মো. নজরুল ইসলাম, গাইবান্ধা: দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেও উত্তরের কৃষি অর্থনীতি নির্ভর গাইবান্ধা জেলার এখনও বহু কৃষক সনাতন পদ্ধতিতেই চাষাবাদ করে যাচ্ছেন। এই প্রথাগত পদ্ধতির ব্যবহারে যেমন সময় বেশি লাগছে, তেমনি প্রতিনিয়ত বাড়ছে উৎপাদন খরচ। এতে আর্থিক চাপের মুখে পড়ছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে কৃষকদের তেমন ধারণা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় এখনও তাদের কাছে কাস্তে আর লাঙ্গল জোয়াল চাষাবাদের একমাত্র ভরসা। এতে করে শ্রম সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি উৎপাদন কম হচ্ছে।
মূলত মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উন্নত কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধকরণে কৃষি বিভাগের নীরব ভূমিকা ও কৃষি খাতে যন্ত্র ক্রয়ে আর্থিক বিনিয়োগে অনীহা থাকায় অধিকাংশ কৃষক আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চাষাবাদ করতে পারছে না।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তি, স্মার্ট ইরিগেশন, সেন্সর-ভিত্তিক মাটি বিশ্লেষণ ও ডিজিটাল কৃষি অ্যাপের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎপাদন বৃদ্ধি ও খরচ হ্রাস করা সম্ভব। কিন্তু এসব প্রযুক্তি সম্পর্কে সাধারণ কৃষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় এবং প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার অভাবে তারা এগুলোর প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
সম্প্রতি গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে গত বছরের তুলনায় শ্রমিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে পাকা ধান মাঠে রেখে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন কৃষকরা । এমন অবস্থায় অনেক কৃষক কম্বাইন হারভেস্টর মেশিনের সাহায্যে ধান কাটা মাড়াই করার জন্য বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ করলেও হারভেস্টর মেশিনের নাগাল পাচ্ছে না। কারন জেলার চাহিদার তুলনায় হারভেস্টর মেশিনের সংখ্যা খুবই সীমিত।
চলতি বছরে গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলায় বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হলেও শ্রমিক সংকটে মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করতে পারছে না অধিকাংশ কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে জেলায় ১ লক্ষ ২৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে এবং ১৩ মে বুধবার পর্যন্ত মোট ৬৮ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, জেলায় গত কয়েক বছরে সরকারি ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া কম্বাইন হারভেস্টরের সংখ্যা মাত্র ১৪১ টি এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২১টি, সাদুল্লাপুরে ২১টি, পলাশবাড়ী ১৩টি, গোবিন্দগঞ্জে ৪৫ টি, সুন্দরগঞ্জে ২০টি, সাঘাটা ১৪টি ও ফুলছড়িতে ১৪টি মেশিন বিক্রি হয়েছে। এসব হারভেস্টর মেশিনের মধ্যে সচল আছে ১১৫টি অচল হয়ে পড়ে আছে ২ টি । অন্যদিকে ধান কাটার রিপার আছে ১২টি রিপার বাইন্ডার আছে ১৪টি, রাইস প্লান্টার আছে মাত্র ২টি ।
গাইবান্ধা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাহবুবার রহমান বলেন, “বর্তমান সময়ে কৃষিকে লাভজনক করতে হলে যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য।