প্রভাত অর্থনীতি: সরকারি তত্ত্বাবধানে ভোক্তাদের হাতে সুলভ মূল্যে গ্যাস পৌঁছে দিতে একটি নীতিমালা প্রণয়নাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। তিনি জানান, আগামী দুই মাসের মধ্যে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের আশা করা হচ্ছে। বর্তমানে বিপিসির সাড়ে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের নির্ধারিত মূল্য ৮২৫ টাকা হলেও, বাস্তবে তা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন পরিবেশকরা।
সর্বশেষ ৪ মে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রকাশিত মূল্য সমন্বয় আদেশ অনুযায়ী, বেসরকারি খাতে এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডারের ভোক্তা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩১ টাকা। অপরদিকে, সরকারি কোম্পানির ডিপো থেকে পরিবেশকরা সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার সংগ্রহ করছেন ৭৮৪ টাকায়। এর সঙ্গে স্থানীয় পরিবহন ব্যয় ২১ টাকা এবং পরিচালন ব্যয় ২০ টাকা যুক্ত হলে, সরকারি এলপিজির নির্ধারিত ভোক্তা মূল্য দাঁড়ায় ৮২৫ টাকা। অথচ বাস্তবে এই সিলিন্ডার অনেক ক্ষেত্রেই ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৪ মে’র আগে সরকারি এলপিজির নির্ধারিত মূল্য ছিল ৬৯০ টাকা।
ভোক্তাদের হাতে সুলভ মূল্যে এলপি গ্যাস পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপিসি। কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই বাড়তি দামে বিক্রির কারণে ভোক্তারা সরকার নির্ধারিত সুবিধা পাচ্ছেন না। বিষয়টি আলোচনায় এলে, কেউ কেউ বেসরকারি কোম্পানির সমপর্যায়ের মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। তবে যেহেতু বিপিসির এলপি গ্যাস মূলত ক্রুড অয়েল পরিশোধনের উপজাত, তাই সরকারের সিদ্ধান্ত হলো—এটি সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছানো হবে। এ লক্ষ্যে একটি নতুন নীতিমালা প্রণয়নাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপিসি চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান। তিনি বলেন, আমরা সরাসরি ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে চাই, যেন তারা এর প্রকৃত সুফল পায়। গ্যাসক্ষেত্রের এলাকায় সাধারণত গ্যাস সংযোগের দাবি থাকে। কিন্তু এখন আবাসিক পর্যায়ে নতুন গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। তাই এসব অঞ্চলের মানুষদের জন্য এলপি গ্যাস বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। তিনি আরও জানান, সিলেট, ভোলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, জামালপুর ও বেগমগঞ্জসহ গ্যাসক্ষেত্র ঘন অঞ্চলে সুলভ মূল্যে এলপি গ্যাস বিতরণ করা হবে। এটি রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস বিতরণকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে পরিচালিত হবে এবং জেলা প্রশাসন এর তদারকিতে থাকবে। ইতোমধ্যে নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে, এবং আমরা আশা করছি—আগামী দুই মাসের মধ্যেই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সরকার নির্ধারিত মূল্যে খরচ চালানো অসম্ভব দাবি করে এলপিজি পরিবেশকরা বলছেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করে না। দোকানভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স, বিস্ফোরক পরিদপ্তরের লাইসেন্সের নবায়ন ফিসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে গিয়ে অনেককে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম রাখতে হয়। বিপিসির অভ্যন্তরীণ এক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরোনো নীতিমালার কারণে পরিবেশকরা ইচ্ছেমতো মূল্য নির্ধারণ করছেন। এতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে ভোক্তাদের কাছে গ্যাস পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারি ও বেসরকারি গ্যাস সিলিন্ডারের এই মূল্যের পার্থক্য কমানো না গেলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে পরিবেশকদের নিয়ন্ত্রণে নতুন নীতিমালা এবং ভোক্তার ব্যয় কমাতে সরাসরি গ্রাহক পর্যায়ে সিলিন্ডার সরাসরি বিক্রির ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিপিসির অধীন কোম্পানিগুলোর ডিপো বা বিক্রয় অফিসের তত্ত্বাবধানে গ্রাহক কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি জনগণের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করা যেতে পারে।
বাজারে সরকার নির্ধারিত দামের তুলনায় ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) উৎপাদিত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপি গ্যাস)। এতে করে ভোক্তারা কাঙ্ক্ষিত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ অবস্থায় সরাসরি ভোক্তাদের কাছে এলপি গ্যাস পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছে বিপিসি।
এক বিপিসি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমরা পরিবেশকদের কাছে প্রতি সিলিন্ডার মাত্র ৭৮৪ টাকায় বিক্রি করি। কিন্তু তারা ভোক্তাদের কাছ থেকে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। এটি সরকারের নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা বেশি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার সুলভ মূল্যে জনগণকে গ্যাস সরবরাহ করতে চায়। কিন্তু পরিবেশকদের অতিরিক্ত মুনাফার কারণে সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে।’
বিপিসির অধীনস্থ ইস্টার্ন রিফাইনারী লিমিটেড (ইআরএল) থেকে উৎপাদিত এলপি গ্যাস সংগ্রহ করে এর চারটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান—পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ১০১টি নিবন্ধিত পরিবেশক। সিলেটের কৈলাশটিলায় বিপিসির নিজস্ব স্টোরেজ, বটলিং ও বিতরণ কেন্দ্র থেকে এ গ্যাস সরবরাহ করা হয়।
বিপিসি জানায়, বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার উৎপাদন হয়, যা দেশের মোট চাহিদার মাত্র ১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সংস্থাটির কোনো এনফোর্সমেন্ট ইউনিট না থাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা ছাড়া পরিবেশকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না।