সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১
Proval Logo

চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত - ১১ জুলাই, ২০২৪   ১১:৪০ পিএম
webnews24

বিশেষ প্রতিনিধি : কোটা বিরোধী আন্দোলনের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। রাস্তাঘাট বন্ধ করে আন্দোলন করায় ক্ষোভে ফেটে পড়ছে নাগরিক সমাজ। বিশেষ করে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় যাতায়াতে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। এতে অচল হয়ে পড়েছে রাজধানীসহ পুরো দেশের বিভিন্ন সড়ক। ফলে চরম দুর্ভোগে দেশের সব শ্রেণী পেশার মানুষ। 
কিছু কিছু জায়গায় আন্দোলনকারি ছাত্র-ছাত্রীরা রিকশা থেকে যাত্রী নামিয়ে দেন। এমনকি অসুস্থ রোগি থাকা সত্বেও তাদেরকে পায়ে হেঁেট যেতে হয়। শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই কারো কথা শুনছেন না। যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ শুরু হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু বৃষ্টির কারণে সেটি সাড়ে চারটায় শুরু হয়। তবে ‘বাংলা ব্লকেডে শাহাবাগ ও টিএসসি ছাড়া রাজধানীর অন্যান্য সড়কে খুব কমই লক্ষ্য করা গেছে। 
জনগনের দুর্ভোগের কারণে কাল দুপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ও অলি-গলিতে পুলিশ অবস্থান নেয়। কয়েকটি জায়গায় ব্যারিকেডও দেয়া হয়। আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, নাগরিকদের দুর্ভোগ যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতেই তারা মাঠে নেমেছেন। এর আগে গত বুধবার সারাদেশে ব্লকেড দিয়ে রাস্তা আটকিয়ে রেখেছিলেন শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি আটকে দেয়া হয়েছিলো। বিকাল পাঁচটার পর অবশ্য সেই ব্লকেড শিথিল হয়। কিন্তু পরবর্তী সূচী ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। সেই সূচী অনুযায়ী আজ আবার বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে ব্লকেড শুরু হয়। পরীবাগ মোড়ে দায়িত্বরত পুলিশ কনষ্টেবল মো: শহিদুর রহমান বলেন, ‘গত দুইদিনের দুর্ভোগের পর আজ আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। কোনভাবেই রাস্তা আটকাতে দেয়া যাবে না। শাহবাগ পর্যন্ত মিছিল করলে সমস্যা নেই, তবে এর বাইরে জনগনের দুর্ভোগ করালে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফার্মগেট, আসাদগেট, বাংলামটর, কারওয়ানবাজার, মগবাজার মোড়, রামপুরা, ধানমন্ডিতে গণপরিবহন নেই বললেই চলে। দুই একটি বাস দেখা  গেছে সেখানেও সিট খালি লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে, শুধু সড়ক নয়, রেলপথ ও নৌপথেও আন্দোলনকারীরা অবস্থান করার কথা থাকলেও কাল তাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
জেসমিন সরকার নামে একজন চাকরিজীবি মহিলা মৎস ভবন মোড়ে অনেকক্ষন ধরে বাসের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। পরে শেষমেষ বাস না পেয়ে তিনগুন ভাড়া দিয়ে রিকশা করে গন্তব্য স্থলে রওনা দিয়েছেন। তার সঙ্গে কথা বলতেই ক্ষোভের সুরেই বললেন, ‘দিনের পর দিন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলন যৌক্তিক কিন্তু তাদের পদ্ধতিটা ভুল। রাস্তা আটকিয়ে তো তারা সফল হবে না, বরং দুর্ভোগে ফেলবেন আমাদের। এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছি আমরা। সারাদিন অফিস শেষে বাসায় যাওয়ার তাড়া, অথচ কোন গাড়ি নেই। এই দুর্ভোগের জন্য কি বলবেন শিক্ষার্থীরা।’ একজন পাঠাও বাইকার সারাদিন রাইড শেয়ারিং করে এক থেকে দেড় হাজার টাকা উপার্জন করেন। গত কয়েকদিনে তারও সেই উপার্জন হচ্ছে না। কাল জিয়াদুল আলম নামের এক বাইকারের সাথে কথা হলো এই প্রতিবেদকের। তিনিও ক্ষোভের সুরে বললেন, ‘ছাত্রদের এই আন্দোলনে আমরা বিপদে পড়েছি। আমাদের রিজিক তারা বন্ধ করে দিয়েছে। দিনশেষে খালি হাতে বাসায় ফিরতে হচ্ছে। রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন তো সঠিক পদ্ধতি হতে পারেনা।’ 
সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টে দেওয়া রায়ে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ। পৃথক দুটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল বুধবার এ স্থিতাবস্থা জারি করেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ আদেশ প্রত্যাখ্যান করে দেশজুড়ে চলমান ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। যদিও কাল আইনশৃংখলাবাহিনীর অবস্থানের কারণে এই আন্দোলনে কিছুটা স্তিমিত হয়েছে। সুশীল সমাজ মনে করেন, তাদেরকে দুর্ভোগে ফেলে আন্দোলন না করাই ভালো। তাতে সরকারের টনক নড়বে কি নড়বে না তারচেয়ে বড় কথা চরম সমস্যায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। 
 

ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে সঙ্গে থাকুন
ওয়েব নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন

আরও পড়ুন
সংবাদ সম্মেলনে অসত্য তথ্য পরিবেশনের তীব্র প্রতিবাদ
সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা