বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

৮ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর 

প্রকাশিত - ০৬ জুলাই, ২০২৪   ০৯:৪৩ পিএম
webnews24
অনলাইন ডেস্ক

প্রভাত রিপোর্ট : চলতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় বেশি হবে। বর্ষা মৌসুম শেষেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।  ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। আর দেশের উত্তরাঞ্চলে এ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বর্তমানে আটটি নদীর ২১টি পয়েন্টে পানি বিপৎদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ প্রতি বছর দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। প্রাকৃকিত দুর্যোগের কারনে নানানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশের মানুষ। বর্ষা এলে দেশে বেড়ে যায় বন্যার শঙ্কা। পাশাপাশি সাগরে লঘুচাপের ফলে সারাদেশে বেড়ে যায় বৃষ্টিপাত। এবছর বৃষ্টি থাকবে জুলাইজুড়ে। ইতিমধ্যে জুনের শেষ দিকে শুরু করে সিলেট, ফেনী ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। 
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশে এখনো স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে। দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, সৃষ্ট বন্যায় সেটার প্রভাব কম। আমাদের দেশের নদীগুলোর উৎপত্তিস্থল ভারত ও মিয়ানমার। সেখানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে আমাদের দেশে বন্যা হয়। ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে জুলাইয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে এই পানির চাপ আমাদের এখানেও আসবে।’
জুলাইয়ের আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসে মৌসুমি ভারী বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কয়েকটি স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে সতর্ক সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান গণমাধ্যমকে বলেন, এখন যেহেতু বর্ষা মৌসুম, তাই প্রতি বছরই এ সময়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বন্যা হয়। আমাদের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকার মাত্র ১০ শতাংশ বাংলাদেশে। ৯০ শতাংশের বেশি পানি আসে ভারত থেকে। বর্ষা মৌসুমে এই পানি আসার প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতি তীব্র হচ্ছে। বন্যা থাকবে এ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে আগস্ট মাসেও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকার মাত্র ১০ শতাংশ বাংলাদেশে। ৯০ শতাংশের বেশি পানি আসে ভারত থেকে। বর্ষা মৌসুমে এই পানি আসার প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতি তীব্র হচ্ছে।’- সরদার উদয় রায়হান, নির্বাহী প্রকৌশলী, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র
ইতিমধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ডুবেছে সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা ও সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ওয়ার্ড। নদ-নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। পানিবন্দি এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষ। সিলেটবাসীর এই ভোগান্তি চলতি জুলাইজুড়ে থাকার শঙ্কা রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর বন্যা হওয়াটা এখন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দেশে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যায় কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাহাড়ি ঢল, আন্তসীমান্ত নদীর পানি, অপরিকল্পিত অবকাঠামো, নদী দখল ও টেকসই বাঁধের অভাবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। বন্যার মধ্যেই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে শুরু হয়েছে তীব্র নদীভাঙন। বন্যার পূর্বাভাসে শুধু নদ-নদীর পানি বাড়া-কমা ও বিপদসীমার ওপর প্রবাহিত হবে কি না এটাই বলে। কিন্তু কোন এলাকায় কোন ফসলের ক্ষেত ভাসবে, কোন গ্রাম তলিয়ে যাবে, এগুলোর তথ্য আমাদের কাছে নেই। অথচ আমরা জানি প্রতি বছর দেশে বন্যা হবে।
জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসাইন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বর্ষায় বন্যা এখন দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। বন্যা কখন আসবে, কী পরিমাণে পানি আসবে, কোন চ্যানেল দিয়ে আসবে- এ তথ্যটা আমরা যথাযথভাবে পাচ্ছি না। ভারত কোন সময় পানি ছাড়বে, আবার কোন সময় আটকাচ্ছে, সেটা নিয়ে আমাদের যৌথ নদী কমিশন কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখে না।’

 

প্রভাত/টুর

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন