• মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১০:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মোরেলগঞ্জে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা অনুমোদন সভা অনুষ্ঠিত রিকশা চালিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জার্মান রাষ্ট্রদূতের বেশিরভাগ জমি এখনও টেকসই চাষের বাইরে : বিবিএস নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন : মির্জা ফখরুল অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যায় যেতে হবে না: এনবিআর চেয়ারম্যানের আটক হওয়া বাংলাদেশিরা আইএসের সঙ্গে যুক্ত: মালয়েশীয় পুলিশ মহাপরিদর্শক ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না : ইরাভানি নাজিরপুর উপজেলা যুবদলের আনন্দ মিছিল ও র‍্যালি

খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪.২ লাখ কোটি টাকা, তীব্র তারল্য সংকটে অনেক ব্যাংক

প্রভাত রিপোর্ট / ৯ বার
আপডেট : শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

প্রভাত অর্থনীতি: বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪.২ লাখ কোটি টাকা। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এই অঙ্ক ৮ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা মোট ১৭.১২ লাখ কোটি টাকা ঋণের প্রায় অর্ধেক। এই খেলাপি ঋণের ৮১ শতাংশই ‘মন্দ ও লোকসানি’ (ব্যাড অ্যান্ড লস) শ্রেণিতে আছে, অর্থাৎ এসব ঋণের বিপরীতে নয় থেকে বারো মাস বা তারও বেশি সময় ধরে কোনো কিস্তি পরিশোধ করা হচ্ছে না। এর ফলে অনেক ব্যাংক তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। অন্যদিকে ঋণ আদায় করতে না পারায় ওইসব ব্যাংক এখন আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে হিমশিম খাচ্ছে। দেশের ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে অন্তত ১৬টি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আর এই ১৬ ব্যাংকেই রয়েছে মোট খেলাপি ঋণের ৭৭ শতাংশ বা ৩.২৫ লাখ কোটি টাকা।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ কমানোর চেষ্টা শুরু করে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত বছরের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই খেলাপি ঋণের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বের করে নিয়ে আসতে কাজ শুরু করেন। এতেই যেন খুলতে থাকে একটার পর একটা প্যান্ডোরার বাক্স। যদিও এখনও পর্যন্ত সবগুলো ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ খেলাপি ঋণের চিত্র পাওয়া যায়নি।
ইচ্ছাকৃত খেলাপি হিসেবে শ্রেণিকৃত নয়, এমন বড় ঋণ (৫০ কোটি টাকার বেশি) পুনর্গঠনের জন্য ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করে। এর লক্ষ্য ছিল কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ঋণগ্রহীতাদের স্বস্তি দেওয়া। তবে কমিটির কাছে জমা পড়া ১ হাজার ২৫৩টি আবেদনের কোনোটিরই নিষ্পত্তি হয়নি। শুধু ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের আগে খেলাপি হওয়া ঋণ এ স্কিমের আওতায় থাকবে। ফলে খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশই এর আওতার বাইরে রয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এসব আবেদনের একটি বড় অংশই গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ, এসব ঋণ আবেদনে এমন গ্রহীতারাও আবেদন করেছেন যারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বলে দেয়া প্রাকৃতিক ও বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে খেলাপি হননি।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংক-ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংককে একীভূত করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আশা করছেন, আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগেই এই একীভূতকরণ সম্পন্ন হবে। তাত্ত্বিকভাবে, একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার উন্নতি করা গেলেও ব্যাংকাররা বলছেন, একীভূতকরণ করলেই খেলাপি ঋণ কমবে, এমন না-ও হতে পারে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন সতর্ক করে বলেছেন, একীভূতকরণের পরেও ব্যাংকগুলোর টিকে থাকার জন্য বড় ধরনের পুনঃমূলধনের (রিক্যাপিটালাইজেশন) প্রয়োজন হবে।
বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় চলেছে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত, যার ফলে প্রায়ই ভুয়া নামে এবং যথাযথ জামানত ছাড়াই ঋণ দেয়া হয়েছে। এই ঋণের একটি বড় অংশই পরে খেলাপি হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে এই খাতের প্রকৃত ক্ষত এখন দিন দিন চোখের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। এবং সেই চিত্রটি ভয়াবহ। অভিজ্ঞ ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা কেউই এই খাদ থেকে দেশের ব্যাংকিং খাতের উঠে আসার তেমন কোনো আশা দেখতে পাচ্ছেন না।
