প্রভাত সংবাদদাতা, ফুলবাড়িয়া: ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার মহতলা গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী (পেবা) করাতকল শ্রমিক হাসিবুল ইসলামের জীবিকার উৎস ছিল ধামর বেলতলি এলাকার এক করাতকল। প্রতিদিনের মতো সেদিনও প্রতিবন্ধি হাসিবুল ঐ স-মিলে ( করাতকল) কাজ করতে যান, কিন্তু সহকর্মীদের অমানবিক আচরণ তার একটি হাত কবজী থেকে দ্বি-খন্ড হয়ে তার জীবনকে চিরদিনের জন্য বদলে দেয়। ন্যায় বিচার দাবী এলাকাবাসীর।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার দুপুর ১২টার দিকে ধামর বেলতলি এলাকায় জনৈক মাদু মিয়ার স-মিলে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার দিন স-মিলটি চালুর এক পর্যায়ে মিল শ্রমিকদের সাথে বাকবিতন্ডায় ভারসাম্য হারিয়ে চলন্ত মেশিনের ধারালো করাতে আটকে যায় তার ডান হাত, মুহূর্তের মধ্যে ডান হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে ছিটকে পড়ে মাটিতে।
বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় নিজের যন্ত্রণা ভাষায় প্রকাশ করতে না পারলেও, চারপাশের মানুষের চিৎকারে মিলের শ্রমিক ও স্থানীয়রা ছুটে এসে হাসিবুলকে হাত কাটা অবস্থায় উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মমেক) ভর্তি করেন।
হাসিবুল একজন দরিদ্র করাত শ্রমিক, পরিশ্রমী, দিন আনে দিন খায়। তার জীবনের একমাত্র ভরসা ছিল দুই হাত, যার একটি হাত এখন আর নেই। এ ঘটনায় স্থানীয় ভাবে গ্রামবাসী বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা এক শাালিসে মিলের হেড মিস্ত্রি সুরুজ আলি ও তার সহযোগীদ্বয়ের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা দাবী করে এবং একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।
কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই পরিস্থিতি ঘুরে যায়। প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে হেড মিস্ত্রি সুরুজ আলি উল্টো বাকপ্রতিবন্ধী হাসিবুল সঠিক বিচারে যারা উপস্থিত ছিলেন এমন ৭/৮ জনের নামে ফুলবাড়িয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
স্থানিয় রফিক মিয়া বলেন, বাকপ্রতিবন্ধি হাসিবুল একমাএ উপার্জন ক্ষম ব্যাক্তি। এমন ঘটনায় অসহায়ের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে।
থানায় অভিযোগকারী স-মিলের হেড মিস্ত্রি সুরুজ আলী বলেন, স-মিলের এটা একটা দুর্ঘটনা মাত্র। আমি হাসিবুলকে ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাই। বাড়িতে এসে শুনি শালিস বসে মিল মালিকের নামে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে। মিল মালিক হাত কেটে যাওয়া শ্রমিককে তার মিল লিখে দিয়েছে। আমার ৩ লাখ টাকা এবং দুই সহকারী মিস্ত্রির ২ লাখ মোট ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে শালিশকারীরা। আমি একজন শ্রমিক, শালিসকারীদের জরিমানার ৫ লাখ টাকা দিব কিভাবে, তাই ওদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়েছি।
ফুলবাড়িয়া থানার ওসি মোহাম্মদ রোকনুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার অফিসার খতিয়ে দেখছেন।