প্রভাত বিনোদন: প্রাইভেট ডিটেকটিভ মির্জা গোলাম হাফিজ। একদিন সকালে তার কাছে ছুটে আসে লুনা। এসে বলে তার বোন লিজাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে যেন মির্জা খুঁজে বের করে। লিজা খোঁজার অভিযানে বের হয় ডিটেকটিভ মির্জা। সূত্র ধরে এগিয়ে যেতে বের হয়ে আসতে থাকে একের পর এক ঘটনা। আরও মেলে এক লাশ! পুলিশকে সে খবর দিতে গিয়ে মির্জাই হয়ে ওঠে পুলিশের অন্যতম সন্দেহভাজন। মির্জা কি পারে রহস্য সমাধান করতে? নাকি নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনে? সুমন আনোয়ার এখন অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয়, ওটিটির সিনেমা ও সিরিজে খল চরিত্রে তাঁকে ছাড়া যেন চলেই না। তবে সুমন আনোয়ার তো আদতে নির্মাতা। তাঁর নির্মিত ‘রাতারগুল’, ‘কালাগুল’, ‘সদরঘাটের টাইগার’ ইত্যাদি কাজগুলো আলোচিত হয়েছে।
প্রচলিত গোয়েন্দারা যেমন হয় ‘মির্জা’ ঠিক তেমন না। সে মোটাসোটা, খুব একটা সুদর্শন না, দৌড়াতে পারে না, মারামারিও করতে পারে না। বয়স পঞ্চাশ। আর তার বোনদের একটাই লক্ষ্য, তাকে বিয়ে দেওয়া। কোনো একটা গোয়েন্দা চরিত্রের পরিচয় যদি এ রকম হয়, তবে বোঝাই যায় চরিত্রটি মজার হতে বাধ্য। ‘মির্জা’ ওয়েব ফিল্মের মির্জাও সেরকম একটি চরিত্র। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ‘বঙ্গ’তে গত ২৩ মে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘মির্জাচ্যাপ্টার: ক্লাব ২৯’। গল্প, চিত্রনাট্য ও পরিচালনা করেছেন সুমন আনোয়ার।
তবে ইদানীং তাঁকে খুব বেশি নির্মাণে দেখা যায়নি। বিরতির পর পরিচালনায় ফিরে কেমন করলেন তিনি? গোয়েন্দা গল্পের ক্ষেত্রে চরিত্র নির্মাণ একটি বড় বিষয়। মির্জা চরিত্র নির্মাণে নির্মাতা এমন বৈশিষ্ট্যের মানুষকে বেছে নিয়েছেন যে মনে হবে আমাদের চারপাশের একজন ব্যক্তি ‘মির্জা’।
যে শ্বাসরুদ্ধকর কোনো কাজ করতে পারে না, শুধু বুদ্ধির জোরেই সমাধান করার চেষ্টা করে সবকিছু। ফেলুদার ভাষায় বলতে গেলে ‘মগজাস্ত্র’। তবে ‘সাধারণের মধ্যে অসাধারণ’ এমন একটা প্রতিশ্রুতি নিয়ে মির্জা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও কিছুদূর গিয়েই যেন হোঁচট খায়। কারণ, গল্প শেষ হবার আগেই দর্শকেরা অনেক রহস্য নিজেরাই সমাধান করে ফেলতে পারেন। শুরুতেই আসা যাক গল্পের গতি নিয়ে। লিজা তার বোনকে খোঁজার জন্য গোয়েন্দা নিয়োগ করছে এভাবে গল্প শুরু হয়। গল্পের গতি বাড়িয়ে নির্মাতা হয়তো লিজার তাড়া বোঝাতে চেয়েছেন। তবে এখানে স্বাভাবিক গতি রাখলেই ভালো হতো। মির্জার ক্ষুরধার বুদ্ধি বোঝাতে এখানে তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরের অংশে মির্জা যখন তদন্তে নামে তখন সমসাময়িক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলা সংলাপগুলো হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে। একজন সাধারণ ব্যক্তি হিসেবে মির্জার চরিত্র যেভাবে মোশাররফ করিম ফুটিয়ে তুলেছেন তা দুর্দান্ত। ভয় পেয়ে দেয়ালের সঙ্গে সেঁটে যাওয়া হোক, কিংবা মাতালের দৃশ্য, মোশাররফ এককথায় অনবদ্য। তাঁর অভিনয় গল্পে গতি এনেছে। চলনসই এই সিরিজটিতে কেবল মোশাররফকেই মনে রাখা যায়।
লিজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন পারসা ইভানা। গ্ল্যামারাস লুকে তিনি বেশ সাবলীল অভিনয় করলেও সিরিয়াস সময়ে তাঁর অভিনয় ছিল সাদামাটা। তবে সিনেমার গল্পে প্রাণ দিয়েছেন মির্জার তিন বোন। তাঁরা যেন ছিলেন মির্জার অজিত, তোপসে কিংবা কখনো ওয়াটসন। এই তিন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তামান্না হক বর্না, তৈয়বা রহমান ঐশী, দিলরুবা হোসাইন দোয়েল। পর্দায় তাঁরা যতক্ষণ ছিলেন, আনন্দ দিয়েছেন।
একটি গোয়েন্দা গল্প এগিয়ে যায় টানটান গল্পের সঙ্গে গল্পের লাগাম টেনে রাখার মধ্যেও। মির্জার গল্পে এর খামতি চোখে পড়ে। গল্পের ধাঁচ অচেনা না হলেও নতুনত্ব ছিল। তবে দর্শক যদি গোয়েন্দা গল্পের ভক্ত হয়ে থাকেন, তবে তাঁরা এর খামতিগুলো সহজেই ধরতে পারবেন। গল্প কোনদিকে যাচ্ছে সেটাও বুঝতে পারবেন আগে থেকেই। নির্মাতা আরেকটু সময় নিয়ে গল্পটা বললে নিঃসন্দেহে সেটা আরও উপভোগ্য হতো। সেদিক থেকে আক্ষেপটা রয়েই যায়!