ব্যাংকগুলো সাধারণত দুই ধরনের ঋণ দিয়ে থাকে: ফান্ডেড ও নন-ফান্ডেড। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো কোনো জামানত ছাড়াই, কেবল ঋণগ্রহীতার বিশ্বাসযোগ্যতা, পরিচিতি, সুনাম ও লেনদেনের রেকর্ড বিবেচনা করে ঋণ দিয়েছে। বর্তমান খেলাপি ঋণের একটি বড় অংশই এ ধরনের জামানতবিহীন ঋণের। এসব ক্ষেত্রে ঋণ আদায় পুরোপুরি ঋণগ্রহীতার সহযোগিতা অথবা আইনি প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে—যার দুটিই অত্যন্ত ধীর এবং অকার্যকর পথ। আবার জামানত রাখার মাধ্যমে যেসব ঋণ খেলাপি হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে জামানত রাখা সম্পত্তির অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, যে জমির কাঠাপ্রতি বাজারমূল্য ১ লাখ টাকা, সেসব জমির দাম ১০ লাখ টাকা দেখিয়ে ঋণ নেওয়া হয়েছে। গ্রাহকের চিন্তাটাই ছিল এমন, ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে অতিমূল্যায়িত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার পরেও তারা আর্থিকভাবে লাভবান থাকবে। আবার একই সম্পত্তি একাধিক ব্যাংকে জামানত হিসেবে ব্যবহার করে ঋণ নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে এসব জামানতের সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করার ক্ষেত্রেও আইনি ও পদ্ধতিগত জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এসব জটিলতা ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা আরও কমিয়ে দেয়।
সবচেয়ে বড় কিছু খেলাপি ঋণ দেয়া হয়েছে সিন্ডিকেট করে। এর কোনো কোনো ঋণে ১৫টি ব্যাংক জড়িত ছিল। এসব ঋণ খেলাপি হওয়ার পর ব্যাংকগুলোকে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চ্যালেঞ্জিং।
এস আলম গ্রুপ ও বেক্সিমকোর মতো প্রভাবশালী শিল্পগোষ্ঠী নানা অজুহাতে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি পৃথক প্রতিবেদন অনুসারে, এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে ১০টি ব্যাংক ও একটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২.২৫ লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ঋণের একটি বড় অংশই হয়তো কখনও আদায় করা সম্ভব হবে না। কারণ এসব ঋণের বড় একটি অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্যও কাজ করছে। গভর্নর মনসুর বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থার পক্ষে কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে আইনি দলগুলো খেলাপিদের সঙ্গে আদালতের বাইরে সমঝোতা করবে। তবে অর্থ আদায়ের জন্য আদালত নাকি এডিআরের পথে হাঁটবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে বাংলাদেশ ব্যাংক আইনি পরামর্শক নিয়োগ করে সম্পদ পুনরুদ্ধার শুরু করতে প্রস্তুত উল্লেখ করে গভর্নর বলে, এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।
এই সংকট কি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব?: বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকার এই সংকট পুরোপুরি সমাধান হওয়ার ব্যাপারে তেমন আশাবাদী নন। রিক্যাপিটালাইজেশন, আইনি সংস্কার, সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা ও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের মতো নানা প্রস্তাবনা আলোচনায় এসেছে। তবে কোনোটিই চূড়ান্ত সমাধান দিতে পারছে না।
জাহিদ হোসেন বলেন, রিক্যাপিটালাইজেশন তাত্ত্বিকভাবে কাজ করলেও এর বাস্তব প্রয়োগ চ্যালেঞ্জিং। ‘যেখানে আমাদের দেশের প্রতি অর্থবছরে বাজেট হয় ৭ লাখ কোটি টাকা, সেখানে আমরা কীভাবে ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি খেলাপি ঋণকে রিক্যাপিটালাইজ করে সামাল দেবো? এছাড়া আমাদের এটাও ভাবতে হবে, এসব রিক্যাপিটালাইজেশন হবে জনগণের করের টাকা থেকে। ফলে বাছবিচার না করে রিক্যাপিটালাইজ করলে জনগণকে তার খেসারত দিতে হবে।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমানও এর সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, একসময় আমানতকারীদের ব্যাংকের শেয়ার দেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু এখন অনেক ব্যাংকের শেয়ারের দাম অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। ফলে আমানতকারীদের ব্যাংকের শেয়ার দেওয়া হলে তারা সেগুলো বিক্রি করে মূল টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অবস্থার আরও অবনতি ঠেকাতে জাহিদ হোসেন ব্যাংক ব্যাংকের বোর্ডের যোগসাজেশে খারাপ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত পক্ষকে ঋণ না দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। অভ্যন্তরীণ খবর অনুযায়ী, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংকে রাজনৈতিক প্রভাব আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে, তবে পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। যেমন, কয়েকমাস আগে একটি রাজনৈতিক পক্ষের চাপে ঋণ দিতে রাজি না হওয়ায় একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
