• মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৯:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মোরেলগঞ্জে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা অনুমোদন সভা অনুষ্ঠিত রিকশা চালিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জার্মান রাষ্ট্রদূতের বেশিরভাগ জমি এখনও টেকসই চাষের বাইরে : বিবিএস নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন : মির্জা ফখরুল অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যায় যেতে হবে না: এনবিআর চেয়ারম্যানের আটক হওয়া বাংলাদেশিরা আইএসের সঙ্গে যুক্ত: মালয়েশীয় পুলিশ মহাপরিদর্শক ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না : ইরাভানি নাজিরপুর উপজেলা যুবদলের আনন্দ মিছিল ও র‍্যালি

মামলার ভারে ন্যুব্জ দুদক, জনবল সংকটে ৯ মাসে নিষ্পত্তি মাত্র ৫

প্রভাত রিপোর্ট / ৮ বার
আপডেট : শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

প্রভাত অর্থনীতি: জনবল সংকটে এক একজন কর্মকর্তা একসাথে ৪-৫টি বড় ধরনের অনুসন্ধান বা মামলার কাজ করছেন। এতে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে, আবার তাড়াহুড়ো করলে মামলার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ফলে একধরনের ‘উভয় সংকটে’ রয়েছেন কর্মকর্তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে প্রায় তিন শতাধিক প্রভাবশালী সাবেক মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী ও আমলার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান ও তদন্ত চালাচ্ছে। অভিযোগ ও মামলা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে সংস্থাটিতে প্রায় ৯ হাজার চলমান অনুসন্ধান ও তদন্ত রয়েছে। তবে মামলার নিষ্পত্তির হার একেবারে তলানিতে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫২৫টি অনুসন্ধান ও ২৯৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ৫টি। অথচ ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে যেখানে ২২৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছিল, তার আগের বছর নিষ্পত্তি হয়েছিল ৬৬৩টি। ফলে নিষ্পত্তির হার এখন সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, জনবল সংকটে এক একজন কর্মকর্তা একসাথে ৪-৫টি বড় ধরনের অনুসন্ধান বা মামলার কাজ করছেন। এতে নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে, আবার তাড়াহুড়ো করলে মামলার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। ফলে একধরনের ‘উভয় সংকটে’ রয়েছেন কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক উপপরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, যারা ভালো কাজ করেন, তাদের ওপর চাপ বেশি। একেকজনকে ৪-৫টি বড় মামলা একসাথে করতে হচ্ছে। এতে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না। ফলে অনেক সময় লাগছে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এস আলম, সালমান এফ রহমান সহ বড় বড় শিল্প গ্রুপগুলো কিংবা অন্যান্য মন্ত্রীদের দূর্নীতি অনুসন্ধান দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কারণ তাদের সম্পদ অনেক। অনেকে নিজের নামে কিংবা পরিবারের নামে বিদেশেও অর্থপাচার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ফলে এসব বিষয়ে অনুসন্ধান ও তদন্ত প্রক্রিয়া একটু দীর্ঘ হবে এটা স্বাভাবিক।’
কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী, একজন কর্মকর্তাকে ৭৫ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান এবং ২৭০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হয়। কিন্তু অধিকাংশ মামলার ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়ে গেছে।
দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগস্টের পর থেকে প্রতিমাসে গড়ে ১,৫০০ থেকে ২,০০০ অভিযোগ জমা পড়ছে। এর মধ্যে সীমিত সংখ্যক অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হলেও, তবু চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই তার সরকার-পরবর্তী শাসনামলের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ব্যবসায়ী, আমলা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুদক।
দুদক সূত্র বলছে, শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। এছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, অর্থপাচার, অর্থ আত্মসাৎ, এবং জালিয়াতির অভিযোগে প্রায় ৩০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি দুদকের অনুসন্ধান ও মামলার আওতায় এসেছেন।
অনুসন্ধান ও মামলা ছাড়াও দুদক বিতর্কিত ব্যবসায় গ্রুপ এস আলম, বেক্সিমকোসহ বেশকিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির সম্পদ জব্দ করেছে। গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার (এস কে) সুরসহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আটক করেছে। আবার হত্যামামলায় আটক কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিকেও দুদকের মামলায় পরবর্তীতে আটক দেখানো হয়।
তালিকায় রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম। দুদকের প্রথম মামলা ছিল সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংস্থাটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৭৪টি জব্দের আদেশ দিয়েছেন। এসব আদেশে প্রায় ১৯২ একর জমি, ২৮টি ভবন, ৩৮টি ফ্ল্যাট ও ১৫টি প্লট জব্দ করা হয়। জব্দের তালিকায় থাকা যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ২৩টি গাড়ি। তিনটি জাহাজও জব্দ করা হয়েছে। দেশে ও বিদেশে থাকা জব্দের আদেশভুক্ত সম্পদের মূল্য প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা বলে জানিয়েছেন দুদকের কর্মকর্তারা।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুদক কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা সৎ ও দক্ষ, তাদের ওপর এখন প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা মামলা চলছে, তাদের অধিকাংশের দুর্নীতির পরিমাণ বিশাল। ফলে একদিকে কাজের চাপ, অন্যদিকে সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকায় তদন্ত বা অনুসন্ধানের গুণগত মান নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। কাজের ভিড়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বাদ পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই নিয়মিতভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে কঠোর মনিটরিং প্রয়োজন।’
তবে এ প্রসঙ্গে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যমান জনবল দিয়েই আমরা ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এ ক্ষেত্রে তদন্তের গুণগত মান নিশ্চিত করাই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।’


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও