• মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
মোরেলগঞ্জে জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা অনুমোদন সভা অনুষ্ঠিত রিকশা চালিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জার্মান রাষ্ট্রদূতের বেশিরভাগ জমি এখনও টেকসই চাষের বাইরে : বিবিএস নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে মুখিয়ে আছে চীন : মির্জা ফখরুল অপরাধের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসার রেকর্ড ভবিষ্যতে এ ধরনের সমস্যায় যেতে হবে না: এনবিআর চেয়ারম্যানের আটক হওয়া বাংলাদেশিরা আইএসের সঙ্গে যুক্ত: মালয়েশীয় পুলিশ মহাপরিদর্শক ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কখনোই বন্ধ হবে না : ইরাভানি নাজিরপুর উপজেলা যুবদলের আনন্দ মিছিল ও র‍্যালি

কমতে শুরু করেছে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম

প্রভাত রিপোর্ট / ১৪ বার
আপডেট : সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫

প্রভাত অর্থনীতি: তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি, বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধের চাপ কমে আসা এবং রপ্তানিতে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির কারণে চাহিদা কমে আসায় রেমিট্যান্সের ডলারের দাম কমতে শুরু করেছে। কয়েকটি ব্যাংকের ট্রেজারি কর্মকর্তারা জানান, বৃহস্পতিবার রেমিট্যান্সের ডলার কিনতে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলারে ১২২.৭০ থেকে ১২২.৮০ টাকা রেট দিতে হয়েছে, যা মে মাসের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় ৫০–৭০ পয়সা কম। ওই সময় দর ছিল প্রায় ১২৩.২০ থেকে ১২৩.৩০ টাকা।
ব্যাংকাররা বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৪ মে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু করার পর অনেকেই ভেবেছিল ডলারের দাম বেড়ে যাবে। তবে বড় ব্যাংকগুলোর ট্রেজারি বিভাগের প্রধানরা অনানুষ্ঠানিকভাবে ডলারের দর সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা রাখার বিষয়ে একমত হন। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণার একদিনের মধ্যেই ডলারের দাম বেশ খানিকটা কমে যায়।
রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং আমদানি প্রবৃদ্ধি খুব বেশি না থাকায় আন্তঃব্যাংক বাজারে রেমিট্যান্স ডলারের চাহিদা কমেছে। ফলে বাজারের স্বাভাবিক প্রবণতা অনুযায়ী, চাহিদা কমায় রেমিট্যান্সের ডলারের দামও কমতে শুরু করেছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ভিত্তি করেই ডলারের বাজার চলা উচিত। বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়ার পর অনেকেই দর বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছিলেন। তবে ব্যাংকগুলোর কাছে এখন আগের মতো ডলারের চাহিদা নেই। ফলে দাম কমতে শুরু করেছে,’ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন তিনি।
এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, দেশে এখন নতুন করে বিনিয়োগ প্রায় থেমে গেছে। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্যসহ বিনিয়োগনির্ভর আমদানি অনেক কমে গেছে। এছাড়া গত কয়েক মাসে ব্যাংকগুলো অধিকাংশ বকেয়া আমদানি বিল পরিশোধ করে ফেলেছে। অন্যদিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো হচ্ছে। একইসঙ্গে ওভার-ইনভয়েসিং ও আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ পাচারও আগের তুলনায় অনেক কমেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে তারল্য পরিস্থিতি ভালো হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মে পর্যন্ত সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪৪.৯৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১০.৩৬ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে আমদানি এলসি (এলসি) খোলা হয়েছে ৫৮.৯৪ বিলিয়ন ডলার—আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি মাত্র ২.৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে এ সময়ে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.০৮ শতাংশ বেশি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২১ জুন পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২৯.৫ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬.৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩.২৯ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঈদের সময় প্রায় ২০ দিন ব্যাংক বন্ধ না থাকলে রেমিট্যান্স আরও বাড়ত।
বেসরকারি খাত ডলারে ঋণ নেয়া কমিয়েছে: অনুকূল বিনিময় হার, স্থিতিশীল রিজার্ভ এবং অস্থিরতার সুবাদে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে বেসরকারি খাতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার বাড়লেও ডলারের সামগ্রিক চাহিদা এখনও কম।
বেশ কয়েকটি ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী কয়েক মাসে ডলারের চাহিদা বাড়ার বড় ধরনের কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী নতুন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আগামী নির্বাচনের অপেক্ষা করছেন। ফলে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত আমদানি বাড়বে না। অন্যদিকে, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ভালো। এমন প্রবৃদ্ধি আগামী দিনগুলোতে বজায় থাকলে বাজারে ডলারের সরবরাহ আরও বাড়বে, যা দিনশেষে বিনিময় হারকে কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করেন তারা।
একটি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসের কান্ট্রি হেড বলেন, ‘আগে ব্যাংকগুলো আমাদের ফোন করত ডলার চেয়ে। আর এখন আমরা ব্যাংকগুলোর কাছে ফোন করেও ডলার বিক্রি করতে পারছি না। অনেক ব্যাংক ডলার লাগবে না বলে আমাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে মাসখানেক আগেও ডলারের চাহিদা ছিল। এখন বেশিরভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক রেমিট্যান্সের ডলার সেভাবে টানছে না।’ তিনি আরও বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, প্রতিদিনই ডলারের দাম ৫–১০ সেন্ট করে কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ৪ জুন মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০.৭৭ বিলিয়ন ডলার। এই নিয়ে টানা পাঁচ মাস রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের সীমার ওপরে রয়েছে। এটিও মুদ্রাবাজারের স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখছে।


আপনার মতামত লিখুন :
এই বিভাগের আরও