খেলাপি ঋণ কমাতে দেশের আইনি কাঠামোর সংস্কার প্রয়োজন মন্তব্য করে জাহিদ হোসেন বলেন, ‘অর্থঋণ আদালতে এমন অনেক মামলা আমরা পেয়েছি, যেগুলো ১৫০-২০ বছর ধরে ঝুলে আছে। ফলে আদালতের সংখ্যা ও জনবল না বাড়িয়ে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি করেও কোনো লাভ হবে না। কারণ খেলাপি ঋণ আদায়ে কাজ করা এসব কোম্পানিকেও আদালতের মাধ্যমেই প্রক্রিয়াতে যেতে হয়।’
এডিআরের মাধ্যমেও কিছু খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় বড় খেলাপিদের নেওয়া ঋণের কিছু অংশ বাদ দিয়ে হলেও টাকা আদায় করা যেতে পারে। ‘তবে দরকষাকষির ক্ষমতা এখানে বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ, চীনে কেউ ঋণ খেলাপি হলে তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পর্যন্ত ভর্তি করা যায় না। খেলালিরা অনেক নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হয়। আমাদের দেশে এখনও এমন শক্ত নিয়ম চালু করা যায়নি, যাতে খেলাপিরা ঋণের টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন।’
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান আরেকটি বাধার কথা তুলে ধরেন: ব্যাংকে রাখা জামানত বিক্রি করা এখন দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক মন্থর। জনগণের হাতে টাকা আগের তুলনায় কম। ফলে জমানতের যেসব জমি বা সম্পত্তি নিলামে তোলা হচ্ছে, সেগুলো কেনার মতো গ্রাহক পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাংকের পক্ষে তাই টাকা আদায় আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। খেলাপি ঋণ উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসণ নিশ্চিত করা জরুরি বলে উল্লেখ করেন জাহিদ হোসেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক বেশি ক্ষমতা রাখে। তবে এসব ক্ষমতার প্রয়োগ হয় না। স্বল্পমেয়াদের জন্য ক্ষমতায় থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে চূড়ান্তভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে তারা এই সুশাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দিয়ে যেতে পারে,’ বলেন তিনি।
এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও খেলাপি ঋণ সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলেই মনে করেন ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদেরা। নতুন ঋণ দেওয়ার মাধ্যমে তাত্ত্বিকভাবে খেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনার সুযোগ ছিল। তবে নতুন আমানতের বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে সরকারি ঋণে। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ায় সুযোগও খুব একটা নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ছেপেছে। খেলাপি ঋণের বড় অংশ আদায় করা না গেলে সরকারের শেষ পর্যন্ত টাকা ছাপানোর প্রয়োজন হতে পারে—যা গুরুতর মূল্যস্ফীতির উদ্বেগ তৈরি করছে। এই টাকা ছাপানো অব্যাহত থাকলে সরকার কীভাবে চলমান উচ্চ মূল্যদফীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, সে প্রশ্নই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রভাব: তারল্য সংকটের কারণে অন্তত ১৬টি ব্যাংক নতুন ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে বসেছে। আরও অনেক ব্যাংক ট্রেজারি বিল ও সরকারি বন্ডের মতো কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১.৪৫ লাখ কোটি টাকা নতুন আমানত যুক্ত হয়। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ১.০৪ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ নতুন আমানতের বড় অংশই খেয়ে ফেলছে সরকারের ধার।
দেশের পুঁজিবাজার শক্ত অবস্থানে না থাকায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ব্যাংকনির্ভর। বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদা কম হলেও তা আগামী বছরখানেকের মধ্যে বাড়তে পারে। খেলাপি ঋণের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলে তখন ব্যাংকগুলোকে এই বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। আর বেসরকারি খাতে চাহিদামতো ঋণ দেওয়া না গেলে উৎপাদন কমে যাবে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না, উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এসব কিছু জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে।
অর্থাৎ খেলাপি ঋণ সংকট আর শুধু ব্যাংকিং খাতের সমস্যা নেই। এটি এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে—এবং এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব আগামী বহু বছর ধরে অনুভূত হতে পারে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও