বাস্তবায়ন না করলে অর্জিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল নয়া স্বাধীনতার কোন মানে হবে না। নিহত ও আহত মানুষগুলোর রক্তের সাথে বেঈমানি করা হবে। 
দফাগুলো এভাবেÑ ১। দ্রুত ন্যায় বিচার ২। প্রয়োজনীয় সকল নাগরীকের আর্থিক হিসাব প্রদান ৩। ১০ লাখ টাকার অধিক সম্পদ কিনলে আয়ের হিসাব দেয়া ৪। সরকারি চাকুরিদের দুর্ণীতি ও অনৈতিক কার্যকলাপের কারণে চাকরি থেকে সাথে সাথে আর্থিক সুবিধা ব্যতিরেক বরখাস্ত ৫। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ৬। দেশকে বিভক্ত না করা ৭। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করা ৮। ৫টির বেশি কারো ব্যাংক একাউন্ট ও মোবাইল সিম না থাকা ৯। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ি-বাড়ি ও জমিজমা না থাকা ১০। অত্যান্ত জরুরী ছাড়া বিদেশে চিকিৎসা ও বাজার না করা ১১। অস্বচ্ছল নাগরীকদের রেশন প্রদান ও দ্রব্যমূল হাতের নাগালে রাখা ১২। বাজারে ও দেশে কোন সিন্ডিকেট না থাকা ১৩। চিকিৎসা সেবা, ডাক্তার, ঔষুধ সুলভ মূল্যে ও দোড়গোড়ায় ডাক্তারের প্রাপ্যতা ১৪। রেমিটেন্স যোদ্ধা, গার্মেন্টস কর্মী ও সিনিয়র সিটিজেনদের সম্মান দেয়া ১৫। বেসরকারি চাকুরীদের পেনশনের মতো ব্যবস্থা করা ১৬। স্কুল, কলেজ ও বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য যুক্তিসঙ্গত সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিচালনা করা ১৭। নির্বাচনে সর্বনি¤œ ৫০% ভোটের হার নির্ধারণ করা ১৮। তদন্তের নামে কালক্ষেপণ বন্ধ করা, যে বিভাগ অপরাধ করবে অন্য বিভাগ তদন্ত করবে ১৯। দ্বৈত পাসপোর্ট থাকলে দেশে গুরুত্বপূর্ণ কাজ না করা ২০। নামাজের সময় ব্যবসা কেন্দ্র বন্ধ রাখা ২১। সরকারের চাকুরেরা সবাই কর্মচারি আর পাবলিক কারো কর্মচারি নয় তা মানা ২২। অস্বচ্ছল, অনগ্রসর, প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধ মানুষদের প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া ২৩। প্রয়োজনীয় সকলের সম্পদের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করা। ২৪। বৈদেশিক নীতি উদার করা। ২৫। সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। ২৬। সকল ধর্মের লোক একসাথে বসবাস করা ২৭। বাংলা, ইংরেজি ও ধর্ম শিক্ষার প্রসারিত করা ২৮। কোচিং সেন্টার বন্ধ করা ২৯। যুগোপযোগী পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও ৩০। মাদককে নিরুৎসাহিত করা ইত্যাদি। একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও আধুনিক সভ্যতার দেশে রুপান্তরিত করতে হলে এ কাজগুলো করা অত্যাবশ্যক এবং দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে। দায়িত্ব শুধু সরকারের একার না, অন্যদেরও রয়েছে। 
দেশে এখন সবচেয়ে প্রয়োজন সহযোগিতা, মানবিক উন্নয়ন, বিবেধ ভুলে প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বিরত থাকা। ধংসের রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসা। অন্যদিকে উপরোক্ত ধারাগুলোর দিকে অগ্রর হলে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা ও ভালোবাসার সোনার বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব। এ সম্ভাবনাকে লক্ষ্য রেখেই দেশকে স্বাধীন করা হয়েছিলো ১৯৭১ সালে। দীর্ঘ বছর পর অনেক চড়াই উৎরায়ে উত্তাল জনরোশে ৫ আগস্ট/২৪ হাজারও ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশটি রাহুমুক্ত হয়। হয় স্বৈরশাসকের পতন আর ভারতে পালিয়ে যায় রক্তখেকো সেই স্বৈরাচার। ৮ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। তাদের সামনে পহাড়সম কাজের স্তুপ, দূরহ সেসব কাজকে এগিয়ে নিতে হবে নির্মোহ ও শক্ত হাতে। এই প্রত্যাশা এখন আপামোর জনতা ও শিক্ষার্থীদের। ইতোমধ্যে দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপির সাথে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আলোচনা হয়। গত ১ সেপ্টেম্বর বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সাথেও অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় আগামী নির্বাচন এবং সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলসহ সংবিধান সংশোধনের বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।
২ মেয়াদের বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী না থাকার বিধান চালুরও দাবি জানান। জাতীয় সংসদে ভোটের হারের ভিত্তিতে আসন বণ্টনের প্রস্তাব করেন কেউ কেউ। বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, রাজনৈতক দলের কাছ থেকে সংষ্কার প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে সংষ্কারের রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের জন্য যৌক্তিক সময় কতদিন তা সংস্কার প্রস্তাবের পরই বলা যাবে। এখনই তা বলার সুযোগ নেই। তবে সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে কোন সময় বেধে দেয়া হয়নি। বর্তমানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রোড ম্যাপ তৈরি করে দিবেন এটাই প্রত্যাশা সকলের। তবে তারা তো আর উপজেলায় বা জেলায় গিয়ে সব ঠিক করতে পারবেন না, সম্ভবও না। খারাপ মানুষগুলোকে তো আর হঠাৎ করে ভালো করতে পারবেন না। যারা প্রশাসন যন্ত্র চালান তাদেরকে তো আর ঢালাওভাবে সরানো যাবে না। দুষ্ট লোক থাকবেই। তাই এসবের দিকে নজর কমিয়ে সোজা রাস্তা তৈরি করে দিলে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। সে রাস্তায় সবাই চলতে বাধ্য থাকবে এবং আমাদের চলার রাস্তাটিকে সহসা ভাঙ্গা যাবে না। তা হলেই মোটামুটিভাবে ঠিক হয়ে যাবে আপনা-আপনি, পাল্টে যাবে দেশ। আর এগুলো ঠিক না করলে যে লাউ সেই কদুতে পরিণত হবে। বাঙালীর চরিত্র ভালো না, চোখ উল্টাতে সময় লাগে না। আজ এই দলে, কাল ওই দলে। বিক্ষোভ মিছিল বের করতে ও প্রতিবাদী শ্লোগান দেয়ার লোকের অভাব হবে না। তাই এখনই সব ঠিক করতে হবে, তা না হলে আবারও ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষায় থাকলাম সুন্দর, সমৃদ্ধ, শিক্ষিত, অহিংস ও দুর্নীতিমুক্ত মানবিক বাংলাদেশের।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, সংগঠক ও কলামিস্ট

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন